কংগ্রেসের বিশৃঙ্খলার বছর একুশে! রাহুলের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার কি খুলে দেবে ২০২২
কংগ্রেসের বিশৃঙ্খলার বছর একুশে! রাহুলের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার কি খুলে দেবে ২০২২
কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসেনি ২০২১-এ। বছরের স্থানীয় কয়েকটি নির্বাচন, উপনির্বাচন এবং ডিএমকের দাক্ষিণ্যে তামিলনাড়ু ছাড়া কংগ্রেসের ঝুলি শূন্য থেকেছে এবার। নেতৃত্বের কোন্দল, অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং ফলশ্রুতিতে ভোটে পরাজয়ই সার হয়েছে কংগ্রেসের। রাহুল গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরে যাওয়ার পর থেকেই নেতৃত্বহীনতা গ্রাস করেছে গ্র্যান্ড ওল্ট পার্টিকে।
নতুন বছর ২০২২ কি কংগ্রেসের জন্য নতুন আশা বয়ে আনবে
এখন প্রশ্ন নতুন বছর ২০২২ কি কংগ্রেসের জন্য, বিশেষ করে রাহুল গান্ধীর জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে? ২০২১ কিন্তু তেমন বার্তা দিচ্ছে না। যদিও একুশের শেষের দিকে বেশ কিছু নির্বাচনে সাফল্য এসেছিল কংগ্রেসের। কিন্তু তা রাহুল গান্ধীর সাফল্য বলা চলে না। বরং স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব সাফল্য দিয়েছে দলকে। রাজস্থান হোক বা ছত্তিশগড়, কিংবা হিমাচল প্রদেশ সাফল্যের সরণি তৈরি করেছে কংগ্রেসের স্থানীয় বা প্রদেশ নেতৃত্ব।
রাহুল গান্ধীর নতুন ‘হোম স্টেট’-এ সবথেকে বড় ধাক্কা কংগ্রেসের
২০২১-এ প্রথম বড় ধাক্কাটি এসেছিল রাহুল গান্ধীর নতুন 'হোম স্টেট' কেরালা থেকে। কেরালায় অনুষ্ঠিত রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মোক্ষম ধাক্কা খায়। কেরালায় সিপিএমের কাছে পরাজিত হয় কংগ্রেস। এছাড়া অন্য রাজ্যে কংগ্রেস ভালো ফল করতে পারেনি। পুদুচেরিতে বিজেপির কাছে হারতে হয়েছে। দুটি রাজ্য হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি অসমেও বিজেপির কাছে ধাক্কা খেতে হয়েছে। ধাক্কা খেয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় নিশ্চিহ্ন কংগ্রেস, অন্যরাজ্যে ভাঙন তীব্র
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেস একটি আসনও দখল করে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। উল্টে তৃণমূল কংগ্রেসের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এরফলে হরিয়ানা, আসাম, গোয়া, ত্রিপুরা এবং অন্যান্য রাজ্যে কংগ্রেসকে ভাঙছে তৃণমূল। তবে কংগ্রেসের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কেরালায়। যে রাজ্য থেকে রাহুল গান্ধী এমপি হয়েছেন, সেই রাজ্যে সিপিএমের কাছে হারতে হয়েইছে, আসন সংখ্যাও নেমে গিয়েছে তলানিতে।
পাঁচ রাজ্যের মধ্যে একমাত্র তামিলনাড়ুতে ক্ষমতার অলিন্দে কংগ্রেস
২০২১-এ যে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে একমাত্র রাজ্য তামিলনাড়ুতে ক্ষমতার অলিন্দে থাকতে পেরেছে কংগ্রেস। কিন্তু তাও হয়েছে ডিএমকে-র সৌজন্যে। কিন্তু সাফল্যের থেকে কংগ্রেসের ব্যর্থতাই বেশি প্রকট হয়েছে ২০২১-এ। যার জেরে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, কংগ্রেসের কিছু ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তের কারণেই বারবার ভুগতে হচ্ছে।
বামজোটে যাওয়া ভুল! ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তের কারণেই ভুগছে কংগ্রেস
কংগ্রেসের ত্রুটির মধ্যে প্রথমটি ছিল বামেদের সঙ্গে জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। বামপন্থীদের ভোটব্যাঙ্ক বছরের পর বছর ধরে সংকুচিত হয়ে আসছে। সেসময় কংগ্রেস তাদের সঙ্গে জোট বাঁধা অর্থহীন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। বামেদের সঙ্গে তাদের জোটের ফলে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়েছে।
আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট বাঁধা মস্ত ভুল ছিল কংগ্রেসের
আর সবথেকে যে সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী ছিল, তা ছিল ফুরফুরা শরিফের নেতা আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট বাঁধা। কলকাতার ব্রিগেড সমাবেশে কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীকে তিরস্কার করেছিলেন আব্বাস। তারপরও আব্বাসের সঙ্গে তার জোটের জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। কারণ এটি তার নতুন হিন্দুত্বের নীতিতে আঘাত করছিল। কংগ্রেস আব্বাস থেকে দূরে সরে গেলেও ক্ষতি হয়েছিল।
মমতাকে নিশানা না নরম মনোভাব, বিভ্রান্তি কংগ্রেসে
তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করবেন নাকি তার প্রতি নরম হবেন সে বিষয়েও বিভ্রান্তিকর অবস্থান কংগ্রেসের ক্ষতি করেছিল। আরও বিভ্রান্তিকর ছিল যে, ভোটের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করার পরে, ভবানীপুর উপনির্বাচনে তার বিপরীতে কোনও প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত। তারপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেস ভাঙতে নামেন। এবং সুস্মিতা দেবের মতো নেত্রী কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন।
পাঞ্জাব কংগ্রেসের অশান্তির ছায়া, দায় এড়াতে পারেন না রাহুল
কংগ্রেসের পক্ষে আরও খারাপ হল, দল এবং সরকার সমন্বয়ে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। রাহুল গান্ধী সমন্বয় তৈরি করতে পারেনি দল এবং সরকারের মধ্যে। এর ফলে পাঞ্জাবে আধিপত্য বিস্তার করেও হারাতে হয়েছে। অমরিন্দর সিং মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত হয়ে নতুন দল গড়েছেন। এমনকী বিজেপির সঙ্গে জোটও বেঁধেছেন। আর তারপরও পাঞ্জাবের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী চরনজিৎ সিং চান্নি বনাম প্রদেশ কংগ্রেস সবাপতি নভজ্যোত সিধুর টানাপোড়েন অব্যাহত রয়েছে।
ছত্তিশগড় পাঞ্জাব হবে না তো, আশঙ্কা থেকেই যায় কংগ্রেসি-কোন্দলে
ছত্তিশগড়েও রাহুল গান্ধী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা রাখতে পারেননি। টিএস সিং দেও মুখ্যমন্ত্রী হতে চাইছেন। এদিকে ভূপেশ বাঘেল মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ছত্তিশগড়ে দিশা দেখিয়েছেন কংগ্রেসকে। সম্প্রতি পুরভোটেও কংগ্রেস ভালো ফল করেছে। ছত্তিশগড়েও টানাপোড়েন অব্যাহত রয়েছে কংগ্রেসের। ছত্তিশগড় পাঞ্জাব হবে না বলে ভূপেশ বাঘেল জানিয়ে দিলেও, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বকে তা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
উত্তরাখণ্ডেও কংগ্রেসের অবস্থা একইরকম, রাজস্থানও টালমাটাল
এখন উত্তরাখণ্ডেও কংগ্রেসের অবস্থা একইরকম বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এখানে যশপাল আর্যকে প্রচারে দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি হরিশ রাওয়াতকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচনে তাদের ক্ষতি করতে পারে। রাজস্থানেও সমস্যা রয়েছে। তবে সেখানে শচীন পাইলট আপাতত নীরব বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তিনি বেশিদিন নীরব থাকবেন, তা জোর দিয়ে বলা যায় না।
গান্ধীরা বস মানতে নারাজ কংগ্রেসের জি-২৩, সংঘাত চরমে
গান্ধীরা দলকে দেখাতে চায় যে তারাই বস, কিন্তু এই মনোভাবের মাশুল গুনতে হচ্ছে বারেবারে। অনেকেই এখন হাই-কমান্ড সংস্কৃতি মেনে নিতে ইচ্ছুক নয়। অবশ্যই কংগ্রেসের জি-২৩ পাল্টা আঘাত করার আগে রাজ্য নির্বাচনের ফলাফল দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। গুলাম নবি আজাদ তার প্রভাব দেখাতে উপত্যকায় সমাবেশ করছেন। সূত্র বলছে, গান্ধীদের সাথে তার যোগাযোগ প্রায় শূন্য।
রাহুল গান্ধীর অনেক বক্তব্যে কংগ্রেস বিভ্রান্ত, মতপার্থক্য বাড়ছে
রাহুল গান্ধীর দলের শাসনভার গ্রহণ করা অনিবার্য প্রায়। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর অনেক বক্তব্য কংগ্রেসকে বিভ্রান্ত করেছে। তার হিন্দু বনাম হিন্দুত্বের আখ্যান, লিঞ্চিং ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করা ইত্যাদি কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তবে দলের জাতীয় মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে রাহুলকে সমর্থন করে জানিয়েছেন, "আমি আনন্দিত যে তিনি এই পার্থক্য তৈরি করেছেন। আমি একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু কিন্তু বিজেপি ধর্মের নামে যা করে তার সাথে আমি একমত নই।" কপিল সিবাল বলেছেন, "আমাদের ফোকাস হওয়া উচিত কর্মসংস্থান, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলিতে। এই পথে চলা অনেক নিরাপদ এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ।"
রাহুলের সমর্থনে অনেকে, আবার অনেকের পছন্দ নয় তাঁর রাজনীতি
রাহুলের সামনে অন্যতম প্রধান বাধা হল বিরোধী দলগুলির গ্রহণযোগ্যতা৷ শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত তাঁর সমর্থনে গলা ফাটাতে পারেন। তবে সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শারদ পাওয়ার প্রমুখ রাহুলের পথ আরও কঠিন করে দিচ্ছেন। তার থেকেও বড় কথা, দলের সবাই তার কাজের ধরনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। সোনিয়া গান্ধীকে অনেকে ভরসা করলেও, রাহুলের স্টাইল সবার পছন্দ নয়।
বিরোধী ফ্রন্টে নেতৃত্ব দেওয়ার দৌড়ে কংগ্রেস আরও পিছিয়ে যাবে না তো!
কংগ্রেস যখন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, সকলের চোখ রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন প্রচারের দিকে, তখন রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন বিজেপি বিরোধী অনেক দলই। দলের অন্দরেও বিভাজন তৈরি হচ্ছে। অনেকেই হয়তো তাঁর সমর্থনে রয়েছেন, তবে অনেকে আবার নেই। এখন আসন্ন নির্বাচনে খারাপ ফল হলে বিরোধী ফ্রন্টে নেতৃত্ব দেওয়ার দৌড়ে কংগ্রেস আরও পিছিয়ে যাবে।