অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য কেন্দ্রকে তোপ রঘুরাম রাজনের! কী বললেন প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর?
বেশ কয়েক মাস ধরেই ভারতীয় অর্থনীতিতে পতন নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। দ্বীতিয় বার সরকার গঠনের পর থেকেই অর্থনীতি নিয়ে চাপে রয়েছে মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি তো দূরহস্ত, যা পরিস্থিতি দেশ এখন অর্থনৈতিক ধসের সম্মখীন দেশ। আর এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রকেই দায়ী করলেন প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন।
সিএএ, ৩৭০ ধারাতে মননিবেশ করছে কেন্দ্র
ক্রমাগত দেশের অর্থনীতি তলানিতে গিয়ে ঠেকার উপক্রম হলেও কেন্দ্র সিএএ, ৩৭০ ধারা ও অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে মেতেছে গত কয়েক মাস ধরে। বিরোধীরা এই সব বিষয়গুলিকে মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার প্রচেষ্টা বলে আখ্যা করলেও সরকার চলছে নিজের গতিতে। তবে বিরোধীদের মতো রঘুরাম রাজনও কিন্তু সরকারের এই মনোভাবকেই দায়ী করলেন দেশের অর্থনীতির পতনের জন্য।
'জিএসটি ও নোটবাতিল ভুল পদক্ষেপ'
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এই বিষয়ে বলেন, 'এটা খুব দুঃখজনক। সরকার ক্রমাগত রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে নজর দিচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যাগুলিতে মননিবেশ করছে না। এদিকে ভারতের মন্থর গতির অর্থনীতি জন্যে কিছুটা হলেও নোট বাতিল ও ভুল ভাবে প্রনয়ণ করা জিএসটি দায়ী।'
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কী প্রয়োজন?
এরপর তিনি বলেন, 'তবে এই বিষয়গুলি এমনই যে একটি নজর দিলেই কিন্তু এই সমস্যাটা মিটে যাওয়ার কথা। সমস্যাটা হল, অর্থনীতির এই চেন-এ একটা বাধা পড়লে পুরো সিস্টেমটাই থমকে যায়। সেই নির্দিষ্ট সমস্যাটিকে চিহ্নিত করে তার দিকে নজর দিলেই আবার সিস্টেম নিজের গতিতে চলতে শুরু করবে।'
করোনা ভাইরাসের বিষয়েও মুখ খোলেন রঘুরাম
এদিকে করোনা ভাইরাসের জেরে বিশ্ব অর্থনীতির উপর যে মন্দার থাবা বসেছে তা নিয়েও বক্তব্য রাখেন তিনি। রাজন বলেন, 'এই মুহুর্তে আমি বলব যে সরকারগুলি সর্বোত্তম কাজ হল মহামারীটির বিরুদ্ধে লড়াই করা। পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির পতনের সম্ভাবনার সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা এখন অর্থহীন। লোকেরা এই ধারণাটি রাখতে চায় যে এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। মানুষ যত মনে বল পাবে, যত এই ভাইরাস নিয়ে ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবে, তত শীঘ্র অর্থনীতি সঠিক পথে যেতে শুরু করবে। করোনা ভাইরাসের জেরে অর্থনীতি যেই ধাক্কা খাবে তা নিয়ে প্রচুর আলোচনা চলবে। বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া এতে বিঘ্নিত হবে। তবে আমাদেরকে পর্যাপ্ত সাহস যোগাতে হবে বিনিয়োগকারীদের মনে। তবেই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।'
করোনার জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে পতন
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় এবং মার্কিন স্টক মার্কেটগুলিতে আবার সূচকে পতন হয়। বিশেষজ্ঞদের মত, চিনের বাইরে করোনা ছড়িয়ে পড়ার খবর আসতেই এই পতন হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, করোনা ভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়ায় এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলের অর্থনীতি রীতিমতো ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই ভাইরাসের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে চিনের আমদানি রফতানিও। এর জেরে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিস্তর। যদি আগামী কয়েক সপ্তাহে চিনের উহান শহরে এই মহামারী তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধস নামবে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের৷
রেকর্ড পতন সেনসেক্সেও
আর এর জেরে ৪ মাসের মধ্যে সব থেকে বড় পতন দেখে দালাল স্ট্রিটও। শুক্রবার সকালে বাজার খুলেতই পড়তে থাকে সূচক। ১০৮৩.৮৫ শতাংশ পতন হয়ে সেনসেক্স দাঁড়ায় ৩৮,৬৬১.৮১-এ। পাশাপাশি লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় নিফ্টির পতন হয় ৩১২ পয়েন্ট। নিফ্টি দাঁড়ায় ১১,৩২১.৮০ পয়েন্টে। এই গত পাঁচ দিন ধরে লাগাতার শেয়ার বাজারে পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মত বিশ্ব বাজারের মন্দার জেরেই এই সূচক পতনের রেশ থাকছে।