সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেতে প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন, এখনও স্পষ্ট নয় প্রক্রিয়া
সিএএ পাশ হওয়ার পর থেকে গত কয়েক মাস ধরে যে বিক্ষোভ বিরোধিতা চলছিল তা এখনও অব্যহত। বিক্ষোভকারীদের যুক্তি এই আইন বিভেদ সৃষ্টিকারী। তাছাড়া ধর্মের ভিত্তিতে ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে নাগরিকত্ব প্রদান হবে সংবিধানের পরিপন্থি। তবে সেই অভিযোগকে বারবারই নস্যাৎ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ও ক্ষমতাসীন বিজেপি। অবশ্যএবার সরকারের এক আধিকারিক জানালেন যে সিএএ-র অধীনে নাগরিকত্ব পেতে গেলে দিতে হবে ধর্ম অবলম্বনের প্রমাণ।
প্রয়োজন যে সব নথি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি আমলা এই বিষয়ে বলেন, 'ধর্ম অবলম্বনের প্রমাণ ছাড়া ভারতের নাগরিকত্ব পেতে এসব মানুষকে যা দিতে হবে তা হল ভারতে আসার প্রমাণ। তাদের কোনও একটি নথি জমা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগেই তারা ভআরতে প্রবেশ করেছিল।'
প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
তবে প্রশ্ন উঠছে এখানেই। ধর্মের ভিত্তিতে নিপিড়িত মানুষ যখন এদেশে প্রবেশ করেছে তখন কটা নথি বা প্রমাণ তারা সঙ্গে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন? অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণ বাঁচাতে এই সব মানুষ বেআইনি ভাবেই দেশে প্রবেশ করেছে। সেই ক্ষেত্রে তারা কী ভাবে সেই প্রমাণ দেবে। আর ধর্ম অবলম্বনের ঠিক কী প্রমাণ সরকার চাইবে, তাও এখনও স্পষ্ট নয়। প্রসঙ্গত, সিএএ প্রনয়ণের বিষয়ে এখনও কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশিকা সরকারের পক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।
অসমের ক্ষেত্রে আলাদা প্রক্রিয়া?
এদিকে অসমের ক্ষেত্রে এই নিয়মে একটু হেরফের আনতে চলেছে কেন্দ্র। সূত্রের খবর, 'অসমের জন্যে নির্দিষ্ট নিয়মমালা তৈরি হবে যার মাধ্যমে সই রাজ্যে সিএএ প্রনয়ণ করা হবে।' এই বিষয়ে সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরবানন্দ সোনওয়াল ও অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন। জানা গিয়েছে অসমে সিএএ প্রক্রিয়া তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে যাতে অসমের জনসংখ্যার উপর এর প্রভাব না পরে। এর আগে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছিলেন যে সিএএ পরবর্তী অবস্থায় যদি অসমের জনসংখ্যা ৫ কোটির উপর গিয়ে দাঁড়ায় তবে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
অমুসলিমদের নাগরিকত্ব নতুন আইনে
নতুন লাগু হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের শর্ত, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বা তার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যে সমস্ত অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ, হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি বা জৈন ধর্মের যেই লোকেরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকে ভারতে বসবাস করেছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। বিলটি ৩১১-৮০ ব্যবধানে পাশ হয়। বুধবার রাজ্যসভায় এটি পাশ হয় ১২৫-৮২ ব্যবধানে। তবে আইনটি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাশ করলেও এটিকে বিভেদ সৃষ্টিকারী আখ্যা দিয়ে পথে নেমেছে বিরোধীরা।
আইন নিয়ে রাজনৈতিক তরজা
তবে আইন নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলতে থাকলেও আইন প্রনয়ণে কোনও বাধা আসবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। এই আইনের বিরোধিতা করলেও কংগ্রেস নেতা শশী থারুর ও কপিল সিব্বল বলেন যে, রাজ্যদের এই আইন না মানার পথ নেই। কারণ নাগরিকত্ব বিষয়টি কেন্দ্রের অধীনস্থ। তাদের আরও মত রাজনৈতিক ভাবে ঐক্য দেখাতেই অনেক ক্ষেত্রে রাজ্যগুলি সিএএ বিরোধী রেজোলিউশন পাশ করাচ্ছে। কেরল, রাজস্থান, পাঞ্জাবের পর সিএএ বিরোধী প্রস্তাবনা পাশ হয় পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভাতেও। তবে এতে আখেরে লাভ হবে না কোনও।