নীতীশের 'ড্রাই স্টেট'-এ 'মদ' বিতর্ক, নির্বাচনী ময়দানে ভিড় টানতেই কি শিথিল নিষেধাজ্ঞা?
২০১৫ সালে নীতীশের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল 'মদ নিষিদ্ধ' করা। ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে বিহারের শহর ও গ্রামাঞ্চলে মদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নীতীশের নেতৃত্বাধীন বিহার সরকার। শুধু তাই নয়, গতবছর দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে সারা দেশেই মদের উপর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছিলেন নীতীশ। তবে এহেন নীতীশ গড়েই ফের মদ নিয়ে বিতর্ক।
মদ বিতর্ক বিহারে
উল্লেখ্য, সম্প্রতী একটি সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত হয় একটি বিহারের রোহতাসের একটি ভিডিও যেখানে রমেশ রাম নামক একজন লোক নিজেকে নীতীশের কট্টর সমর্থক বলে দাবি করছেন। এবং নীতীশের সেই সমর্থক ক্যামেরার সামনেই দাবি করেন, 'রাজ্যে তো খুব সহজেই মদ পাওযা যায়। আমি তো এখনও মাতাল। এই মাসেই খালের ধারে বিক্রি হয় মদ।'
মোদী-নীতীশের জনসভার কাছেই মদ বিক্রি!
এদিকে এই ভিডিও নিয়ে এত হইচই হওয়ার কারণ, এদিন সেখানেই প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং নীতীশ কুমার একটি জনসভায় বক্তৃতা রাখেন। এর জেরেই প্রশ্ন ওঠে। তাহলে কী নির্বাচনী জনসভায় ভিড় টানতেই কি শিথিল মদের উপর নিষেধাজ্ঞা। নাকি শুধু মাত্র খাতায় কলমেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল রাজ্যে? এই আবহে বেশ অস্বস্তিতেই পড়েছেন নীতীশ কুমার।
রাজ্য জুড়ে মদ বিক্রি জারি
এদিকে উল্লেখিত ভিডিওতেই দেখা যায় যে রমেশের অন্য এক বন্ধু বলেন তিনি মদের নিষেধাজ্ঞা ভাঙার জেরে ২০ দিন হাজতে থেকেছিলেন। এরপর সদর্পে ধর্মেন্দ্র কুমার নামক সেই ব্যক্তি দাবি করেন, 'বিহারে মদের উপর নিষেধাজ্ঞা সম্ভব না। কোনও না কোনও ভাবে রাজ্য জুড়ে মদ বিক্রি জারি থাকবে।' এরপর নীতীশের সরকারের দিকেই আঙুল তুলে তিনি বলেন, 'সরকার যদি এখন এত কড়া নজরদারি চালাত, তাহলে কি মদ বিক্রি চলতে পারত?'
মদ এবং পানের উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জলঘোলা
এদিকে বিহারে মদ এবং পানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। মামলা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। তবে মদ নিষিদ্ধ করার সেই আইন প্রণয়নের চার বছরের মথায় এখন মানুষের দাবি, এই আইনের জেরে রাজ্যে বিশাল ভাবে বেড়েছে বেআইনি মদ বিক্রির কারবার। পাটনা, ভাগলপুর, পুর্ণিয়া, দ্বারভাঙ্গাতে বেআইনি মদ বিক্রি সব থেকে বেশি বলে জানা গিয়েছে।
উভয় সংকটে নীতীশ
এই আবহে উভয় সংকটে নীতীশ। এক তো বিহারে মদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি তাঁর নির্বাচনী প্রতিশঅরুতি ছিল, যা তিনি পূরণ করতে পারেননি সঠিক ভাবে। তবে এখন এই বিষয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করলে ভাটারদের মধ্যে উল্টো প্রতিক্রিয়াও দেখা যেতে পারে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে বিষমদে মৃত্যুর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমেছে সেরাজ্যে। পাশাপাশি মহিলাদের সামাজিক অবস্থানেরও উন্নতি হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা লাগু করতে ব্যর্থ পুলিশ
এদিকে মদের উপর নিষেধাজ্ঞা লাগু করার বিষয়ে পুলিশ এবং আধিকারিকদের অক্ষমতাও বারবার সামনে এসেছে। পুর্ণিয়াতে ২০১৮ সালে পুলিশ দাবি করেছিল যে বাজেয়াপ্ত ১১ হাজার বোতলের মদ নাকি ইদুরে খেয়েছিল। এদিকে কয়েকদিন আগেই নির্বাচন কমিশন এক আইএএস আধিকারিককে অপসারিত করে, কারণ সেই আধিকারিক রাজ্যে বেআইনি মদ পাচার রোখার বিষয়ে ঠিক ভাবে কাজ করতে পারছিলেন না।
রমরমিয়ে চলছে বেআইনি মদের ব্যবসা
২০১৬ এবং ২০২০ মাঝে মদ নিষেধাজ্ঞা ভাঙার ৪৭ হাজার ৩৯৫টি মামলা দায়ের হয়েছে শুধুমাত্র পাটনায়। সেখানে ৭৮ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫৪০ লিটার মদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এবছর করোনা লকডাউনের আগে মার্চ মাসেই বিহারের বিভিন্ন জেলা জুড়ে কয়েকশো লিটার মদ বাজেয়াপ্ত হয়। গত চার বছরে মদ পাচার রুখতে অক্ষম ৫০০ আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ৪০ জন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল হয়েছে। তবে এখনও বিহার জুড়ে রমরমিয়ে চলছে বেআইনি মদের ব্যবসা।
'পরিযায়ী' হাতিয়ারেই বিহারে নরেন্দ্র মোদীর 'পদ্ম' পুষ্করিণী ছারখারের ছক রাহুল গান্ধীর