রাত ২টো পর্যন্ত জ্বলছে চিতা, কোভিড দেহর চাপ সামলাতে বেঙ্গালুরু শ্মশানে টোকেন পদ্ধতি
কোভিড দেহর চাপ সামলাতে বেঙ্গালুরু শ্মশানে টোকেন পদ্ধতি
করোনায় মৃত্যু বাড়ছে বেঙ্গালুরুতে। শহরের প্রতিটি শ্মশানেই মৃতদেহের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সোমবার দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর হোসাপাল্য শ্মশানের বাইরে দেখা গেল ৬টি দেহ নিয়ে জেলের একটি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে রয়েছে অন্য অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে। লাইন পেরিয়ে আগে যাওয়ার জন্য জেলের অ্যাম্বুলেন্সের চালককে হেনস্থা করছেন অপেক্ষারত অন্য চালকরা। আসলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিরক্তি বোধ চলে এসেছে চালকদের মধ্যে।
শ্মশানে কোভিড রোগীর দেহ বাড়ছে
সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শ্মশান বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত ১৪টি দেহ দাহ করা হয়েছে এবং শ্মশানে ঢোকার মুখে অ্যাম্বুলেন্সে অপেক্ষা করছে আরও ৬টি দেহ। শ্মশানের এক কর্মী চন্দ্র কুমার বলেন, 'আমরা প্রথম যে আসবে তার দেহ দাহ করব এই পদ্ধতিতে দু'টি চিতায় দাহ কাজ করছি। সোমবার ৩১টি দেহ দাহ করা হয়েছে। শ্মশানের কাজ চলে দুপুর ২টো পর্যন্ত এবং পুনরায় তা খোলে বিকেল পাঁচটায়। গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রতিদিন একটা বা ২টো করে কোভিড রোগীর দেহ আসত, কিন্তু এখন তার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে।'
শহরে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের অগাস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে কোভিড-১৯-এর প্রথম ওয়েভ যেমন চাপ সৃষ্টি করেছিল, সেই একই ধরনের চাপ দেখা দিচ্ছে স্বাস্থ্য কর্মী ও তার সহযোগী ব্যবস্থার ওপর। বেঙ্গালুরুতে করোনার প্রথম ওয়েভের সময় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতি দশ লক্ষ জনসংখ্যায় মৃত্যু হত ২৬১ জনের। কিন্তু এখন প্রতি দশ লক্ষে এই শহরে ৫২১ জনের মৃত্যু হয়, যেখানে কর্নাটকে ১৮৮ জন। সোমবার বেঙ্গালুরুতে ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এই বছর ২৩ মার্চ দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হওয়ার পর সর্বোচ্চ। এর আগে পর্যন্ত দৈনিক ১০ থেকে ২০ জনের মৃত্যু হত। তবে শহরে মৃত্যুর হার (সিএফআর বা নিশ্চিত করোনা কেসের শতাংশ হিসাবে মৃত্যু) গত বছরের ২ শতাংশের শীর্ষ থেকে নেমে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এক শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বিনামূল্যে কোভিড দেহ দাহ
বেঙ্গালুরু সিটি কর্পোরেশনের হোসপাল্য বৈদ্যুতিন শ্মশানটি সেই সাতটি শ্মশানের মধ্যে একটি, যা রাজ্য সরকার বিনা মূল্যে কোভিড-১৯ দেহ দাহ করার জন্য আলাদাভাবে রেখেছিল। হোসপাল্য শ্মশানের বাইরে অপেক্ষারত অ্যাম্বুলেন্স চালক রুদ্রেশ এস বলেন, 'শ্মশানে দাহ কার্যের জন্য মৃতদেহ নিয়ে আসার পর আমাদের সাত-আট ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।' কোভিড দেহ দাহ করার চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পর শ্মশান কর্তৃপক্ষ একের পর এক দেহ দাহ করার পদ্ধতি একরকম রাখতে টোকেন ব্যবস্থা চালু করে।
বেঙ্গালুরুর পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে
মার্চের শেষের দিকে করোনা কেস বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালেও চাপের সৃষ্টি হয়েছে। ১৯ এপ্রিল এই শহরে ১,০৩,১৭৮টি সক্রিয় করোনা কেস সনাক্ত হয় যা কর্নাটকের ৭২ শতাংশ, রাজ্যে সক্রিয় করোনা কেসের সংখ্যা ১,৪২,০৮৪। দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালের শীর্ষ অধ্যাপক বলেন, 'এই সপ্তাহে আমরা কোভিড-১৯ রোগীদের রাখার জন্য নতুন একটি জায়গা চালু করব। ২ ঘণ্টার মধ্যে ১০০টি বেড দখল হয়ে গিয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন এমন রোগীদের ভর্তি নেব না আমরা। সরকারের উচিত কিছুদিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করার এবং নিজস্ব সুবিধা রয়েছে এমন ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল ও জয়দেব হাসপাতাল খুলে দিক। এরকম করলে আমরা কমপক্ষে ৩০০টি আইসিইউ বেড খালি পাব। দিল্লি ও মুম্বইয়ের চেয়েও খারাপ দিকে যাচ্ছে বেঙ্গালুরু।'
এক সপ্তাহে করোনা আক্রান্তে হারে মহারাষ্ট্রকে পিছনে ফেলল বাংলা, ভোটের অসমের পরিস্থিতি আরও খারাপ