উত্তর-পূর্ব থেকে সিটিজেন্স অ্যামেন্ডমেন্ট বিলের প্রতিবাদ পৌঁছে গেল রাজধানীতে
নর্থ ইস্ট উইমেন্স ফ্রন্ট সিটিজেন্স অ্যামেন্ডমেন্টট বিলের বিরুদ্ধে দিল্লীতে একটি প্রতিবাদ আন্দোলন করছে।
বিজেপি সরকারের প্রস্তাবিত সিটিজেন্স অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে অসম সহ গোটা উত্তরপূর্ব ভারতে। এ অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপজাতির মানুষজনের আশঙ্কা এই বিল পাশ হলে নিজভূমেই তাঁরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। পাশপাশি এই বিলে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সত্তার পরিপন্থী। এই দাবিতেও ক্ষোভ জড়ো হচ্ছে।
সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিলে বলে হয়েছে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অবৈধ অভিবাসীরা যদি ছয় বছরের বেশি ভারতে বসবাস করেন তাহলে তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। প্রথম থেকেই এই বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অসমের বিভিন্ন আদিবাসি ও জনজাতিরা। সম্প্রতি জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির শুনানিতেও তারা বিলটির বিরোধিতা করেছেন। নেডার তৃতীয় বৈঠকে যোগ দিতে অসম গিয়ে গত সপ্তাহেই সেখআনকার স্থানীয় সংগঠনের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে।
তবে এই আন্দোলন এখন আর উত্তর-পূর্বের মাটিটে আটকে নেই। তা পৌঁছে গিয়েছে রাজধানীর পার্লামেন্ট রোডেও। গত ২১ তারিখ থেকে নর্থ ইস্ট উইমেন্স ফ্রন্ট প্রতিবাদ আন্দোলন করছে। তাঁদের একজন অসমের নারী অধিকার কর্মী সুমিত্রা হাজারিকা জানান, '(দিল্লিতে) সিটিজেন্স অ্যামেন্ডমেন্ট বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আমরা দিল্লির মানুষের কাছ থেকে এই বিলের বিরুদ্ধে সইও সংগ্রহ করছি। এই সংগৃহীত স্বাক্ষর আমরা জেপিসির কাছে পেশ করবো।'
Bangladeshi Muslims protesting against giving citizenship to Hindu Bangladeshis in Assam. pic.twitter.com/rZhM1aFiw9
— Bhupen Sarma (@bhupen_sarma) May 22, 2018
তাঁদের এই প্রতিবাদ রাজধানী বড় সমর্থন পাচ্ছে। গত দুদিনে বহু দিল্লিবাসীকে সিটিজেন্স অ্যামেন্ডমেন্ট বিলের বিরুদ্ধে সই করতে দেখা গিয়েছে। সই সংগ্রহের টেবিলে আছেন গুয়াহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী তথা অহমীয়া চিত্র পরিচালক জুনমনি দেবী খাউন্ড। তিনি জানান, 'সংবিধানে বলা হয়েছে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। ধর্মের ভিত্তিতে কোনও সম্প্রদায়কে অবমাননা করা অবশ্যই সংবিধান বিরোধী। কিন্তু সিটিজেনশীপ অ্যাক্টের এই সংশোধনীটিতে ধর্মের ভিত্তিতেই নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। '
শুধু তাই নয়, এতে অহমীয়া জনজাতি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে বলেও তাদের দাবি। জুনমনি দেবী বলেন, অসম ও উত্তরপূর্বের কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের খোলা সীমানা রয়েছে। কয়েক লক্ষ অবৈধ অভিবাসী সেই সীমানা পেরিয়ে এসে এ অঞ্চলে বসবাস করে বলে মনে করা হয়। আমাদের দাবি, সব অবৈধ অভিবাসীকেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের ধর্মৃজাতি দেখলে চলবে না। আলাদা ভাবে হিন্দুদের ভআরতীয় বলে গ্রহন করার মানে, অহমীয়াদের পরিচয় গায়েব করে দেওয়া। কেননা এতে করে অবাধ অভিবাসীরাই রাজ্যে সংখ্যাগুরু হয়ে দাঁড়াবে।'
এমনকী অসমীয়াদের মন বুঝে এখন উল্টো সুরে গাইতে শুরু করেছেন অনেক বিজেপি নেতাও। জুনমনি দেবীদের সঙ্গেই রাজধানীতে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন বিজেপি নেত্রী মীরা বরঠাকুর। পাশাপাশি সম্প্রতি সেখআনকার বিজেপি নেতা অতুল বোরাও মুখ্য়মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে মেঘালয় সরকারের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বিলের বিরোধিতা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। মেঘালয় অবৈধ অভিবাসী সমস্যা বিশেষ না থাকলেও তারা অসমের মানুষের পাশে দাঁড়াতেই বিলটির বিরোধিতা করেছে বলে জানা গেছে।