যশবন্ত সিনহা কে, বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী সম্পর্কে জেনে নিন বিস্তারিত
আইএএস থেকে বিজেপির মুখপাত্র হয়েছিলেন। ছিলেন অটবিহারী মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এখন তিনি বিরোধীদের তুরূপের তাস। রাষ্ট্রপতি পদে শাসক বিজেপির চ্যালেঞ্জার তিনি।
আইএএস থেকে বিজেপির মুখপাত্র হয়েছিলেন। ছিলেন অটবিহারী মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এখন তিনি বিরোধীদের তুরূপের তাস। রাষ্ট্রপতি পদে শাসক বিজেপির চ্যালেঞ্জার তিনি। প্রাক্তন বিজেপি নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহাকে বিরোধীরা সর্বসম্মতিক্রমে বেছে নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে। তিনিই প্রথম তৃণমূলের নেতা হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত প্রার্থী।
বিজেপির মনোনয়নে কাঁটা প্রাক্তনী যশবন্ত সিনহা
আগামী ১৮ জুলাই ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতির নির্বাচন হচ্ছে ভারতে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে ২৪ জুলাই। তারপর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন নতুন রাষ্ট্রপতি। সেই পথে বিজেপির মনোনয়নে কাঁটা হয়ে আবির্ভূত হলেন তাদেরই প্রাক্তনী যশবন্ত সিনহা। বিরোধীদের জন্য একেবারে সঠিক ও সুযোগ্য প্রার্থী বলে বিবেচিত হয়েছে তাঁর নাম। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করেছেন।
বাজপেয়ীর ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন ছিলেন যশবন্ত
১৮টি বিরোধী রাজনৈতিক দল যশবন্ত সিনহাকে বেছে নিয়েছে। তিনি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হিসেবে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক মহলে তিনি সমস্ত বিরোধীদের কাছেও সমান সম্মানীয়। এদিন ১৮ দল তাঁর নামে সিলমোহর দেওয়ার পর যেভাবে কেজির আর কেসিআর সমর্থন দিয়েছেন, তাতে ফের প্রমাণিত হয়েছে তাঁর মনোনয়ন যথার্থ হয়েছে।
কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধী দলের সিলমোহর যশবন্তের নামে
এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লাহ এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর নাম নিয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে জল্পনা-কল্পনা চলেছে। তাঁরা একে একে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে। মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেস রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিরোধী দলের প্রার্থী হিসাবে সিনহার নাম প্রস্তাব করেছিল। অবশেষ কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধী দল তাঁর নামে সিলমোহর দিয়েছে।
বিরোধী জোটের সর্বসম্মত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী
যশবন্ত সিনহাই যে বিরোধী জোটের সর্বসম্মত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হতে চলেছেন, তা নিজেই মঙ্গলবার সকালে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি টুইট করেছিলেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। এদিন বেলা বাড়ার পরই চূড়ান্ত হয়ে যায়, তাঁর ওই টুইটের কী অর্থ। তিনি বৃহত্তর কারণে জাতীয় স্বার্থে তৃণমূল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়ছেন।
যশবন্তের শিক্ষাজীবন থেকে অধ্যাপনা
১৯৩৭ সালের ৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন যশবন্ত সিনহা। পাটনার স্কুল ও কলেজে তিনি পড়াশোনা করেছেন। ১৯৫৮ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং ১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি ওই প্রতিষ্ঠানেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপনা করেন।
আইএএস থেকে বাণিজ্যিক দূত যশবন্ত
তারপর ১৯৬০ সালে ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবায় যোগদান করেন তিনি এবং বিহার সরকারের অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সহ বিভিন্ন শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত জার্মানিতে ভারতীয় দূতাবাসে প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭৩ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টে কনসাল জেনারেল নিযুক্ত হন।
১৯৮৪ ছিল যশবন্ত সিনহার কর্মজীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট
এক বছর পর ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ফিরে যশবন্ত সিনহা বিহার সরকার এবং কেন্দ্রের শিল্পমন্ত্রকের সঙ্গে শিল্প সহযোগিতা, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি অধিকার এবং প্রযুক্তি আমদানি পরিচালনার কাজে যোগ দেন। ১৯৮৪ ছিল যশবন্ত সিনহার কর্মজীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট। ১৯৭০-এর দশকে জয়প্রকাশ নারায়ণের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে রাজনীতিতে যোগ দেননি।
জনতা পার্টিতে যোগদান থেকে বিজেপি সরকারের মন্ত্রী
১০ বছর পর ১৯৮৪ সালে তিনি জনতা পার্টিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে পার্টির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হন এবং ১৯৮৮ সালে রাজ্যসভায় প্রবেশ করেন। ১৯৮৯ সালে জনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৯০-৯১ সালে চন্দ্রশেখর সরকারের অর্থমন্ত্রী হন যশবন্ত সিনহা। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে বিজেপির মুখপাত্র হয়েছিলেন এবং পরে ১৯৮৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাজপেয়ী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
বিজেপি থেকে তৃণমূল হয়ে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত
পরবর্তী সময়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে গুরুতর মতপার্থক্যের পরে তিনি ২০১৮ সালে বিজেপি ছেড়েছি দেন। কিন্তু তাঁর ছেলে জয়ন্ত সিনহা ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ থেকে বিজেপির সাংসদ। দল ছাড়ার পর থেকে যশবন্ত সিনহা নরেন্দ্র মোদী সরকারের পরিকল্পনা ও নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন। তিনি ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূলে যোগ দেন এবং দলের জাতীয় সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন। এবার তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে।
দ্রৌপদী মুর্মু কে? আদিবাসী নেত্রী থেকে এনডিএ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর সফর কেমন ছিল