দলিতদের বিরুদ্ধে পুলিশি তৎপরতায় বিধি-নিষেধ, বেরল ঐতিহাসিক রায়
সুপ্রীম কোর্ট জানিয়েছে ১৯৮৯-এর অ্যান্টি দলিত অ্যাট্রোসিটিজ ল - সিডিউলড কাস্ট অ্যান্ড সিডিউলড ট্রাইব (প্রিভেনশন অব অ্যাট্রোসিটিজ) অ্যাক্ট-এর অধীনে হওয়া প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে তদন্ত আবশ্যিক নয়
দলিত নৃশংসতা সংক্রান্ত যে রায় দিয়েছিল সুপ্রীম কোর্ট তাতে কিছুটা বদল আনা হল। একেবারেই অর্থহীন ও অসার এমন 'দলিত নৃশংসতার অভিযোগ'-এর ক্ষেত্রেই অপরাধীকে গ্রেফতারের আগে পুলিশী তদন্তের প্রয়োজন আছে বলে সুপ্রিম কোর্টের ২০ মার্চের রায়কে সংশোধন করলেন বিচারপতি এ কে গোয়েল। এদিন সর্বোচ্চ আদালত সাফ জানিয়েছে ১৯৮৯-এর অ্যান্টি দলিত অ্যাট্রোসিটিজ ল - সিডিউলড কাস্ট অ্যান্ড সিডিউলড ট্রাইব (প্রিভেনশন অব অ্যাট্রোসিটিজ) অ্যাক্ট-এর অধীনে হওয়া প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্ত আবশ্যিক নয়।
গত ২০ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট দলিতদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগের ভিত্তিতে অবিলম্বে গ্রেফতারির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আদালত বলেছিল এই ধরনের গ্রেফতারির আগে একটি প্রাথমিক তদন্ত করতে হবে। যা নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যায়। বিভিন্ন জায়গায় হিংসাও ছড়ায়।
ওই রায়ে আরও বলে হয়েছিল অভিযুক্ত যদি সরকারি কর্মচারী হন তাহলে গ্রেফতারের আগে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। অভিযুক্ত বেসরকারি কর্মচারী হলে ওই অনুমতি দেবেন ডেপুটি কমিশনার। এভাবে নানা শর্ত চাপিয়ে আসলে দলিতদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে বলে আওয়াজ তুলেছে দলিত সংগঠনগুলি।
এদিন বিচারপতি গোয়েলের নেতৃত্বে, সুপ্রীম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ রায় দেয়, 'কিছু ক্ষেত্রে এই ধরণের অভিযোগের সারবত্তা থাকে। অন্য ক্ষেত্রে আবার কিছুই থাকে না। পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেরাই বুঝতে পারেন সেইসব মামলা অসার, অর্থহীন। সেগুলির ক্ষেত্রেই একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রয়োজন। এই ধরনের ক্ষেত্রেই অনুসন্ধান করা যেতে পারে। তবে এটা আবশ্যিক নয়। আমরা বলেছি যে পুলিশ 'প্রাথমিকভাবে তদন্ত করতে পারে', কখনই বলিনি 'অবশ্যই তদন্ত করতে হবে'।
এদিন বিচারপতিদের বেঞ্চে ২০ মার্চ রায়ের বিরুদ্ধে আনা কেন্দ্র এবং তামিলনাডু ও কেরল-সহ কিছু রাজ্যের আনা রিভিউ পিটিশনের শুনানি হয়। বিচারপতি গোয়েল বলেন, 'এখন এই আইনের আওতায় অভিযুক্ত সবাইকেই গ্রেফতার করা হয়। এমনকি যদি তদন্তকারী অফিসার নিশ্চিতভাবে জানেন যে আদতে কোনও মামলা নেই, তাও তারা গ্রেফতার করতে বাধ্য'।
শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল কে.কে. ভেনুগোপাল বলেন, 'এই রায় দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক আচরণকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তিনি সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। আদালতে জানান, এক দলিত নব-দম্পতি ঘোরায় চড়ে বিয়ে করছিলেন বলে তাদের ঘোরা থেকে টেনে হিচরে নামিয়ে বেধারক মারধর করা হয়েছে।
ভেনুগোপালের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জাস্টিস গোয়েল বলেন, 'আমাদের রায় কাউকে অপরাধ করতে উৎসাহ দেয়নি। এসসি-এসটি সম্প্রদায়কে এই আদালত পূর্ণ সুরক্ষা দেয়। দেখতে হবে, কর্তৃপক্ষ কেন কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না ... তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা থাকা উচিত ... রাষ্ট্রকে পদক্ষেপ নিতে হবে ... সম্প্রদায়গুলির, একের অপরের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত'।
ভেনুগোপাল বলেন, এই রায়ের ফলে এসসি-এসটি সম্প্রদায়ের মনোবল ভেঙে গেছে। এই আইনটিকে তারা শত শত বছরের দুঃখ-কষ্ট ও সামাজিক দমনের রক্ষাকবচ হিসেবে দেখে।
এখানেই না থেমে ভেনুগোপাল মার্চ ২০ রায়কে 'বিচার বিভাগীয় অতিসক্রিয়তা' বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, 'যে আইন বর্তমান আইনের বিরোধিতা করে সেই আইন ঘোষণা করা যায় না।' তিনি আরও বলেন, এই রায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষমতা দিয়েছে। এখন একজন দলিত অভিযোগ দায়ের করলে সরকারি কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, তাদের অধস্তনদের গ্রেফতার করা উচিত কিনা। তিনি জানান, অনুমোদনের বিষয়টি আইনসভা ছিক করতে পারে। আদালত অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা দিতে পারে না। এই রায়ের ফলে হাজার হাজার সরকারী কর্মচারীদের হাতে গ্রেফতারি নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা এসেছে।
ভেনুগোপাল বলেন, এতে একজন দলিতের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অফিসারকা এফআইআর করবেন, সে সম্ভাবনাও কমেছে। অভিযোগ জানাতে এলে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার শর্তগুলিকে দলিতদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
এ সময় অপর বিচারপতি ললিত যুক্তি দেন, আদালতের রায়টি পুলিশকে এফআইআর করতেও নিষেধ করেনি, কোনও নির্দিষ্ট লাইন ঠিক করে দেয়নি যে এভাবে কাজ করতে হবে, এবং এটাও বলেনি যে অভিযুক্ত অপরাধী হলেও তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, 'এই রায়কে একজন ব্যক্তির অতি দ্রুত এবং যান্ত্রিকভাবে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে একটি ফিল্টার বলতে পারেন'।
জবাবে ভেনুগোপাল বলেন, আদালত সমগ্র দেশের জন্য যে সাধারণ নির্দেশিকা রয়েছে তা অমান্য করতে পারে না। আদালত কেবল বর্তমান আইনে কোনও ফাঁক থাকলে তা পূরণ করতে পারে। নিজস্ব সিদ্ধান্তে কোনও নির্দেশিকা বাতিল করতে পারে না। বিশেষ করে যখন এই নির্দেশিকাগুলি সংসদীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুপ্রীম কোর্টের রায়ের পর সারা দেশে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে এবং ক্ষতি হয়েছে তার উল্লেখ করে ভেনুগোপাল, রায় পর্যালোচনা করার জন্য বেঞ্চের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।