কর্নাটকে গর্ভবতী, অপুষ্টি, মিড–ডে মিল প্রকল্প পর্যাপ্ত পরিমাণে রেশন পাচ্ছে না, দাবি সমীক্ষার
কর্নাটকে গর্ভবতী, অপুষ্টি, মিড–ডে মিল প্রকল্প পর্যাপ্ত পরিমাণে রেশন পাচ্ছে না, দাবি সমীক্ষার
রবিবার প্রকাশিত পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের এক দ্রুত মূল্যায়ণে দেখা গিয়েছে যে খাদ্য ও পুষ্টি কর্ণাটক সরকার অঙ্গনওয়াড়িদের মাধ্যমে মিড–ডে মিল ও এবং গণ বন্টন দোকানগুলিতে দিচ্ছে তাতে হতাশাজনক ফলাফল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। করোনা ভাইরাসের সঙ্কটের কারণে এমনিতেই গোটা দেশে লকডাউন পরিস্থিতি, তার ওপর এ ধরনের ফলাফল সত্যিই উদ্বেগের কারণ তৈরি করছে।
অঙ্গনওয়াড়িরা ঠিকমতো কাজ করছে না
কর্নাটকের হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে করোনা ভাইরাসের লকডাউনের কারণে ১০টি এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র কর্নাটকের ৮০টি গ্রাম/এলাকায় ০-৬ বছর বয়সের শিশুদের জন্য কোনও রেশন দেয়নি। ৭০ শতাংশ কেসে দেখা গিয়েছে সেখানে ডিম দেওয়া হয়নি এবং ৪৩.৭৫ শতাংশ কেসে শিশুদের দুধ সরবরাহ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, মাত্র ৭৫ শতাংশ গর্ভবতী ও শিশুদের স্তন্য পান করান এমন মহিলাদের মধ্যে অঙ্গনওয়াড়ি রেশন দিলেও তা পর্যাপ্ত নয়। রাজ্যের ১৩.৭৫ শতাংশ অপুষ্টিজনিত কিশোরীরা অঙ্গনওয়াড়িদের কাছ থেকে রেশন পান।
কর্নাটকে অনিয়ম
উল্লেখযোগ্যভাবে এও দেখা গিয়েছে যে রাজ্যের ৭৩.৭৫ শতাংশ গর্ভবতী মহিলারা আয়রন/ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট পাননি, যা তাঁদের রক্তাল্পতা ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। মিড-ডে মিল প্রকল্পের আওতায় যে সব পড়ুয়ারা রয়েছে তাদের রেশন সরবরাহ বেশি করে করতে হবে, ৮০টি এলাকা সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে ৯টি এলাকা বাদে আর কোনও জায়গায় মিড-ডে মিল প্রকল্পের রেশন সরবরাহ করা হয়নি। রিপোর্ট বলছে, ‘খাদ্য পরিকল্পনাগুলি নিজেরাই কার্যকর এবং অধিকাংশ মানুষই পর্যাপ্ত পরিমাণে রেশন পাননি, এটা সম্পূর্ণ নয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল লকডাউনের মেয়াদ বাড়ার পর তা শেষ পর্যন্ত এই রেশন চলবে না। উদ্বেগের বিষয় হল অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা তাঁরা প্রয়োজন মতো পুষ্টি পাচ্ছে না। কর্নাটকের শিশুরা ইতিমধ্যেই অপুষ্টিতে ভুগছে। লকডাউনের সময় এই চিত্রটা আরও ভয়াবহ হবে।'
মানা হচ্ছে না সুপ্রিম কোর্ট
কর্নাটকের পিইউসিএলের সভাপতি অধ্যাপক ওয়াই জে রাজেন্দ্র বলেন, ‘এটা সুপ্রিম কোর্ট ও ভারত সরকারের নির্দেশ যে লকডাউনের সময় তুমি কোনওভাবেই খাদ্য ও পুষ্টি পরিষেবা বন্ধ করতে পার না। কিন্তু মিড-ডে মিল প্রকল্প দেখাশোনা করে যে শিক্ষা বিভাগ ও মহিলা ও শিশু কল্যাণ বিভাগের পুষ্টির দিকটা দেখে অঙ্গনওয়াড়ি তারা তা মেনে চলেনি। শুধুমাত্র ইচ্ছার অভাবে এই লকডাউনের পরিস্থিতিতে দুর্বলদের খাদ্য সুরক্ষা উপেক্ষা করা হয়েছে।'
খাদ্য ও পুষ্টির পরিমাণে বৈষম্য
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা যে খাদ্য বন্টন করেছেন তাতে বৈষম্য দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু জেলায় তাঁরা ৪৮০ গ্রাম করে চাল দিয়েছেন তো কিছু এলাকায় রাগি, চাল ও সবুজ ছোলা মিশ্রিত ৪.১৭ কেজির প্যাকেজ দিচ্ছেন। কিছু জেলায় ৭০ গ্রাম করে দুধ দেওয়া হচ্ছে আবার কিছু জেলায় ৫০০ গ্রাম করে। কিছু কিছু এলাকায় গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্য পান করান যে সব মহিলারা তাঁদের জন্য ১ কেজি চাল ও ২০০ গ্রাম ডাল বরাদ্দ করেছে আবার অন্য এলাকায় দেখা গিয়েছে ৫.৭ কেজি চাল, ২২৮ গ্রাম গুড়, ২৩২ গ্রাম চিনেবাদাম, ৩৮০ গ্রাম অড়হর ডাল, ১৯০ গ্রাম সবুজ ছোলা, ৩৮০ গ্রাম চিনি দেওয়া হয়েছে। মিড-ডে প্রকল্পেও দেখা গিয়েছে যে বেশ কিছু এলাকায় ১ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে তো অন্য জায়গায় ৩ কেজি করে চাল।
গণ বন্টন পদ্ধতিতে (পিডিএস) আধার, ওটিপি চাইছে
পিডিএস দোকানগুলিতে শুধুমাত্র চাল ও গম বন্টন করা হচ্ছে কিন্তু ডাল দেওয়া হচ্ছে না। ১০টি কেসে দেখা গিয়েছে যে দোকানগুলি খোলা হচ্ছে না এবং ৫টি এমন কেস রয়েছে যেখানে দোকান খোলা হলেও রেশন দেওয়া হচ্ছে না। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘রেশন দোকানের মালিকরা আধার ও ওটিপি যাচাইয়ের জন্য জোর করছে যেখানে সরকার বলে দিয়েছে এটা এই সময় বাধ্যতামূলক নয়। রেশন কার্ড রয়েছে এমন ব্যক্তিদের আইভিআরএস লাইনে কল করে ওটিপি পেতে হবে, যেটি রেশন দোকানের মালিককে দিতে হবে এবং এরপরই কেনা-বেচার পদ্ধতিতে প্রবেশ করতে পারবেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু মোবাইল ফোন নেই এমন ব্যক্তিরা ওটিপি পাচ্ছেন না এছাড়াও বাজে নেটওয়ার্ক, সার্ভার সমস্যার জন্য ওটিপি পেতে সমস্যা হচ্ছে।' যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সব রেশন দোকানগুলিকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার নির্দেশ হয়েছে কিন্তু তাও রেশ মালিকরা জোর করে টাকা নিচ্ছেন অসহায়দের কাছ থেকে।
করোনা ভাইরাসের সুযোগে জাল ছড়াচ্ছে দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা, জিহাদি নিয়োগে নতুন ছক