প্রণবের প্রজ্ঞায় অভিভূত ইন্দিরা তরুণ সাংসদকে বানিয়েছিলেন ‘সেকেন্ড ম্যান’
প্রণবের প্রজ্ঞায় অভিভূত ইন্দিরা তরুণ সাংসদকে বানিয়েছিলেন ‘সেকেন্ড ম্যান’
আপাদমস্তক এক বাঙালি। ধুতি-পাঞ্জাবি পরা ছোটোখাটো এক মানুষ। কিন্তু অসীম তাঁর জ্ঞান। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশের প্রথম দিন থেকে তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা সেই যুবকের বক্তব্য শুনে প্রথম দিনই ইন্দিরা গান্ধীর গুডবুকে তাঁর নাম উঠে গিয়েছিল।
ইন্দিরার সবথেকে বেশি বিশ্বাস ও ভরসার পাত্র
সেই পথ চলা শুরু। তারপর ইন্দিরা গান্ধীর একান্ত সহযোগী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ভারতীয় রাজনীতির সেকেন্ড ম্যান। নিজের পরে ইন্দিরা সবথেকে বেশি বিশ্বাস ও ভরসা করতেন আদ্যন্ত বাঙালি এই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপর। ১৯৬৯ সাল থেকে কংগ্রেসের ক্রাইসিস ম্যানেজার হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
প্রণবের প্রজ্ঞায় অভিভূত ইন্দিরার ‘সেকেন্ড ম্যান’
প্রথম দিনেই তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে পিছনের সারি থেকে উঠে এসেছিলেন সামনের সারিতে। বাংলা থেকে এক তরুণ সাংসদ প্রথম দিনের বক্তব্যেই মাত করে দিয়েছিলেন। তা নিয়ে সংসদে হইচই পড়ে গিয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধীও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রজ্ঞার সঙ্গে পরিচিত হয়ে সেকেন্ড ম্যান করে দিয়েছিলেন ভারতীয় রাজনীতিতে।
ব্যক্তিত্বময়ী ইন্দিরার গোপন-আলোচনায় ডাক প্রণবকে
রাজ্যসভায় জ্বালাময়ী বক্তব্যের কয়েকদিন কাটতে না কাটতেই তলব করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। প্রণব মুখোপাধ্যায় এসে দাঁড়াতেই ব্যক্তিত্বময়ী ইন্দিরা বলে বসেন, অত্যন্ত গোপন একটি বিষয়ে আলোচনার জন্য ডেকেছি। তা শুনে খানিক অবাকই হয়েছিলেন প্রণব। কী এমন গোপন কথা আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী!
বাংলা কংগ্রেসের সাংসদ হয়ে ইন্দিরার নজরে
তখন তিনি বাংলা কংগ্রেসের সাংসদ। প্রথমবার রাজ্যসভায় গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কী আলোচনা করবেন ইন্দিরা গান্ধী। তখন বাংলা কংগ্রেস থেকে ঘরওয়াপসি চলছিল। বাংলায় দু-বার বাংলা কংগ্রেসের সরকার হওয়ার পর ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে শাসক দল। রাজ্যসভায় তাঁদের সাংসদ ছিলেন মাত্র তিনজন।
নবাগত সাংসদ প্রণব গুরুদায়িত্ব ইন্দিরার
ইন্দিরা রাজন্যভাতা বিলোপের বিল আনতে চাইছেন। তাই প্রত্যেকের সমর্থন চান। সেই সমর্থনের জন্যই প্রণবকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। নবাগত সাংসদ প্রণবকে তিনি গুরু দায়িত্ব দিয়েছিলেন, বাংলা কংগ্রেসের তিন সাংসদের ভোটই নিশ্চিত করতে হবে তাঁকে। প্রণব কথা দিয়েছিলেন ইন্দিরাকে।
কংগ্রেস যোগ দিয়ে ক্রাইসিস ম্যানেজার প্রণব
এখানেই শেষ নয় ইন্দিরা গান্ধী ভরসা করেছিলেন। সেই ভরসা রেখেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। এর বছর তিনেক পরে ১৯৭২-এ কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। এবং অচিরেই হয়ে উঠেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয়পাত্র। ইন্দিরা গান্ধীর বিপদের বন্ধুও হয়ে উঠেছিলেন তিনি। হয়ে উঠেছিলেন ক্রাইসিস ম্যানেজার।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অর্থমন্ত্রীর মধ্যে অন্যতম
ইন্দিরা গান্ধীর আমলে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি শিল্পোন্নয়ন মন্ত্রকের উপমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সালে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পান প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই তিন বছরের বিচারে তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অর্থমন্ত্রীর মধ্যে অন্যতম শিরোপা ছিনিয়ে এনেছিলেন। গর্বিত করেছিলেন দেশকে, বাংলাকেও।
নিজেকে কংগ্রেসের ত্রাতা করে তুলেছিলেন
ইন্দিরা গান্ধী যখন যা দায়িত্ব দিয়েছেন, তখন সেই দায়িত্ব পালন করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। কংগ্রেসের প্রথম দিন থেকেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিপদবন্ধু। ক্রাইসিস ম্যানেজারের সেই দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন ইন্দিরা-যুগে। তারপর রাজীব-পরবর্তী পিরিয়ডেও তিনি নিজেকে কংগ্রেসের ত্রাতা করে তুলেছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নিজে দায়িত্ব ছিলেন অবিচল।
'এমন পিতার কন্যা হতে পেরে আমি গর্বিত’, শোকস্তব্ধ প্রণব কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়