দু-দু’বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল প্রণবের, কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস
দু-দু’বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল প্রণবের, কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটল অবশেষে। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশের পরই তিনি আক্ষরিক অর্থেই কংগ্রেসের সেকেন্ড ম্যান হয়ে উঠেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয় পাত্র প্রণব এরপর ভারতের প্রথম নাগরিক হলেও, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে পারেননি। সফল হয়নি বাঙালি প্রধানমন্ত্রিত্বের স্বপ্নও।
প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি অধরাই রয়ে গিয়েছিল প্রণবের
প্রণব মুখোপাধ্যায় সাত-সাতবার সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসের সেবা করে গিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি কংগ্রেস সংসদীয় দলের প্রধান হুইপ এবং বিভিন্ন ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি অধরাই রয়ে গিয়েছিল।
ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি অধরা
তবে কি তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ আসেনি। এসেছিল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দোরগোড়ায় এসে তাঁকে ফিরে যেতে হয়েছে দু-দুবার। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসা হয়নি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজেই তাঁর লেখা বইতে এই ব্যাপারে আক্ষেপও করেছিলেন।
সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদ প্রত্যাখ্যান করার পর
তিনি লেখেন- সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদ প্রত্যাখ্যান করার পর তাঁরই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার কথা ছিল। কেননা তাঁর দীর্ঘদিন সরকারে থাকার অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু কোনও এক বিশেষ কারণে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং। সেই মনমোহন আবার সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন প্রণববাবুকেই।
তিন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে দ্বিতীয় স্থান, দুবার প্রায় প্রধানমন্ত্রী
প্রণব মুখোপাধ্যায় সাতবারের সংসদ সদস্য, তিন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে মন্ত্রী থেকেছেন, দুবার প্রায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যদেবী সদয় হননি। রাজীব হত্যার পরে নরসিমা রাও প্রধানমন্ত্রী হন এবং প্রণব বসেন ভারতীয় পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান পদে। তারপর ১৯৯৫ সালে তিনি বিদেশমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন প্রণবের
প্রণবের দুবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পরে এবং ২০০৪ সালে সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদ প্রত্যাখ্যান করার পরে। যদিও তা হয়নি। প্রণব মুখোপাধ্যায় কংগ্রেস দল ও সরকারকে পরিচালনা করে গিয়েছেন নেপথ্যে থেকে। এবং সমস্ত ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতার সঙ্গে।
ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয়পাত্র ঠাঁই পাননি রাজীবের গুডবুকে
প্রণব ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর খুবই প্রিয়পাত্র। তাঁর সময়ে তরুণ সাংসদ-মন্ত্রী হয়ে উঠেছিলেন কংগ্রেসের সেকেন্ড ম্যান। কিন্তু ১৯৮৪ ইন্দিরার মৃত্যুর পর রাজীব তাঁকে মন্ত্রিপরিষদে স্থান দেননি। অভিমানে সরে গিয়েছিলেন কংগ্রেস থেকে। জাতীয় সমাজবাদী কংগ্রেস তৈরি করেছিলেন। কিন্তু অচিরেই রাজীব তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। এবং প্রণবের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে তাঁকে গুরুত্বের আসনে বসিয়েছিলেন।
সোনিয়ার প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন প্রণবই
রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর নরসিমা রাওের মন্ত্রিসভায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছেন। তারপর সোনিয়া গান্ধীর কাছেও তিনি ভরসাযোগ্য ছিলেন। সোনিয়ার প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন প্রণবই। কংগ্রেসের বিপদের বন্ধু হয়ে উঠেছেন বারবার। তা সত্ত্বেও তাঁকে ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা হয়নি। মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি। মনমোহন তাঁরে প্রথম ব্যক্তির সম্মান দিতেন বরাবর।
মোদী অন্য ভাবধারায় বিশ্বাসী, তবু প্রণবে বিভোর
২০১২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। দেশের এক নম্বর আসে বাঙালির অধিষ্ঠান বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জল অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সেখানে চিরকাল ওই নাম জ্বলজ্বল করবে। মনমোহন সিংযের জমানা থেকে শুরু করে মোদীর জমানায় তিনি রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ছিল তাঁর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অন্য ভাবধারায় বিশ্বাসী হলেও, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিকদর্শন মেনে চলতে পছন্দ করেন।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মরণে দেশে ৭ দিনের জাতীয় শোক