শবরীমালা মামলার শুনানি এবার সাত বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে, একাধিক প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহল থেকে
শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকারের ইস্যুটি এবার সাত বিচারপতির বিশেষ সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে দীর্ঘদিনের ধর্মীয় প্রথা ভেঙে যে কোনও মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার দেয় দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়।
এর আগে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী কোনও ঋতুমতী মহিলা মন্দির চত্বরে প্রবেশ করতে পারতেন না। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ের পর উত্তাল হয় গোটা দেশ। তেড়ে আসেন রক্ষণশীলেরা। বাম শাসিত কেরালায় সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয় বিজেপিও। আগের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের হয় একাধিক রিভিউ পিটিশন।

বহাল থাকছে আগের রায়, জট না কাটায় মামলার শুনানি বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চে
এবার শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার মামলাটিকে বৃহত্তর বেঞ্চে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সহমত না হওয়ায় মামলাটি কার্যত অমীমাংসিত থেকে যায়। পাঁচ বিচারপতির মধ্যে ভিন্নমত পোষণ করতে দেখা যায় দুই বিচারপতিকে। তার মধ্যে আছেন আর এফ নরিম্যান এবং ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। অন্যদিকে বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলা পাঠানোর ক্ষেত্রে সহমত প্রকাশ করেন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, এ এম খানভিকর ও ইন্দু মালহোত্রা। সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তে কোনও স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় আগামী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত আগের রায়টি বহাল থাকছে বলে জানা গেছে।
সুপ্রিম কোর্টের নতুন সিদ্ধান্তের পর একাধিক প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে
২০১৮ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর পূর্ববর্তী রায় ঘোষণার পর তাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন রাহুল ঈশ্বর। এদিন সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের পর ঈশ্বর বলেন, “এটি আমাদের পক্ষে একটি বিজয়। পূর্ববর্তী রায় বাতিল করা উচিত বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান নিয়ে আমরা গর্বিত।”
বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষ সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেছেন, “শবরীমালার অগুনতি ভক্তদের অধিকার রক্ষার প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এটি কখনওই মৌলিক অধিকারের বিষয় ছিল না। এটি যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা সমাজ স্বীকৃত একটা প্রথা ও ঐতিহ্যের বিষয়।”
কেরালার কংগ্রেস নেতা রমেশ চেনিথালাও সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “এই রায় কংগ্রেসের অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ভক্তদের অনুভূতি এই ক্ষেত্রে বহাল রাখা হয়েছে। এখন আমার একটাই অনুরোধ রাজ্য সরকার যেন কোনও ভাবে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিকৃত না করে দেখায়। ”
অন্যদিকে ২০১৮ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায় বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চেও বহাল থাকবে বলে মনে করছেন মহিলা অধিকার রক্ষা কর্মী তৃপ্তি দেশাই। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন "এই তিন বিচারকের বেঞ্চটিও মহিলাদের অধিকারের পক্ষে এবং আমি বিশ্বাস করি যে বৃহত্তর বেঞ্চও আগামীতে মহিলাদের অধিকার রক্ষার পক্ষেই রায় দেবে।"
সুপ্রিম কোর্টের নতুন সিদ্ধান্তের পরই কংগ্রেসের শশী থারুর টুইট বার্তায় লেখেন, "শবরিমালা ইস্যুটিকে বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে পাঠানোর বিষয়ে আমি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এর সঙ্গে জড়িত ইস্যুগুলিতে বিভিন্ন মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।"
কেরালার প্রাক্তন সিএম ওমন চন্ডিও সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন "সুপ্রিম কোর্টের ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর রায়ের পরও আমারা এর সংবেদনশীলতা বুঝে ভক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।"
অন্যদিকে সিপিআইএম নেতা প্রকাশ কারাট শবরী মালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশের পক্ষে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। মহিলাদের সমানাধিকারের প্রশ্নে জোর সওয়াল করে তিনি বলেন, "আমরা দেব দেবীর উপাসনালয়ে মহিলা প্রবেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সমান অধিকার চাই। বর্তমানে যেহেতু বিষয়টি সাত বিচারপতির বেঞ্চে প্রেরণ করা হয়েছে, তাই আমাদের আগামী রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।"
শবরীমালা হোক বা মসজিদ, সব ধর্মীয় স্থানের জন্য অভিন্ন নীতি বিবেচনা করবে শীর্ষ আদালত
আপাতত সব বয়সের মহিলার কাছেই উন্মুক্ত শবরীমালা! স্বাগত জানালেন আন্দোলনকারীরা