কাকা শরদকে সরিয়ে মসনদ দখল করা 'দাদা' অজিত পাওয়ারের রাজনৈতিক উত্থান কোন পথে!
কাকাকে শরদকে সরিয়ে মসনদ দখল করা অজিত পাওয়ারের রাজনৈতিক উত্থান কোন পথে!
ভারতীয় রাজনীতির তাবর নেতারা কোনও না কোনও সময় তাঁদের রাজনৈতিক ব্যাটন তুলে দিয়েছেন পরিবারেরই পরবর্তী প্রজন্মের নেতাদের হাতে। বেশিরভআগ ক্ষেত্রেই সেই ব্যাটন উঠেছে সেই নেতার ছেলে বা মেয়ের হাতে। আর সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা সেই নেতার অন্যান্য আত্মীয়রা, বিশেষত ভাইপোরা থেকে গিয়েছেন খালি হাতেই।
দেশের রাজনীতিতে স্বজনপোষণ
তেলঙ্গলায় টিআরএস-এর হরিশ রাও থেকে মহারাষ্ট্রে রাজ ঠাকরে, তামিলনাড়ুতে মরন ভাইয়েরা, এমন কি পাঞ্জাবে মনপ্রীত বাদলও। তবে অজিত পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার এই দলে পড়েন না। পাওয়ার 'হাউসে'র মহীরূহের নাম শরদ হলেও কাকা ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এসে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তা প্রমাণ করে দিলেন অজিত পাওয়ার। যদিও এখনও অনেকের মনেই সন্দেহ রয়েছে যে শরদ পাওয়ারের সম্মতি ছাড়া অজিতের এই ভোলবদল হয়নি। তবে বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে শরদ পাওয়ারের দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
এনসিপিতে সুপ্রিয়ার উত্থান মেনে নেননি অজিত
এবং মেনে নেওয়াও যায়। কারণ ভারতের বাকি রাজনৈতিক পরিবারের মতো শরদও তাঁর মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেকে দলের মসনদে বসাতে সচেষ্ট হয়েছেন। যদিও অনেক এনসিপি নেতারাই জানেন যে সুপ্রিয়া যখন রাজনীতিতে আসেননি, তখন থেকেই দলের রাশ নিজের হাতে নিয়েছিলেন অজিত পাওয়ার। চলতি বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া লোকসভা নির্বাচনে নিজের মেয়ে সুপ্রিয়াকে জেতাতে শরদ তাঁর বারামতি আসনটি ছেড়ে দেন। অন্য দিকে অজিতের ছেলে পার্থকে জেতাতে সেরকম কোনও বড় পদক্ষেপ বা চেষ্টা শরদ দেখাননি।
'দল ও পরিবারে ভাঙন'
এদিকে ক্ষমতা হাসিলের লড়াইয়ে অজিত শরদ পাওয়ারকে পিছনে ফেলতেই এর প্রতিক্রিয়া দেন সুপ্রিয়া সুলে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে অজিতের শপথ গ্রহণের ঘটনাতে হতাশ হয়ে দল ও পরিবারের ভাঙনের কথা বলে দেন শরদপুত্রী সুপ্রিয়া সুলে। শপথ গ্রহণের কিছুক্ষণের মধ্যেই সুলে নিজের হোয়াটস্যাপ স্টেটাসে লেখেন, "দল ও পরিবারের বাঁটোয়ারা হল।"
রাজ্য রাজনীতিতেই অজিতের উত্থান
১৯৯১ সালে কিছু সময়ের জন্য সাংসদ ছিলেন। তবে অজিতের প্রকৃত রাজনৈতিক উত্থান বিধায়ক হিসেবে। শরদ পাওয়ার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর নানা দপ্তরে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে শরদ দল ছেড়ে এনসিপি তৈরি করলে তিনিও কাকার পথ অনুসরণ করেন। যদিও, রাজনীতির সাপ-লুডো বজায় রেখে সেই কংগ্রেসের হাত ধরেই মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন গড়ে এনসিপি। ৪০ বছর বয়সে কনিষ্ঠতম সদস্য হিসেবে বিলাসরাও দেশমুখের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন অজিত। সেচমন্ত্রী হন তিনি। টানা দশ বছর এই দপ্তরের ভার ছিল তাঁর হাতে। আজ অজিতের বিরুদ্ধে যে বিপুল অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তা এই সময়েই হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
অজিতের জেদি মানসিকতা
যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন তাঁরা বলেন, 'ওঁর জেদ মারাত্মক'। পাশাপাশি শীঘ্র সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হওয়ায় দলের অন্দরে বেশ প্রভাব তাঁর। ২০০৪ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও হতে পারেননি। তবে এই জেদই মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রীর পদে বসিয়েছিল তাঁকে। ২০১০-এর ডিসেম্বরে, জগন ভুজবলের বিদায়ের পর। পরিবারের শক্তঘাঁটি থেকে টানা ছ'বার বিধায়ক হওয়া অজিত সেপ্টেম্বরে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন ইডি তাঁর বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ তোলার পর। ২৫ হাজার কোটি টাকার এই সমবায় কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর কাকা শরদেরও।