বিক্ষোভকারীদের হামলা করতে দেখেও নীরব ছিল পুলিশ, জানালেন দিল্লির আক্রান্তরা
বিক্ষোভকারীদের হামলা করতে দেখেও নীরব ছিল পুলিশ, জানালেন দিল্লির আক্রান্তরা
দগ্ধ গাড়ির টুকরো, ভাঙা কাঁচ, পুড়ে যাওয়া বাড়ি–দোকান, পরিবারের সদস্যদের বুক ফাটা কান্না ও উত্তর–পূর্ব দিল্লির রাস্তা জুড়ে শুধুই ইঁট–পাথর। যা মনে করিয়ে দিচ্ছে সোমবার থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লির উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা। সোমবার থেকে উত্তর–পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন অংশে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে গোটা পরিস্থিতি হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই ঘটনায় কমপক্ষে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের ও ২০০ জনের ওপর আহত। মৌজপুর, জাফরাবাদ, চাঁদবাগ, যমুনা বিহার ও অন্যান্য জায়গা হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। বৃহস্পতিবার সাম্প্রদায়িক অশান্তি রুখতে এসব এলাকায় প্রচুর পরিমানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়াও কেন্দ্রীয় আধা–সামরিক বাহিনীর ৪৫ কোম্পানি মোতায়েন রয়েছে এলাকায়।
অথচ সোমবার এইসব এলাকা যখন হিংসায় জ্বলছিল, মানুষের দিকে যখন পাথর ছোঁড়া হচ্ছিল, মারা হচ্ছিল, খুন করা হচ্ছিল, যখন দোকানগুলিকে পেট্রোল ও বোম দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, গাড়িগুলিকে ভাঙচুর করে আগুন ধরানো হচ্ছিল সেই সময় দিল্লি পুলিশ অনুপস্থিত। যদিও ঘটনার জায়গা থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে দিল্লি পুলিশের সদর দপ্তর। সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি, আতঙ্ক স্থানীয়দের চোখে–মুখে। তবে প্রত্যেকেই একই কথা জানিয়েছেন যে যখন হিংসার ঘটনা ঘটছিল দিল্লি পুলিশ কিছুই করেনি।
পুলিশ শৌচালয়ে লুকিয়ে ছিল
ভজনাপুরাতে এক পেট্রোল পাম্পে হিংসার ঘটনা সৃষ্টিকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। তার আগে পেট্রোল পাম্পে থাকা সব নগদ নিয়ে নেয় তারা। পেট্রোল পাম্পের মালিককে তাঁরই এক বন্ধু বাঁচায়। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে সেই দিনের কথা বলতে গিয়ে তাঁরা জানান যে আচমকাই ১০-২০ জন আসে এবং লুঠপাট শুরু করে দেয়। তাঁরা বলেন, ‘ওই এলাকায় ২ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল কিন্তু সেখানে কোনও পুলিশই ছিল না। চারজন পুলিশ শৌচালয়ে লুকিয়ে ছিল। অন্যরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।' স্থানীয়রা জানান যে তাঁরা যখন পুলিশকে এই বিক্ষোভকারীদের থামানোর জন্য বলছিল তখন পুলিশ তাঁদের জানায় যে পদক্ষেপ করার জন্য পুলিশের কাছে নির্দেশ নেই। স্থানীয়রা বলেন, ‘পুলিশ বলছিল যে যা তোমার করণীয় সেটা তুমি করো, যেটা ওরা করছে ওদের করতে দাও। পুলিশ আমাদের জানায় যে পদক্ষেপ করার জন্য তাদের কাছে আদেশ নেই।'
বিক্ষোভকারীদের তুলনায় সংখ্যায় কম পুলিশ
ভজনপুরার পাশেই যমুনা বিহারে এক ব্যক্তির রেস্তোরাঁ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনিও পুলিশের বিষয়ে একই কথা জানিয়েছেন। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘সোমবার আমার দোকানে হামলা করা হয়। বিক্ষোভকারীদের আসতে দেখে আমরা রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিই, শাটার নামিয়ে দেওয়া হয়, যাতে আমরা নিরাপদে থাকি। কিন্তু তারা পেট্রোল বোম ছুঁড়তে থাকে। অথচ সেখানে ৪০-৫০ জন পুলিশ কর্মী দাঁড়িয়ে ছিল।' তিনি আরও বলেন, ‘৪০-৫০ জন পুলিশ মিলে ২০০০ বিক্ষোভকারীকে রোধ করা অসম্ভব। আমরা বলেছিলাম যে যদি পুলিশ সংখ্যা কম হয় তবে অন্তত শূণ্যে গুলি ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের বিচ্ছিন্ন করুন। কিন্তু পুলিশ জানায় যে তাদের কাছে কোনও নির্দেশ নেই। যতক্ষণ না নির্দেশ আসবে তারা কিছুই করতে পারবে না।'
জনতাই যাঁতাকলে পিষছে
যমুনা বিহারে রেস্তোরাঁ পুড়ে যাওয়ার পর একেবারেই ভেঙে পড়েছেন রেস্তোরাঁর মালিক। তিনি জানান তাঁর পরিবারের সর্বস্ব ছিল এই রেস্তোরাঁ। তিনি বলেন, ‘কি করে আবার গড়ে তুলব? এতদিন যা ছিল সব এই রেস্তোরাঁর পেছনে ঢেলেছি। যা ওদের করার ছিল ওরা করেছে কিচ্ছু করতে পারেনি কেউ। নেতাদের আর কি, সকলে নিজের নিজের রুটি সেঁকতে ব্যস্ত, জনতা পিষছ।
চাঁদবাগে এক ব্যক্তি তাঁর পুড়ে যাওয়া বাড়ি ও ফলের দোকানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, চোখে জল তাঁর। তাঁর পরিবার ১৯৮২ সাল থেকে এখানে রয়েছেন আর এখন সেই সব স্মৃতি শুধুই ছাই হয়ে গিয়েছে। তিনি জানান এলাকায় শান্তি বজায়ের জন্য আরও বেশি পুলিশ মোতায়েন করা দরকার। এতকিছুর পরও তিনি এখানেই থাকতে চান। পেশায় ফল বিক্রেতা বলেন, ‘নেতারা মনে এত পরিমাণে বিষ ঢেলে দিয়েছেন যে কম হতেই চাইছে না।'
আশার আলো নেই, ৪.৫ শতাংশেই থমকে থাকবে তৃতীয় ত্রৈমাসিক জিডিপি বৃদ্ধি