মাঝরাতে মন্ত্রক অদলবদল মন্ত্রীদের, বাবুল পেলেন নগরোন্নয়ন
এই কথাই বারবার বলতেন নরেন্দ্র মোদীর ভক্তরা। বাস্তবে সেটাই তিনি করে দেখালেন। রাজনীতিতে যে যতই ঘনিষ্ঠ হোন, কাজ দেখাতে পারেননি গত পাঁচ মাসে, এমন ব্যক্তিদের মন্ত্রক হঠাৎ অদলবদল করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাও আবার আগে থেকে কাউকে কিছু না বলে, মাঝরাতে।
গতকাল দুপুরে ২১ জন নতুন মুখকে নিয়ে মন্ত্রীসভার আয়তন বাড়িয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কে কোন মন্ত্রক পেল, তা হাজারো চেষ্টা করেও তখন জানা যায়নি। পরে মালুম হল, কেন ব্যাপারটা গোপন রাখা হয়েছে। ব্যাপক অদলবদলের ভাবনা ছিল বলেই আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি।
যেমন, সুরেশ প্রভুকে তিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রী করেছেন। মাঝরাতে বলা হল, তিনি রেলমন্ত্রী হলেন। আর এতদিন যিনি রেলমন্ত্রী ছিলেন, সেই সদানন্দ গৌড়া ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে না পারায় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল আইন মন্ত্রকে। রবিশঙ্কর প্রসাদ ছিলেন আইন এবং যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের দায়িত্বে। তাঁর হাত থেকে আইন কেড়ে নেওয়া হল। এখন যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকই দেখবেন তিনি। নরেন্দ্র সিং তোমরের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হল শ্রম। তিনি শুধুই খনি ও ইস্পাত মন্ত্রকের দায়িত্বে রইলেন। নীতিন গড়করির হাত থেকে নিয়ে নেওয়া হল গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। পড়ে রইল সড়ক পরিবহণ ও জাহাজ।
তবে দু'-একজন মন্ত্রীর মন্ত্রক বদলের ক্ষেত্রে 'খারাপ পারফরম্যান্স' ইস্যু হয়নি। এঁদের বাড়তি কাজের বিষয়টি মাথায় রেখে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন অরুণ জেটলি। অর্থ ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব এতদিন একা সামলাচ্ছিলেন অরুণ জেটলি। এ বার থেকে শুধুই অর্থের পাশাপাশি তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক দেখভাল করবেন। অর্থ ও প্রতিরক্ষা, দু'টিতেই কাজের চাপ প্রবল। অসুস্থ জেটলি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। তাই অর্থের পাশাপাশি কম কাজ রয়েছে, এমন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। একইভাবে, দিল্লির আসন্ন বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রক নিয়ে হর্ষবর্ধনকে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। উদ্দেশ্য, ভোটের প্রচারে যাতে তিনি আরও বেশি সময় দিতে পারেন। কারণ দিল্লিতে বিজেপি জিতলে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
প্রসঙ্গত, মিডিয়ায় যে জল্পনা চলছিল, মনোহর পারিক্করের ক্ষেত্রে তা পরিষ্কার হয়েছে। তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়েছেন।
অন্যদিকে, মন্ত্রীসভায় বাংলার একমাত্র মুখ বাবুল সুপ্রিয়র ওপর প্রধানমন্ত্রী প্রভূত আস্থা দেখিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রমন্ত্রী হলেও তাঁকে নগরোন্নয়নের পাশাপাশি আবাসন ও দারিদ্র্য দূরীকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে বাংলার বিধানসভা ভোটকে বিজেপি পাখির চোখ করায় এখন বাবুলকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
যে ২১ জন গতকাল মন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন, তাঁরা কোন মন্ত্রক পেলেন, দেখে নেওয়া যাক:
ক্যাবিনেট মন্ত্রী
১.
মনোহর
পারিক্কর
-
প্রতিরক্ষা
২.
জগৎপ্রকাশ
নাড্ডা
-
স্বাস্থ্য
৩.
সুরেশ
প্রভু
-
রেল
মন্ত্রক
পেয়েই
শিবসেনা
ছেড়ে
বিজেপিতে
এলেন
ইনি।
৪.
চৌধুরী
বীরেন্দর
সিং
-
গ্রামোন্নয়ন,
পঞ্চায়েতি
রাজ,
পানীয়
জল
ও
পরিচ্ছন্নতা
রাষ্ট্রমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত)
৫.
রাজীবপ্রতাপ
রুডি
-
শিল্পোদ্যোগ
৬.
বন্দরু
দত্তাত্রেয়
-
শ্রম
ও
কর্মসংস্থান
৭.
মহেশ
শর্মা
-
সংস্কৃতি,
পর্যটন
রাষ্ট্রমন্ত্রী
৮.
বাবুল
সুপ্রিয়
-
নগরোন্নয়ন,
আবাসন
ও
দারিদ্র্য
দূরীকরণ
৯.
মুখতার
আব্বাস
নাকভি
-
সংখ্যালঘু,
সংসদ-বিষয়ক
১০.
রামকৃপাল
যাদব
-
পানীয়
জল
ও
পরিচ্ছন্নতা
১১.
হরিভাই
চৌধুরী
-
স্বরাষ্ট্র
১২.
সানওয়ারলাল
জাট
-
জলসম্পদ,
নদী
উন্নয়ন
ও
গঙ্গা
পুনরুজ্জীবন
১৩.
মোহন
কুন্দরিয়া
-
কৃষি
১৪.
গিরিরাজ
সিং
-
মাঝারি,
ক্ষুদ্র
ও
কুটির
শিল্প
১৫.
হংসরাজ
গঙ্গারাম
আহির
-
রাসায়নিক
ও
সার
১৬.
রামশঙ্কর
কাঠেরিয়া
-
মানবসম্পদ
উন্নয়ন
১৭.
ওয়াই
এস
চৌধুরী
-
বিজ্ঞান
ও
প্রযুক্তি,
ভূবিজ্ঞান
১৮.
জয়ন্ত
সিনহা
-
অর্থ
১৯.
রাজ্যবর্ধন
রাঠোর
-
তথ্য
ও
সম্প্রচার
২০.
নিরঞ্জন
জ্যোতি
-
খাদ্য
প্রক্রিয়াকরণ
২১.
বিজয়
সম্পলা
-
সামাজিক
ন্যায়
রদবদল ঘটল যাঁদের মন্ত্রকে
১. অরুণ জেটলি - প্রতিরক্ষা ছাড়লেন। রইল অর্থ। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের বাড়তি দায়িত্ব।
২. নীতিন গড়করি - গ্রামোন্নয়ন গেল। রইল সড়ক পরিবহণ ও জাহাজ।
৩. সদানন্দ গৌড়া - গেল রেল। হাতে পেলেন আইন মন্ত্রক।
৪. রবিশঙ্কর প্রসাদ - আইন ছাড়তে হল। রইল যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি।
৫. হর্ষবর্ধন - স্বাস্থ্য ছাড়তে হল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হল।
৬. নরেন্দ্র সিং তোমর - শ্রম ছেড়ে দিলেন। রইল শুধু খনি ও ইস্পাত।
৭. প্রকাশ জাভড়েকর - তথ্য ও সম্প্রচার চলে গেল। রইল শুধু বন ও পরিবেশ।