‘মানুষ মরছে আর আপনি বসে রয়েছেন?’ অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের তোপের মুখে কেন্দ্র
অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের তোপের মুখে কেন্দ্র
দেশের একাধিক রাজ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে অক্সিজেন, বেড ও ওষুধের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী দিল্লির প্রায় সব হাসপাতালই এই চরম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে বুধবার ফের দিল্লি হাইকোর্টের ক্ষোভের মুখে পড়তে হল কেন্দ্রকে। দিল্লি হাইকোর্টের পক্ষ থেকে কেন্দ্রকে প্রশ্ন করা হয়, 'দিল্লির মতো আর ক’টা রাজ্য রয়েছে যারা এ ধরনের অক্সিজেন ঘাটতির সম্মুখিন হয়েছে? মানুষ মরছে আর আপনি বসে রয়েছেন?’ প্রসঙ্গত, হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে দিল্লি একদিনও তার বরাদ্দের মেডিক্যাল অক্সিজেন পায়নি।
করোনা নিয়েই ভোটের ডিউটিতে আশাকর্মী, মালদহের ১৭০ নম্বর বুথে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা
কেন্দ্রের সমালোচনায় হাইকোর্ট
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দিল্লিকে ৪৯০ মেট্রিক টন মেডিক্যাল অক্সিজেন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে হাইকোর্ট বলেন, 'কি হল বরাদ্দ অক্সিজেন দেওয়ার? ৪৮০-৪৯০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল?' বরিষ্ঠ আইনজীবী রাহুল মেহরা একটি রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছেন যে দিল্লির দৈনিক সরবরাহ এক বা দু'দিনের মধ্যে ৪৯০ মেট্রিক টন ছোঁয়, তবে এক-একজন ব্যক্তির জন্য ১০-১২ এমটি অক্সিজেন আলাদাভাবে সরবরাহ করা যেতে পারে। তবে তিনি এও বলেন, 'সেটা নির্ভর করছে অক্সিজেন সরবরাহের ওপর।'
বরাদ্দ অক্সিজেন পায়নি দিল্লি
হাইকোর্টের পক্ষ থেকে এও লক্ষ্য করা হয় যে কেন্দ্র দিল্লিকে যে ৪৯০ এমটি অক্সিজেন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেই পরিমাণ অক্সিজেন দিল্লি একদিন মাত্র পেয়েছে। দিল্লিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা গ্যাস ট্যাঙ্কারগুলি সঠিক সময়ে হাসপাতালে না পৌঁছানো নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে হাইকোর্ট।
কেন্দ্র পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছে না
হাইকোর্টের বেঞ্চ জানিয়েছে, যে ৩ টি প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন সরবরাহ হওয়ার কথা ছিল তা অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গে এবং ওড়িশায়, যা দিল্লি থেকে ১৩০০-১৫০০ কিমি দূরে। তাহলে কেন পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা হচ্ছে না! প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। কেন্দ্রের রীতিমতো ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট বলে, 'আপনাকে এসওএস ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। খালি ট্যাঙ্কারগুলি বিমানে করে পাঠিয়ে দিন। একটা রাউন্ডের অক্সিজেনে পাঁচদিন চালান এটা আপনি বলতে পারেন না। আপনারা কেন কিছু করছেন না?' হাইকোর্টের এই প্রশ্নের জবাব হিসাবে অতিরিক্ত এসজি চেতন শর্মা বলেন, 'মানবিক হিসাবে যতটা করা সম্ভব ততটাই বাস্তব সময়ের মধ্যে করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত সমন্বয় রয়েছে। ফাঁক রয়েছে এমন কোনও ব্যাপার নেই।' যদিও বিচারপতি বিপিন সাংঘি ও রেখা পালির বেঞ্চ এই জবাবে সন্তুষ্ট হননি এবং তাঁর মন্তব্য করেন, 'পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।'
কোভিড চিকিৎসা প্রোটোকলে বদল আনার নির্দেশ
এর পাশাপাশি রেমডেসিভিরের ব্যবহার সম্পর্কে ও কোভিড ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল পরিবর্তন করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে হাইকোর্ট। এদিন ক্ষুব্ধ হয়ে ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করে, 'মনে হয় আপনারা আরও মানুষের মৃত্যু দেখতে চান'। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকার কোভিড চিকিৎসা নিয়ে একটি প্রোটোকলে জানিয়েছিল, যাঁরা অক্সিজেন ট্রিটমেন্টে রয়েছে, একমাত্র তাঁরাই রেমডেসিভির পাবেন। এই প্রসঙ্গে, দিল্লি হাইকোর্টের বিচারক প্রতিভা এম সিং বলেন, 'এটা ভুল হচ্ছে, সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দেখা হচ্ছে না। এখন যেভাবে অক্সিজেনের আকাল দেখা দিয়েছে, তাতে এই প্রোটোকল জারি থাকলে জীবনদায়ী ওষুধ রেমডেসিভিরও পাবেন না মানুষ! আপনি কি আরও মানুষের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন?'