ফিকে দুর্নীতির কলঙ্ক, কর্ণাটকে বিজেপিকে জয় এনে দিলেন জেল ফেরত এই বর্ষীয়ান নেতাই
দুর্নীতির কলঙ্ক সত্ত্বেও কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয় এনে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ইয়েদুরাপ্পা।
তাঁর বিরুদ্ধে ছিল দুর্নীতির অভিযোগ। এর জন্য তাঁকে একসময় জেলও খাটতে হয়। নির্বাচনের প্রচার পর্বে যা নিয়ে বারবার বিজেপিকে বিদ্ধ করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও তাঁর ওপরেই আস্থা রেখেছিল বিজেপি। তিনিই কর্ণাটক বিধানসভা ভারতীয় জনতা পার্টির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিলেন। তিনি বি এস ইয়েদুরাপ্পা। প্রচার পর্বেই দাবি করেছিলেন তিনি লিখে দিতে পারেন বিজেপিই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠা নিয়ে কর্ণাটকে ক্ষমতায় আসবে। বাস্তবে হলও তাই। এখনও সম্পুর্ণ ফল ঘোষণা না হলেও ২২৪ সদস্যের বিধানসভায় বিজেপিই যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কর্নাটকে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
ইয়েদুরাপ্পা বলেছিলেন তাঁর গণনা কখনো ভুল হয় না। বলেছিলেন বিজেপি ১২৫ থেকে ১৩০টি আসন পাবে। তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন আমি কর্নাটকের রাজনীতিতে আছি। আমি লিখে দিতে পারি, বিজেপি কর্ণাটক নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। ফলাফল ঘোষণার পর মিলিয়ে নেবেন।' বাস্তবে তাঁর প্রতিটি গননাই মিলে গিয়েছে। ফলের প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে বিজেপি একাই সরকার গড়তে চলেছে কর্ণাটকে। কংগ্রেস ও জনতা দল(সেকুলার) জোট করেও তাদের আটকাতে পারবে না।
দক্ষিণের এই রাজ্যে ইয়েদুরাপ্পার নেতৃত্বেই প্রথম পা রাখার সুযোগ পেয়েছিল বিজেপি। সেটা ২০০৮ সাল। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে জিতে তাঁর নেতৃত্বেই সরকার গড়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি এই বর্ষীয়ান নেতা। কারণ, সেই দুর্নীতির অভিযোগ। কী অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে? মূল অভিযোগ ছিল অবৈধ লৌহ আকরিক খনির কেলেঙ্কারিতে তিনি লিপ্ত। অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্তও করা হয়। ব্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল জেলে থাকতে হয় ২০ দিনেরও বেশি।
এরমধ্যে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে না, এই অভিযোগে ইয়েদুরাপ্পা নিজের আলাদা রাজনৈতিক দলও গঠন করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন কর্ণাটক জনতা পার্টি। তবে ২০১৪ সালে আবার বিজেপির ঘরে ফেরেন তিনি। ২০১৬-র ফেব্রুয়ারীতে জনতা দল (সেকুলার)-এর সঙ্গে রাজ্য জোট সরকার গড়ে বিজেপি। জোটের শর্ত ছিল সরকার গঠনের পর প্রথম ২০ মাস ইয়েদুরাপ্পা কর্ণাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ করবেন, মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন জেডি(এস)-এর এইচ ডি কুমারাস্বামী। তারপর ইয়েদুরাপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু সময় এলে কুমারস্বামী সেই শর্ত মানতে অস্বীকার করেন। যার জেরে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় বিজেপি।
কিন্তু শত অভিযোগেও তাঁকে আটকাতে পারল না কংগ্রেস। আচকাতে পারলেন না সিদ্দারামাইয়া, রাহুল গান্ধী। এখনও সম্পূর্ণ ফল না বেরোলেও শিকারাপুরায় নিজের আসনেও অনেক এগিয়ে আছেন এই ৭৫ বছরের বিজেপি নেতা। কাজেই বিজেপি ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে ইয়েদুরাপ্পার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে ফিরে আসাটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।