শীর্ষস্থানীয় ১০ সংস্থাই মধুর বিশুদ্ধতা প্রমাণে ব্যর্থ! ভেজাল মধু কাণ্ডে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট
দেশের শীর্ষস্থানীয় ১৩টি সংস্থার মধ্যে ১০ সংস্থাই তাদের মধুর বিশুদ্ধতা প্রমাণে ব্যর্থ
খাদ্য হোক বা ওষুধ, আন্তর্জাতিক বাজার ছেয়ে গেছে ভেজাল পণ্যে। এদিকে শীত পড়তেই প্রতিবারের মতো এবারও চাহিদা বেড়েছে মধুর। এমতাবস্থায় দেশীয় বাজারে যায় এমন একাধিক নামী-দামি সংস্থার 'বিশুদ্ধ' মধুই এইবার ব্যর্থ হল ভেজাল টেস্টে! আইনানুযায়ী, প্রায় ১৮টি মাপকাঠির ভিত্তিতে মধুর গুণগত মানের বিচার হয়। সম্প্রতি নানান মধু সংস্থার পণ্য বিচার করে সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই)-এর দাবি, অধিকাংশ পণ্যই তাদের বিশুদ্ধতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।
সিএসইর নজরে ১৩টি ব্র্যান্ড
ভারতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত আইনানুযায়ী, বিশুদ্ধ মধু হিসেবে বাজারজাত করার জন্য যে যে পরীক্ষা দরকার তাই গত কয়েকদিনে সংঘটিত হয় সিএসই-র তত্ত্বাবধানে। ডাবর, পতঞ্জলি, ঝান্ডু, বৈদ্যনাথ সহ প্রায় ১৩টি সংস্থার একাধিক মধু সাধারণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও জার্মানির গবেষণাগারে এনএমআর টেস্টে পাশ ব্যর্থ হয়। পাশ করে সাফোলা, মার্কফেড সোহনা ও নেচার্স নেকটার নামে তিনটি সংস্থার মধু। অন্তর্দেশীয় বাজারের জন্য এনএমআর টেস্ট প্রয়োজনীয় না হলেও রপ্তানির জন্য এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক বলে জানান আধিকারিকরা।
বিশুদ্ধ মধুতে চিনির সিরাপ!
সিএসইর তদন্ত কমিটির প্রধান অমিত খুরানা জানিয়েছেন, "মধুতে মিশ্রিত চিনির সিরাপ এমনভাবে তৈরি হয়েছে যাতে ভারতীয় পরীক্ষায় ধরা না পড়ে। কান্ড দেখে আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি।" তিনি আরও জানিয়েছেন, কিছু ভারতীয় সংস্থা চিন থেকে চিনির সিরাপ আমদানি করছে। অন্যদিকে ২০শে জুলাইয়ের একটি রিপোর্ট সামনে এনে চমকে দিয়েছে ডাবর। জার্মান সংস্থা ব্রুকারের এনএমআর টেস্টের রিপোর্ট বলছে, ডাবরের মধু ১০০ শতাংশই ভেজালহীন।
করোনা ঠেকাতে অক্ষম ভেজাল মধু
সিএসইর পরিচালন অধিকর্তা সুনিতা নারায়ণ আরও জানিয়েছেন, "করোনা ঠেকানোর জন্য আমরা যদি এই ভেজাল মধু খাই, তাতে আখেড়ে কোনও লাভই হবে না।" তাঁর মতে, "পরীক্ষায় সি৩ ও সি৪ সুগার সহজেই মধু হিসাবে পাশ করে গেলেও ট্রেস মার্কার পরীক্ষায় ধরা পড়ে যাচ্ছে এই সি৩ বা রাইস সুগার মিশ্রিত মধু।" সিএসই সূত্রে জানা গেছে, এনএমআর পরীক্ষায় ভেজাল ধরা গেলেও ভেজালের পরিমাণ জানা সম্ভব নয়।
জাল হওয়া সত্ত্বেও কী দেশের নিয়ন্ত্রক বোর্ডে ছাড়ল পেল ভেজাল মধু ?
এদিকে সিএসইর তরফে আরও জানান হয়েছে, উত্তরাখণ্ডের জাসপুরে এই জাতীয় চিনির সিরাপ তৈরির কারখানার হদিস মিলেছে। চিনা প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এই কারখানা তৈরি করা হয়েছিল। আধিকারিকদের বক্তব্য, এই সিরাপ যেসকল মধুতে মেশানো হয়েছে, সেই পণ্যগুলি এফএসএসএআইয়ের তরফে সহজেই বিশুদ্ধতার তকমা পেয়েছে, যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ সকলেরই। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুগার সিরাপ মিশ্রিত মধুর মূল্য বিশুদ্ধ মধুর প্রায় অর্ধেক, আর তাতেই স্বাভাবিকভাবে মার খাচ্ছেন মধুআরোহণকারী থেকে বিশুদ্ধ মধুবিক্রেতা, প্রত্যেকেই।
প্রতীকী ছবি
পরিযায়ী পাখি ও ইতিহাসের টানে গাজলডোবায় বাড়ছে পর্যটকের ভিড়