পুলিশ একটু সক্রিয় হলে আমার মেয়েটা বেঁচে যেত, আফশোস শ্রদ্ধার বাবার
পুলিশ একটু সক্রিয় হলে আমার মেয়েটা বেঁচে যেত, আফশোস শ্রদ্ধার ববার
২০২০ সালের নভেম্বরে শ্রদ্ধা ওয়াকার মহারাষ্ট্রের পালঘরের তুলিঞ্জ থানায় আফতাব পুনওয়ালার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, আফতাব তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করে তাঁর শরীর টুকরো টুকরো করতে পারে। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেও শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ ওয়াকার পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ তাঁর মেয়ের অভিযোগ একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখলে, আজ শ্রদ্ধা বেঁচে থাকত।
পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রীয়তার অভিযোগ
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ ওয়াকার বলেন, মেয়ের আফতাবের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি অভিযোগ করেন, 'পুলিশের গাফিলতির জন্য আজ মেয়ের এই পরিণতি হয়েছে। পুলিশ যদি এই ধরনের কোনও অভিযোগ পেয়েই থাকেন, তাহলে আমাকে কেন ফোন করল না? আমাকে কেন এই বিষয়ে কিছু জানাল না?' তিনি বলেন, মেয়ে আতঙ্কে দিন কাটাতো। এটা ভেবেই তাঁর কষ্ট হচ্ছে। শ্রদ্ধার আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয়, যখন দিল্লি পুলিশ ১২ নভেম্বর আফতাব পুনওয়ালাকে গ্রেফতার করে। আফতার নিজের দোষ স্বীকার করে জানায়, সে শ্রদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। তারপর তার দেহ ৩৫টি টুকরো করে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে।
অভিযোগে কী আশঙ্কা করেছিলেন শ্রদ্ধা
জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর শ্রদ্ধা নিজের হাতে লেখা একটি চিঠিতে মহারাষ্ট্রের পালঘরের তুলিঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তিনি বলেন, আফতাব তাঁকে মারধর করে। সব সময় মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আফতাবের পরিবার এই বিষয়ে সমস্ত কিছু জানে। কিন্তু শ্রদ্ধা অভিযোগ জানানোর কয়েকদিন পরেই তা তুলে নেন। তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে আফতাবের আর কোনও সমস্যা নেই। আফতাবের পারিবারের মধ্যস্থতায় আলোচনায় সব মিটে গিয়েছে।
আফতাবের মারে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়
করণ নামের এক বন্ধুকে হোয়াটস অ্যাপে লম্বা মেসেজ করে নিজের আতঙ্কের কথা লিখেছিলেন। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, 'আজকে আমাকে আফতাব শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। সে আমাকে সব সময় ভয় দেখায়। সে আমাকে খুন করে দেবে বলে ব্ল্যাক মেইল করে। আফতাব আমাকে ছয় মাস ধরে মারধর করছে। কিন্তু এতদিন আমার পুলিশের কাছে যাওয়ার সাহস ছিল না। সে আমাকে হুমকি দিয়েছিল, পুলিশের কাছে গেলেই আমাকে মেরে ফেলবে।' শ্রদ্ধা করণকে একটি সেলফি পাঠিয়েছিল, সেখানে আফতাবের মারে তার ক্ষতবিক্ষত মুখ ছিল। আফতাবের মারে এতটাই শ্রদ্ধা অসুস্থ হয়েছিলেন যে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। সাতদিন পর তিনি ছুটি পেয়েছিলেন।
মারধরের পরেও সম্পর্কে ছিলেন শ্রদ্ধা
একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে শ্রদ্ধার সঙ্গে আফতাবের পরিচয় হয়। ২০১৯ সালে তাঁরা পারস্পরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০২০ সালে তিনি বন্ধুকে নিজের আতঙ্কের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এত মারধরের পরেও শ্রদ্ধা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যায়নি। বরং ২০২২ সালে তাঁরা কল সেন্টারের একটি চাকরি নিয়ে দিল্লিতে চলে যান। দিল্লি যাওয়ার চার দিনের মধ্যেই যে ভাবে আফতাব শ্রদ্ধাকে হুমকি দিত, সেই ভাবেই হত্যা করে। আফতাব শ্রদ্ধাকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর তার শরীরের ৩৫টি টুকরো করে। শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর পরিবারের যোগাযোগ ছিল না। কারণ তাঁরা এই সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেননি।
আমাকে খুন করে টুকরো টুকরো করে দেবে, পুলিশে আফতাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন শ্রদ্ধা