রাহুলকে জোটে ব্রাত্য রাখা মস্ত কৌশল লোকসভা নির্বাচনে, উত্তরপ্রদেশে এবার ‘অন্য’ অঙ্ক
‘হাত’ ছাড়াই লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে জোট গড়ে ফেললেন পিসি-ভাইপো জুটি। তাঁরা বিজেপিকে হারানোর পরিকল্পনায় কংগ্রেসকে নিয়ে কোনও লাভ নেই বলে জানিয়েছেন।
উত্তরপ্রদেশে ধাক্কা খেল মহাজোট। 'হাত' ছাড়াই লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে জোট গড়ে ফেললেন পিসি-ভাইপো জুটি। তাঁরা বিজেপিকে হারানোর পরিকল্পনায় কংগ্রেসকে নিয়ে কোনও লাভ নেই বলে জানিয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী উত্তরপ্রদেশে ফের এককভাবে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই অবস্থায় কংগ্রেসকে জোটের বাইরে রাখা পরিকল্পনার অঙ্গ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মহাজোটের প্রত্যাখ্যান ধাক্কা নয়
কংগ্রেসও এই মহাজোটের প্রত্যাখ্যানকে ধাক্কা হিসেবে মনে করছে না। রাজনৈতিক মহলের বৃহত্তর অংশের যুক্তি, এটা বিরোধীদের কাছে আশীর্বাদ হতে পারে। কারণ এই প্রত্যাখ্যানে আখেরে লাভ হবে কংগ্রেসের। যদিও আদতে মনে হচ্ছে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী না হলে তো বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাবে!
কংগ্রেস একা লড়লে আখেরে লাভ
কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা নেই। কারণ এ রাজ্যে ভোট ভাগাভাগি হয় জাতপাতের ভিত্তিতে। সেই জাতপাতের অঙ্কে কংগ্রেস একা লড়লে আখেরে লাভ হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সমাজবাদী পার্টি বা বহুজন সমাজবাদী পার্টি, এমনকী কংগ্রেসেরও অভিমত তা-ই।
কোন অঙ্কে বিরোধীরা লাভবান
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, উত্তরপ্রদেশে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে মূলত সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে। উত্তরপ্রদেশে সপা মুসলিম পার্টি বলেই খ্যাত। আর দলিত, জাঠ ভোট রয়েছে বহুজন সমাজবাদী পার্টির দখলে। আর উচ্চবর্ণের ভোট পায় বিজেপি ও কংগ্রেস। কংগ্রেস জোটে গেলে সেই ভোট আসে না বাক্সে। এককভাবে লড়লে উচ্চবর্ণের ভোট কেটে যাবে বিজেপির। আর মুসলিম-দলিত ভোটও থাকছে যে যার দিকে।
বিধানসভা ভোট থেকে শিক্ষা
উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে আগে জোট হয়েছিল কংগ্রেসের। গত বিধানসভা নির্বাচনে বুমেরাং হয় সেই জোট। বিজেপি বিপুলভাবে জিতে ক্ষমতায় আসে উত্তরপ্রদেশে। সেবার দেখা যায় জোট করে কোনও লাভ হয়নি। তার কারণ সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট করায় কংগ্রেসের উচ্চবর্ণের সব ভোট চলে যায় বিজেপিতে। ফলে কংগ্রেসের ভোট কমে যায়। কোনও লাভই হয় না জোট করে।
বিজেপির ভোটে থাবা
কংগ্রেস ২০০৯-এ একা লড়ে ২১টি আসনে জিতেছিল। ২০১৪ সালে সেখানে ভরাডুবি হয় প্রবল মোদী হাওয়ায়। কিন্তু এবার সেই হাওয়া স্তিমিত। উল্টে বিরোধীদের দিকেই ঢলে পড়েছে দেশের ভবিষ্যৎ। এই অবস্থায় কংগ্রেস ফের উত্তরপ্রদেশে ২০০৯-এর মতো লড়াই দিতে পারে। তারপর অখিলেশ-মায়াবতী এক জোট হওয়ায় নিজেদের গড়েও বিজেপির জেতার সম্ভাবনা কমে যাবে। এমনই গতিপ্রকৃতি দেখা গিয়েছে বিগত উপনির্বাচনগুলিতে।
জোটে নেই, সমাঝোতায় আছে কংগ্রেস
অর্থাৎ একটা জিনিস পরিষ্কার কংগ্রেস পিসি-ভাইপোর মহাজোটে না থাকলেও তলায় তলায় কৌশলগত সমাঝেতা রয়েছেই। রাজনৈতিক মহল মনে করছে এটা কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির পরিকল্পনা অঙ্গ। কংগ্রেস স্থির করেছে, ৮০টি আসনে প্রার্থী না দিলেও, ৬০-৬৫টি আসনে তাঁরা লড়তে পারেন। কংগ্রেস চাইবে না কিছুতেই মহাজোটের ক্ষতি হোক। জাতপাতের ভোট-অঙ্ক হিসেব করেই কংগ্রেস এবার এগোবে উত্তরপ্রদেশে।