হিন্দি সিনেমার কায়দায় সরিষায় শ্যুট-আউট, এসএসবির অভিযানে নিহত ১
এমন টান-টান এক শ্যুট-আউটের ঘটনাস্থল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সরিষা। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতেই আস্তে আস্তে এই শ্যুট আউটের উপর থেকে পর্দা সরে।
এ যেন সাক্ষাৎ হিন্দি সিনেমার কোনও প্লট। একটি বাড়ির নিচে থাকা অফিসঘরে ধুন্ধুমারকাণ্ড। কিছুক্ষণ আগেই কয়েক জন গুন্ডা প্রকৃতির লোক ঘিরে ফেলে মারধর করছিল দু'জনকে। কিন্তু, মার খাওয়া দু'জন পাল্টা প্রতিরোধ করতে দৌড় ওই গুন্ডাদের। অফিসের মেঝের উপরে পড়ে রয়েছে এক জনের রক্তাক্ত দেহ। অব্যর্থ নিশানায় গুলি তার মাথা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। যাঁদের এতক্ষণ ধরে মারধর করা হচ্ছিল তাঁদের এমন রণংদেহী মূর্তিতে তখন অফিসের ভিতরে থাকা তিন জনের থরহরি কম্প। এরা পালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাননি। মার খাওয়া দু'জনের মধ্যে একজন আবার আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পালাতে থাকা গুন্ডা দলটির পিছনে ধাওয়া করে। এলাকা জুড়ে তখন হুলুস্থুল অবস্থা। মানুষ বুঝে পাচ্ছে না হচ্ছেটা কী? স্থানীয়রা প্রাথমিকভাবে অনুমান করেছিলেন দুই দুষ্কৃতী দলের মারামারি। এমন ঘটনা এলাকায় খুব একটা অপরিচিত নয়।
এমন টান-টান এক শ্যুট-আউটের ঘটনাস্থল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সরিষা। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতেই আস্তে আস্তে এই শ্যুট আউটের উপর থেকে পর্দা সরে। জানা যায়, যে দু'জন বন্দুকবাজকে দেখা গিয়েছিল আসলে তাঁরা এসএসবি অফিসার। মানে সরকারি নিরাপত্তা সংস্থার অফিসার। তাঁরা সরিষার এই এলাকায় অভিযানে এসেছিলেন। আর সেইখানেই এই শ্যুট আউটের ঘটনা।
ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশও জানায়, এসএসবি-র কাছে খবর ছিল সরিষার এই অফিসে প্রচুর পরিমাণে বাতিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট রাখা আছে। সরিষার এই অফিসটা কেবল অপারেটরের দফতর বলে চালানো হলেও এর আড়ালে চলে অন্ধকার ব্যবসা। কেবল অফিসের কেষ্ট-বিষ্টুরা বাতিল নোট বদলে চালু নোট পাওয়ার চেষ্টা করছিল বলেও খবর ছিল সরকারি নিরাপত্তা এজেন্সির কাছে। পরিকল্পনা মোতাবেক এসএসবি-র দুই অফিসার বাতিল নোট বদলের এজেন্ট সেজে সরিষার এই কেবল অফিসে ঢোকেন। সেখানেই কেবল অফিসের প্রধান আলতাফ জামাদারের সঙ্গে কথা হয়। এজেন্ট সেজে থাকা এসএসবি-র অফিসাররা ১০০০ টাকার বিনিময়ে ৮০০ টাকার চালু নোট দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। জানা গিয়েছে এই আলোচনার মধ্যে আলতাফ এবং তার দলের সঙ্গে বচসা বাধে এসএসবি-র অফিসারদের। জানা গিয়েছে, আলতাফ এই কেবল অফিস থেকে বেআইনি ব্যবসা চালাত আর তাকে এই কাজে সাহায্য করত বাড়িরই মালিক মোজ্জামেল মণ্ডল। এসএসবি অফিসাররা যখন ওই কেবল অফিসে ঢুকেছিলেন তখনও সেখানে ছিল মোজ্জামেল। বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। এমনকী, আলতাফ ও মোজ্জামেলের নেতৃত্বে তাদের লোকজন দুই এসএসবি অফিসারকে মারধর শুরু করে। এসএসবি অফিসারদের আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা চলে। এই সময় বেগতিক দেখে এসএসবি অফিসাররা গুলি চালান। পাল্টা আলতাফ এবং তার লোকজনও গুলি চালায় বলে অভিযোগ। কিন্তু, এক এসএসবি অফিসারের গুলি আলতাফের মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় করতেই দুষ্কৃতী দল রণে ভঙ্গ দেয়।
ডায়মন্ড হারবার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মোজ্জামেল মণ্ডল-সহ চার জনকে গ্রেফতার করে। এসএসবি আগে থেকে এই অভিযান নিয়ে জেলা পুলিশকে কোনও তথ্য দেয়নি। যার ফলে পুলিশ আগে থেকে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসএসবি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাল্টা এফআইআর দায়ের করেছে এসএসবিও।