এক সময়ে মডেল বলা হচ্ছিল যে রাজ্যের রাজনীতিকে, সেই কর্নাটকেই এখন জোট সরকারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার
কর্নাটকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ ঘোরালো হয়ে উঠছে প্রতিদিন। রাজ্যের কংগ্রেস-জনতা দল (সেকিউলার)-এর জোট সরকার টলমল করছে। যে কোনও মুহূর্তে ভূপাতিত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যদিও মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, রা
কর্নাটকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ ঘোরালো হয়ে উঠছে প্রতিদিন। রাজ্যের কংগ্রেস-জনতা দল (সেকিউলার)-এর জোট সরকার টলমল করছে। যে কোনও মুহূর্তে ভূপাতিত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যদিও মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, রাজ্য বিধানসভার স্পিকার রমেশ কুমার আরও ছয়দিন সময় নিয়েছেন ইস্তফা দেওয়া ১৩জন বিধায়কের ইস্যুটি পর্যালোচনার জন্যে, কিন্তু বেসামাল কংগ্রেস-জেডিএস জোটের তাতে কতটা অস্বস্তি কাটবে তা বলা মুশকিল। বিজেপির দিকে অভিযোগ উঠেছে যে তারা এই সুযোগে বিধায়ক নিজেদের দিকে টানছে যাতে রাজ্যের শাসনদণ্ডটি তাদের হাতে চলে আসে, কিন্তু গেরুয়া শিবির প্রকাশ্যে তা অস্বীকার করেছে।
নিজেদের সমস্যা সত্ত্বেও বিজেপিকে দূরে রাখতে জোট বাঁধা হয়েছিল
মজার ঘটনা, গত বছর কর্নাটক নির্বাচনে কংগ্রেস এবং জেডিএস হাত মেলায় বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে, যদিও তাদের নিজেদের মধ্যেই সম্পর্কও ছিল যথেষ্ট নড়বড়ে। রাজ্যের 'ওল্ড মাইসোর' অঞ্চলে তো কংগ্রেস এবং জেডিএস-এর দ্বন্দ্বের কথা তো সবাই জানে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও একসময়ে জেডিএস থেকে কংগ্রেসে আসেন বিক্ষুব্ধ মন নিয়ে। বিজেপি নির্বাচনে বৃহত্তম দল হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ না হওয়াতে কংগ্রেস এবং জেডিএস হাত মিলিয়ে কোনওক্রমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেরিয়ে সরকার গঠন করে, যদিও প্রথম দিন থেকেই সেই সরকার নড়বড়ে।
কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় কংগ্রেসের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে
তার সবচেয়ে বড় কারণ জেডিএস-এর হাতে মুখ্যমন্ত্রীত্ব যাওয়া। ২২৪ সদস্যের বিধানসভায় সবচেয়ে কম আসন পেয়েছিল তারাই কিন্তু তবুও তাদের নেতা এইচ ডি কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হন এবং তাতে অনেক বেশি আসন পাওয়া কংগ্রেসের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
লোকসভা নির্বাচনে বিশ্রী পরাজয় জোটের ভিতকে আরও নড়বড়ে করে দিয়েছে
এরপর আসে লোকসভা নির্বাচন। কর্নাটকের এই জোটকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদী-বিরোধীরা সারাদেশেও এমন জোট করে বিজেপিকে হারানোর এক মডেলের উপরে জোর দেন, কিন্তু বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলনই ঘটেনি। কুমারস্বামীর শপথগ্রহণে বিভিন্ন মোদী-বিরোধী নেতারা এক মঞ্চে এলেও তা নেহাত প্রতীকী সাফল্য হয়েই রয়ে গিয়েছে। আর লোকসভা নির্বাচনে গো-হারা হারের পর যখন দেশ জুড়ে বিরোধীদের মধ্যে মহা ভাঙন দেখা দিয়েছে, তখন কর্নাটকের মডেলেরও প্রায় ভেসে যাওয়ার জোগাড়। কুমারস্বামী মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন মন্ত্রিসভা ফের সাজিয়ে বিক্ষুব্ধদের ঘরে টানতে, কিন্তু প্রবল মোদী হাওয়ায় তা কদ্দূর সফল হবে তা বলা মুশকিল। পাশাপাশি, যাঁরা নতুন ব্যবস্থাতেও লোভনীয় পদ পাবেন না, তাঁদের ধরে রাখাও হবে চ্যালেঞ্জ।
লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণের এই রাজ্যে বিজেপি ২৮টির মধ্যে ২৫টি আসন পায়, যার ফলে কোন কংগ্রেস-জেডিএস নীতিগতভাবে আরও চাপে পড়েছে।
রাহুল গান্ধী সরে দাঁড়ানোতে সমস্যা আরও বেড়েছে
কংগ্রেসের মূল সমস্যা এই মুহূর্তে তাদের নেতৃত্বহীনতা। রাহুল গান্ধী দলের অধ্যক্ষের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে রাজ্যস্তরের খেয়োখেয়ি আরও প্রকট হয়েছে। কংগ্রেসের ডুবন্ত অবস্থা নিয়ে তার সদস্যদের এমন অনিশ্চয়তা যে তাঁরা এখন নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে দিশেহারা। এমন অবস্থায় কর্নাটকের জোট সরকারের ভবিষ্যৎ কী, তা সহজেই অনুমেয়।