বিশ্ব পরিবেশ দিবসে রোহটাং পাসের ক্রমবর্ধমান দূষণের পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে, রোহটাং পাসের দূষণের পরিমাণ বৃদ্ধি ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
মঙ্গলবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ভারত এবছরের পরিবেশ দিবসের হোস্ট কান্ট্রি। পরিবেশ রক্ষা নিয়ে এই সচেতনতার দিনটিতেই প্রশ্ন উঠেছে হিমাচল প্রদেশের রোহটাং পাসের ভয়াবহ দূষণ নিয়ে। পর্যটকরা বেড়াতে গিয়ে যে খাবারের প্যাকেট, জলের প্লাস্টিকের বোতল, বিয়ারের ক্যান ফেলে আসছেন তা দিনের পর দিন রয়ে যাচ্ছে বরফে ঢাকা এই প্রান্তরে।
হিমালয়ের পীর পঞ্জল পর্বতমালার এই অংশের ব্যাপক ঠান্ডায় সেসব পরিষ্কার করাও অত্যন্ত চ্যালেঞঅজের। অথচ, এখানকার হিমবাহগুলিই উত্তর ভারতের অন্যতমম প্রধান নদী বিপাশা এবং তার উপনদীগুলির উৎপত্তি। কাজেই সেসব আবর্জনার দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে একটা বিস্তৃর্ণ অংশে। পর্যটক থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ সবারই অভিযোগের আঙুল স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দিকে। অভিযোগ পরিবেশ নিয়ে তাদের অন্তত কোনও উদ্বেগ নেই।
১৮৩৯ সালের ৭ জুলাই প্রথম এ অঞ্চলে পা পড়েছিল মানুষের। পাঞ্জাবের নদীগুলির উত্স সন্ধান করতে লেফটেন্যান্ট এ ব্রুম এবং এ কানিংহাম রোহটাং পাসে এসেছিলেন। তারপর থেকে মানালি শহর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরের ১৩ হাজার ৫০ ফুট উচ্চতার এই গিরিখাতটি পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে। ভারী তুষারপাতের কারণে প্রতিবছর পাঁচ মাসেরও বেশি সময় দেশের বাকি অংশের থেকে এ অঞ্চল বিচ্ছিন্ন থাকলেও বাকি সময়টায় এখানে দেশী-বিদেশী পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। রাজ্যের পর্যটন বিভাগের হিসাবে প্রতি বছর প্রায় 11 লক্ষ মানুষ আসেন রোহটাং পাসে।
তাদের ফেলে আসা খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিক, প্লাস্টিকের বোতল হিমবাহের মাধ্য়মে গিয়ে মিশছে নদীখাতে। দূষণ বাড়তে বাড়তে এখন এতটাই খারাপ অবস্থা যে পর্যটকরাও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। মারহির কাছে হিমবাহ গলে শুরু হয়েছে বিপাশা নদী। অনেক পর্যটকই সেখানে বেড়াতে গিয়ে দেখেছেন নদীখাতে কী বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিকের বোতল এবং খাবারের প্যাকেট জড়ো হয়েছে। তাঁদের অনেকের কাছেই দৃশ্যটা রীতিমতো ভয় ধরানোর মতো। তবে তাঁরা এরজন্য পর্যটকদের থেকেও বেশি দুষছেন প্রশাসনকে। তাঁরা বলছেন নন-বায়ো ডিগ্রেডেবল জিনিস নিয়ে রোহটাং পাসে পর্যটকদের উঠতেই দেওয়া উচিত নয়। এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন। শুধু রোহটাং পাসই নয়, তাঁদের মতে সরকারের উচিত সমগ্র হিমালয়কেই 'লিটার ফ্রি জোন' বা আবর্জনামুক্ত এলাকা ঘোষণা করা।
রাখছে না। "মনে হচ্ছে রোহিংগ পাহাড়গুলি দ্রুত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আবর্জনা ডাম্প হয়ে উঠছে কারণ এক পরিত্যক্ত পোশাক, খাদ্য প্যাকেট, বিয়ারের ক্যানস, এবং প্লাস্টিকের বোতলগুলি এখানে ও সেখানে ছড়িয়ে পড়ে"।
প্রতি বছর অবশ্য পাহাড় ও নদীখাত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু কদিন বাদেই অবস্থাটা আবার যে কে সেই হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি বছরে একবার পরিষ্কার করাটা কোনও সমাধান নয়। প্রশাসনকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্থায়ী পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল রোহটাং পাসে পর্যটকদের যানবাহন প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। প্রতিদিন ১২০০-র বেশি গাড়ি যেতে দেওয়া হয় না সেখানে। এ উদ্যোগ ভাল জানিয়েও তাঁদের দাবি এখানে 'সিউয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট' ও 'ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট' এর ব্যবস্থা করতে হবে। গুলাবার পর থেকে দূষণের জন্য কঠোর জরিমানারও পক্ষপাতি তাঁরা। স্থানীয় প্রশাসন মারহি ও রোহটাং পাসের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ এবং ড্রপ পয়েন্ট স্থাপন করেছে, কিন্তু পর্যটকরা সেসবের ধার ধারেন না বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
গত ১৮ মে থেকে রিভারফ্রন্ট ক্লিনিং ক্যাম্পেন শুরু করা হয়েছিল। আজ, ৫ তারিখ তা শেষ হবে। পরিবেশবিদরা বলছেন এ ধরণের প্রচারাভিযান যত করা হবে তত ভাল। পরিষ্কারের পাশাপাশি এধরণের প্রচারাভিযানে স্কুল ছাত্ররা অংশ নেওয়ায় সচেতনতাও বাড়বে।