শুধু সিএএ নয়, নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক কারণই বিক্ষোভের রূপ নিয়েছে
নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার পূর্বে অনুমান করতে পারেনি যে এটা নিয়ে দেশজুড়ে এত অশান্তির সৃষ্টি হবে এবং ক্ষয়ক্ষতি এতটাই হয়েছে যে এখন কেন্দ্র সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এমনটাই জানিয়েছেন খোদ বিজেপি সরকারের এক সদস্য।
ময়দানে নেমেছে বিজেপি
নতুন নাগরিকত্ব আইন ঘিরে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী পথে নেমেছে শুধু এই আইনটিকে তুলে দেওয়ার জন্য, যা বলছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, এই বিক্ষোভকে রোধ করা ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোদীর কাছে। এই আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ১২ জন। বিজেপি দলের কিছু নেতা জানিয়েছেন, পাল্টা ধাক্কা বিজেপি শাসিত সরকারের নেতাদের হতাশ করেছে। তাঁরা ভেবেছিল হয়ত মুসলিমদের দিক থেকে কিছুটা ক্ষোভ আসবে, কিন্তু গত দু'সপ্তাহ ধরে গোটা দেশে যা চলছে, তা কল্পনাও করেনি বিজেপি। এখন দল ও সরকার দু'পক্ষই এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জোট দল ও বিরোধীদের সাহায্য প্রার্থনা করছে। গত মাসের গোড়ার দিকে এই সিএএ পাশ হওয়ার পর থেকেই গোটা দেশের পরিস্থিতি বদল হয়ে যায়।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সঞ্জীব বলয়ান বলেন, ‘আমি বুঝতেই পারিনি যে এটা নিয়ে প্রতিবাদ হবে। শুধু আমি নয়, অন্য বিজেপি সাংসদরাও বুঝতে পারেনি যে এই ধরনের ক্ষোভ গোটা দেশজুড়ে দেখা যাবে।' যদিও সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে এটা বড় কোনও হুমকি না হলেও, ৬৯ বছরের মোদীর হাতের আঙুলে যাঁর কূটনীতি খেলা করে, তাঁর জনপ্রিয়তা কিছুটা হলেও কমেছে। যদিও বিজেপি সরকারের সামনে এখন লক্ষ্য ভারতের অর্থনীতিকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ ডলার ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে পৌঁছে দেওয়া। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে, অর্থনৈতিক মন্দা ও চাকরি হারানোর ক্ষোভই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে এসে পড়েছে।
বিজেপি সরকারের ব্যাখ্যা সিএএ নিয়ে
নতুন আইন নিয়ে অনেক মুসলিমের মনেই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় নাগরিকত্ব নথিতে সংখ্যালঘুদের হয়ত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে ফেলা হবে। এই ক্ষোভ থেকেই জন্ম নেয় বিক্ষোভের। পড়ুয়া, রাজনৈতিকবিদ এবং হিন্দু-মুসলিম সমাজ কর্মীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিয়ে জানানো হয়েছে, নাগরিকত্ব আইন কোনওভাবেই ভারতীয নাগরিকদের ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘আমরা ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করছি।' জানা গিয়েছে, বিজেপি এবং তাদের হিন্দু জোটগুলি নতুন আইন নিয়ে প্রচার শুরু করেছে এবং নুন আইন কোনওভাবেই বৈষম্যের সৃষ্টি করবে না তা আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে
স্টাডি অফ ডেভলপিং সোসাইটির ডিরেক্টর সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘এটাই প্রমাণ যে মানুষ এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে এবং মোদীর নেতৃত্বের স্বৈরাচারী রীতির বিরুদ্ধেও লড়াই করছে। উপরন্তু অর্থনৈতিক সংকটও এই প্রতিবাদে উৎসাহ দিচ্ছে। তাই আমার মনে হয় না এত শীঘ্র এই প্রতিবাদ থামবে।' প্রসঙ্গত, বরিষ্ঠ এই রাজনৈতিকবিদ এক চা বিক্রেতার ছেলে। সেখান থেকে নরেন্দ্র মোদী সাড়ে পাঁচ বছর আগে ক্ষমতায় এসে প্রতিশ্রুতি দেন দেশের বৃদ্ধি, চাকরি ও উন্নয়নের। কিন্তু মোদী তাঁর প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে এসেই নোটবন্দীর সিদ্ধান্ত নেন, যার ফলস্বরূপ দেশের অর্থনীতি একধাক্কায় অনেকটাই পড়ে যায়। যা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের পর দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসেন মোদী, কিন্তু আগস্টেই তিনি ফের এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা তাঁকে আবারও দেশবাসীর কাছে ভিলেন তৈরি করে দেয়। গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়া হয়। রোষের মুখে পড়ে মোদী সরকার। এরপরই নভেম্বরে অযোধ্যা মামলা, যা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রামমন্দিরের পক্ষে যায়। সরকার এই সিদ্ধান্তে খুশি হলেও, খুশি করতে পারে না দেশবাসীকে। এরপরই আবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। সবকিছু মিলিয়ে দেশবাসী তাঁদের সব ক্ষোভ একবারে উগরে দিয়েছেন।