সিএএ নিয়ে এবার বিজেপির উল্টো সুর নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়
নির্যাতিত মানুষদের প্রতি উদারতা দেখানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ভারতের, এবং বর্তমানে শুধু একটি মাত্র সম্প্রদায়ের প্রতি দয়ালু হওয়া উচিত নয়। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এমন মন্তব্যই করলেন নোবেল পদক বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন আইনে রোহিঙ্গা ও আহমাদিদেরও অন্তর্ভুক্তের দাবি তুললেন তিনি।
নতুন আইনে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি
নতুন লাগু হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের শর্ত, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বা তার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যে সমস্ত অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ, হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি বা জৈন ধর্মের যেই লোকেরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকে ভারতে বসবাস করেছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। বিলটি ৩১১-৮০ ব্যবধানে পাশ হয়। বুধবার রাজ্যসভায় এটি পাশ হয় ১২৫-৮২ ব্যবধানে। তবে আইনটি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাশ করলেও এটিকে বিভেদ সৃষ্টিকারী আখ্যা দিয়ে পথে নেমেছে বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন কেন মুসলিমদের বাদ দেওয়া হল এই আইন থেকে।
অভিজিতের বক্তব্য
২০১৯ সালেই অর্থনীতির জন্যে নোবেল পাওয়া অভিজিৎ বাবুরও একই প্রশ্ন। তিনি বলেন, 'এরা বেশিরভাগ দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষ। তারা জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। তারা সংখ্যালঘু। কেন আমরা তাদের প্রতি অসংবেদনশীল হব, তা আমি বুঝতে পারছি না। আমি বুঝতে পারি না যে কেন বেশিরভাগ ধনী এবং শিক্ষিত তাদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে না।'
বহিরাগতদের প্রতি উদার হওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস
এরপর তিনি আরও বলেন, 'আমাদের বহিরাগতদের প্রতি উদার হওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মধ্য প্রাচ্য থেকে আসা ইহুদিদের ট্র্যাভাঙ্কোর এবং কোচির রাজারা স্বাগত জানিয়েছিলেন। আমেরিকার মতো ভারতে সংখ্যালঘুরাও প্রভাবশালী হওয়ার কাছাকাছি কোথাও নেই। এ কারণেই আমি মনে করি যে মুসলমানরা ভারতে সংখ্যাগুরু হয়ে যাবে। এই ভয় ভিত্তিহীন।'
সিএএ বিরোধী প্রস্তাবনা পাশ বহু রাজ্যে
১২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে সই করেন রাষ্ট্রপতি। আর এর সাথেই আইনে পরিণত হয় সেটি। তবে এরই মাঝে এই সিএএ তাঁরা মানবেন না বলে জানিয়েছিলেন অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। কেরলের পিনরাই বিজয়ন ও পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো দাবি করেছেন যে তারা তাদের রাজ্যে সিএএ লাগু হতে দেবে না। কেরল, পাঞ্জাব, রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গ ইতিমধ্যেই তাদের বিধানসভায় পাশ করিয়েছে সিএএ বিরোধী রেজোলিউশন। এবার সেই পথেই হাঁটতে পারে মহারাষ্ট্রও।
বল গড়িয়েছে সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত
সিএএ বিরোধী রেজোলইউশন পাশ করেই রাজ্যগুলি থেমে থাকছে না। সিএএকে বিভেদ সৃষ্টিকারী আইন আখ্যা দিয়ে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেরল ও ছত্তিসগড় সরকার। নাগরিকত্ব আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে মামলা দায়ের করে কেরল সরকার। কেরল প্রথম রাজ্য যারা এই পদক্ষেপ নেয়। সংসদে সিএএ পাশ হওয়ার পরেই এই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে জমা পড়েছিল ৬০টি পৃথক আবেদন। সেই আবেদনগুলির ভিত্তিতেই আজ এক যৌথ শুনানি হয় সুপ্রিমকোর্টে। তবে ১৮ ডিসেম্বরের সেই শুনানিতে এই আইনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে শীর্ষ আদালত।