বিপুল ভোটে পরাজিত হল অনাস্থা প্রস্তাব, ভোট দিতে এলেন না বহু বিরোধী নেতাই
১২ ঘণ্টার বিতর্কের পর, লোকসভায় ধ্বনী এবং ডিভিশন ভোটে পরাজিত হল অনাস্থা প্রস্তাব।
সকাল ১১ থেকে রাত ১১ টা ১২ ঘন্টার অনাস্থা নাটকের যবনিকা পড়ল মোদী সরকারের ১৯৯ ভোটে আস্থা ভোট জয়ের মধ্য দিয়ে। এদিন শেষ অবধি মোট ৪৫১ জন সাংসদ ভোট দেন। তারমধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৬টি এবং সরকারের প্রতি আস্থা রাখেন ৩২৫ জন সাংসদ। ফলে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের পরাজয় হয়।
তার আগে অবশ্য স্পিকার সুমিত্রা মহাজন ধ্বনীভোটও নেন। তাতে তিনি ঘোষণা করেন জয় হয়েছে ট্রেজারি বেঞ্চের। তারপর হয় ডিভিশন ভোট। তাতে মোট ৪৫১ জন সাংসদ ভোট দেন। লোকসভার এইমুহূর্তে সদস্য সংখ্যা ৫৩৩। তারমধ্যে শিবসেনার ২৯ জন অনাস্থা ভোট ও আলোচনা দুটোই বয়কট করে। বিজেডি-র ১৯ জন বিধায়কও আলোচনা শুরু হতেই কক্ষত্যাগ করেন। আলোচনায় আগাগোড়া উপস্থিত থেকেও ভোট দেননি লোকতান্ত্রিক জন অধিকার পার্টির সাংসদ পাপ্পু যাদব।
অর্থাত আরও ৩৩ জন সাংসদ এদিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। আসলে বিরোধীদের মনোভাবে মনে হয়েছে অনাস্থা নিয়ে বিতর্কটাই তাদের কাছে মুখ্য ছিল, সরকারকে অনাস্থা প্রস্তাবে ফেলে দেওয়া যাবে, এটা কেউই মন থেকে বিশ্বাস করেননি। মাঝে একবার খবর রটেছিল, কংগ্রেস বিতর্ক শেষ করে ভোটের আগেই কক্ষত্যাগ করবে।
শেষ পর্যন্ত তা না ঘটলেও কংগ্রেস ও বিরোধীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাই আজ সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন। এমনকী ছিলেন না প্রাক্তন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ কমলনাথও। সংসদে আসার বদলে এদিন তিনি যান ভোপালে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে। সরাসরি আস্থা ভোটে লাভ নেই না বললেও, তিনি বলেন, তাঁর ৩৮ বছরের রাজনৈতিক জীবনে অনেক আস্থাভোট তিনি দেখেছেন। তারচেয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোকেই তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
এদিন অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন টিডিপি সাংসদ জয়দেব গালা। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিরুদ্ধে নৈতিকতার যুদ্ধ বলে সভার মেজাজটা টেনে দেন তিনি। তবে অনাস্থা নাটক চরমে পৌঁছায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর ভাষণের সময়। তাঁর রাফালে বিমান চুক্তি নিয়ে করা অভিযোগ যেমন ভারতের গন্ডি ছাড়িয়ে ফ্রান্স অবধি পৌঁছে গিয়েছে, তেমনই সোশ্যাল মিডিয়া চর্চায় মেতেছে তাঁর প্রধানমন্ত্রীকে লোকসভায় আলিঙ্গন করা ও তার পরে আসনে বসে চোখের ইশারা করা নিয়ে।
রাজনৈতিক মহলেও এনিয়ে চর্চা কম হয়নি। বিজেপির দিক থেকে যেমন একে রাজনৈতিক 'নাটক', 'শিশুপনা' বলে হয়েছে, তেমনই আবার কংগ্রেস শিবিড় রাহুলের বক্তৃতাকে 'ঐতিহাসিক' বলা হয়েছে। রাহুলের ওই ভাষণের পর সবার নজর ছিল মোদী কি বলেন তাই নিয়ে।
একঘন্টার কিছু বেশি সময় বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই সময়ে একদিকে যেমন তিনি ৪ বছরে তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন, আবার তা করতে গিয়েই রাহুলের প্রতিটি অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন। চোখের ইশারার বাচ্চাপনার কথা তুলে কটাক্ষ করেছেন। তুলেছেন পরিবারতন্ত্রের কথা। আবারো বলেছেন সার্জিকাল স্ট্রাইককে জুমলা স্ট্রাইক বলে কটাক্ষ করে দেশের জওয়ানদের অপমান করেছেন রাহুল বলে হুঙ্কার দিয়েছেন। রাফাল দেশের নিরাপত্তার বিষয়। তাই নিয়ে রাহুলের 'মিথ্যাচারের'-ও সমালোচনা করেছেন।
তবে এদিনের আলোচনা ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনকে অনেকটাই মোদী বনাম রাহুল-এ পরিণত করল। সারাদিনের অনেক নাটকের পর হাসতে হাসতেই হাউসের আস্থা জিতে নিল সরকার।