তেজস্বীর 'ভোট ব্যাঙ্ক সমীকরণ'-এর তেজে ম্লান নীতীশ, বিহারে পালাবদল সময়ের অপেক্ষা?
বিহারের ৭৪ শতাংশ জনগণ হল অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণী, তফসিলি জাতি এবং উপজাতি। প্রথম থেকেই জাত-পাতের নিরিখে রাজনীতির উপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল আরজেডি। দলিত রাজনীতি বিহারে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি থেকেও বড় ফ্যাক্টর। এবং এই সমীকরণকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন বিহারে বাজিমাত করেছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। এবার সেই একই সমীকরণে বিহার জয়ের লক্ষ্যে ময়দানে নেমেছেন তেজস্বী যাদব।
জঙ্গলরাজের ভয় কেটে গিয়েছে
এদিন বিহারের প্রথম দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এদিন বিহারের যেই এলাকায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে, সেখানে ১৯৮০ এবং ৯০-এর দশকে বারংবার আগুন জ্বলেছে জাতপাতের সংঘাতের জেরে। সেই আবহেই রাজনৈতিক ভাবে বিভেদও সৃষ্টি হয়েছিল দক্ষিণ বিহারের এই এলাকায়। এই এলাকায় যাদব, কুর্মী এবং মহাদলিতরাও রয়েছেন প্রচুর। এবং এবারের নির্বাচনে তাঁরাই হতে চলেছেন নির্ণায়ক ফ্যাক্টর। এবং এককালে জঙ্গলরাজের ভয়তে যেই ভাটোররা নীতীশকে ভোট দিতেন, তাঁরাই এবার ঝুঁকেছে তেজস্বীর দিকে।
পুরোনো ভোট ব্যাঙ্ক ফিরে পেয়েছে আরজেডি
এককালে এই দলিত ভোটাররা লালুপ্রসাদকে একচেটিয়া সমর্থন যুগিয়েছে। তবে পরে কুর্মী এবং মহাদলিতদের একাংশ নীতীশের দিকে ঝুঁকেছিল। তবে লালু-র জঙ্গলরাজের স্মৃতি এখন ঝাপসা। এই আবহে ফের পুরোনো সেই ভোট ব্যাঙ্ককে হাতিয়ার করে বাজিমাত করতে চাইছেন তেজস্বী যাদব। এবং সামপ্রতিক নির্বাচনী প্রচারে তেজস্বীর জনপ্রিয়তা দেখে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন যে আরজেডি তাদের পুরোনো ভোট ব্যাঙ্ক ফিরে পেতে চলেছে এই নির্বাচনে।
হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে
আজ যে ৭১ টি আসনে লড়াই হতে চলেছে তার মধ্যে ১২টি আসনে গত বিধানসভা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। এই আসনগুলি মধ্যে রয়েছে আরা, দিনারা, তারারি, ভাবুয়া, দেহরি, চেইনপুর, শেরঘাটি, রাজাউলি (তপসিলি জাতি), গোবিন্দপুর, বাঁকা, জামালপুর ও মুঙ্গের। এই ১২টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র তিনটি আসন। আটটি আসন জিতেছিল মহাজোট। এদিকে যে ১২টি আসনে গতবার হাড্ডাবাড্ডি লড়াই হয়েছিল, সেগুলির মধ্যে এবার বিজেপি ৮টিতে লড়ছে, অন্য ৪টিতে লড়ছে জেডিইউ।
দাপট হারিয়েছেন নীতীশ
২০০৫ সাল থেকে এই দক্ষিণ বিহার এলাকায় দাপটেখিয়ে এসেছে নীতীশের নেতৃত্বাধীন জেডিইউ। তবে এবার ভোটারদের মনে ১৫ বছরের একঘেয়ে অভ্যাস ছেড়ে বের হওয়ার একটি সুযোগ রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে আরজেডির পালে ফের মহাদলিতদের ভোটের হাওয়া লাগতে পারে। তাতে লোকসান হবে জেডিইউর। ২০১৫ সালে আলাদা সমীকরণে ভোট হয়েছিল। সেবারে আরজেডি-কংগ্রেস-জেডিইউ জট গঠন করেছিল। সেই ক্ষেত্রে এই বার এই এলাকার ভোট সমীকরণের উপর নজর সবার।
বহুমুখী লড়াই
প্রথম দফার ৭১টি আসনের মধ্যে ৪২টিতে প্রার্থী দিয়েছে আরজেডি। আর ২১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। অন্যদিকে জেডিইউ প্রার্থী দিয়েছে ৪১টি আসনে। আর বিজেপির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৯টি আসনে। এছাড়া চিরাগ পাসোয়ান, যিনি এবারের নির্বাচনে একলা চলার নীতি নিয়েছেন, তাঁর দল এলজেপি প্রার্থী দিয়েছে ৪১টি আসনে।
নীতীশের মন্ত্রিসভার আধ ডজন হেভিওয়েটের ভাগ্য নির্ধারণ
এদিকে প্রথম দফার ভোটে ময়দানে নামতে চলেছে নীতীশ কুমারের মন্ত্রিসভার আধ ডজন হেভিওয়েট। তালিকায় রয়েছেন কৃষ্ণনন্দন বর্মা, প্রেম কুমার, জয়কুমার সিং, সন্তোষকুমার নিরালা, বিজয় সিনহা এবং রামনারায়ণ মণ্ডলের মতো মন্ত্রীরা। নজর থাকবে ইমামগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের দিকেও। ইমামগঞ্জ কেন্দ্র থেকে এনডিএ-র হয়ে লড়াইয়ে নামছেন বিহারে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার প্রধান জিতনরাম মাঁঝি। মাঁঝিকে টক্কর দেওয়ার জন্য তেজস্বী ব্রিগেডের হয়ে ময়দানে নামছেন বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা বর্ষীয়ান দলিত নেতা উদয়নারায়ণ চৌধুরী।
তেজস্বী ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন...
এদিকে তেজস্বী ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন যে, বিধানসভা নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে মহাগঠবন্ধন। তিনি বলেন, বেকার যুব সম্প্রদায়কে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে তাঁর সরকারের প্রাথমিক কাজ। পাশাপাশি বিহারে ক্ষমতায় এলে কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী বিল বাতিল করা হবে বলে জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, ১৫ বছরে নীতীশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রীত্বে প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিহার অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
নীতীশ বিরোধিতায় নয়া সমীকরণ বিহারে, চিরাগের 'রিমোট কন্ট্রোল' প্রশান্ত কিশোরের হাতে