আর্থিক বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম টানাই সীতারমণের চ্যালেঞ্জ
শুক্রবার সংসদে এবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
শুক্রবার সংসদে এবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির মাত্রা বাড়ানো থেকে শুরু করে মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম টানা সহ যে যে ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে, তা দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
আর্থিক বৃদ্ধি
কেন্দ্রীয় সরকার যে দাবিই করুক, সমীক্ষা বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের জানুয়ারি থেকে মার্চ কোয়ার্টারে দেশের গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা জিডিপি গ্রোথ মাত্র ৫.৮ শতাংশ। যা দেশের গত পাঁচ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। একই কোয়ার্টারে ডিডিপি বৃদ্ধিতে চিন সব দেশকে টেক্কা দিয়েছে বলে সমীক্ষায় জানা গিয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের জানুয়ারি থেকে মার্চ কোয়ার্টারে জিডিপি গ্রোথ ৬.৪ শতাংশ বলে জানানো হয়েছে।
বেকারত্ব
সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি বা সিএমআইই-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত এক বছরে দেশে বেকারত্বের হার বেড়েছে ৮.১ শতাংশ। দেশের ৪৫ বছরের ইতিহাসে এমন নজির নেই বলেই জানানো হয়েছে।
বিনিয়োগ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের মূল স্লোগান 'সব কা সাথ, সব কা বিকাশ' হলেও সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি বা সিএমআইই-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত এক বছরে দেশের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের হার ১৫ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। ২০১৮-১৯ অর্থ বর্ষের এপ্রিল থেকে জুন কোয়ার্টারে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের হার গত বছরের তুলনায় ৮৭ শতাংশ নেমেছে বলে সিএমআইই-র রিপোর্টে বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, গত অর্থবর্ষে যেখানে ৩.৪ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, সেখানে এবছর তা কমিয়ে ৪৩৫০০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
কমেছে কোথায়
ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি বা সিএমআইই-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শেষ বেশ কয়েকটি কোয়ার্টারে দেশে গাড়ি বিক্রির হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। প্যাসেঞ্জার ভেহিকেলের ক্ষেত্রে ইয়ার-অন-ইয়ার ১৬ শতাংশ এবং টু-উইলারের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ বিক্রি হ্রাস পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস বা এফএমসিজি কোম্পানিগুলির গ্রোথও সাব-নরমাল বলেই সিএমআইই-র সমীক্ষা রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
কী করণীয়
ক) এই পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পেতে প্রথমে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির পুনরুজ্জীবন ঘটানো হবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের প্রথম কাজ।
খ) দেশের জমি অধিগ্রহণ নীতি এবং শ্রমিক আইন শিথিল করাও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এতে সরকারের প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়তে বাধ্য।
গ) দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে পরিকাঠামোগত সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটানো ভীষণ ভাবে প্রয়োজন। পরিচালন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নতুন নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকতে রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাঙ্কগুলিকে স্বশাসনের আওতায় আনতে হবে।
ঘ) যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বন্দর, হাইওয়ে এবং রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক।
ঙ) কর্পোরেট ট্যাক্স কাঠামো আরও গ্রহণযোগ্য করা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পেশ করা বাজেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত।
চ) আর্থিক বৃদ্ধিকে পুনরুজ্জীবিত করতে শহর ও গ্রামাঞ্চলে পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
ছ) সর্বোপরি ৫জি স্পেকট্রাম বিক্রি, ডিইনভেস্টমেন্ট এবং জিএসটি কালেকশন বৃদ্ধির উপরও জোর দিতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারকে।