নির্ভয়া গণধর্ষণ মামলা:২০১২ সালের বিভীষিকার রাত থেকে ২০২০-র ভোর! একনজরে টাইমলাইন
যে ঘটনার শুরু একটি রাতের অন্ধকারে , সেই ঘটনার সমাপ্তি আজ হয়েছে সূর্যোদয়ে। ২০১২ সালে রাজধানীর বুকে পাশবিকতার অন্তিম পর্যায়ে গিয়ে এক তরুণীর গণধর্ষণে নারকীয় উল্লাস চালায় ৬ জন। বিভীষিকা আরও চরমে ওঠে , যখন এদেশ জানতে পারে ওই ৬ জনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে এক নাবালকও! এরপর একের পর এক ঘটনা পরম্পরা। যে ঘটনার সূত্রপাত একটি বাসে, তার শেষ পরিণতি সম্পন্ন হল তিহারের ফাঁসির দড়িতে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক নির্ভয়া গণধর্ষণ মামলার টাইলাইন।
২০১২ সালের সেই বিভীষিকার রাত!
সেই রাতে 'লাইফ অফ পাই' ফিল্মটি দেখে ফিরছিলেন নির্ভয়া (নাম পাল্টে দেওয়া হয়েছে) ও তাঁর সঙ্গী। যা খুব একটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়! আর চার পাঁচজনের মতো তাঁরাও ফিল্ম দেখে নিজেজের মতো সময় উপভোগ করতে করতে ফিরছিলেন। ওঁরা ফিরছিলেন একটি বাসে। আর সেখানেই ঘটে যায় নারকীয় গণধর্ষণ। তরুণীর যৌনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে চলে ধর্ষকদের পাশবিক উল্লাস। যে উল্লাসে মেতে ওঠে এক ১৭ বছরের নাবালকও (মামলায় সে মুক্ত)।
১৩ দিনের লড়াই ও এক যুদ্ধের সূত্রপাত
অমানবিক এই অত্যাচার সহ্য করতে পারেনি ওই তরুণী। ততক্ষণে তাঁর সঙ্গে থাকা তরুণকে সেই রাতেই বাসের মধ্যে প্রবল মারধর করে দোষীরা। অসুস্থ হয়ে দুজনেই হাসপাতালে ভর্তি হন। এদিকে, মরণ বাঁচন লড়াই শুরু হয় নির্ভয়ার। ১৩ দিনের লড়াইতে ক্রমাগত সে মৃত্যু দিকে যেতে থাকে। এয়ারলিফ্ট করে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হলেও লাভের লাভ হয়নি। কারণ ধর্ষকরা তাঁর যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে ততদিনে তরুণীর অন্ত্রের নাড়ি পিষে দেয়। এর নারকীয়তা নিতে পারেনি তরুণীর শরীর। শেষে মৃত্যু হয় নির্ভয়ার। শুরু হয় তাঁর পরিবারের এক অন্য লড়াই।
দিল্লি পুলিশ ও গ্রেফতারি
মেয়ের মৃত্যুর শোক বুকে নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামেন নির্ভয়ার বাবা মা। গোটা দেশ তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হয় ভারত। দিল্লি পুলিশ তদন্তে নেমে গ্রেফতার করে ৬ অভিযুক্তকে। যাদের মধ্যে একজন নাবালক হওয়ার তাকে জুভেনাইলে পাঠানো হয়। অন্যদিকে আইনি লড়াই শুরু করে নির্ভয়ার পরিবার।
চার্জশিট ফাইল
আইনি প্রক্রিয়ায় শুরু হয় ৫ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠনের কাজ। ৫ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতির মতো অভিযোগ দায়ের করা হয়। সংগঠিত করা হয় যৌন অপরাধের জন্য ফাস্টট্র্যাক কোর্ট।
অভিযুক্তের আত্মহত্যা
এরপরবর্তীকালে ১১ মার্চ ২০১৩ সালে জেলের মধ্যে আত্মহত্যা করে অভিযুক্ত রাম সিং। যার পাঁচ মাস পরে , ৩১ অগাস্ট নাবালক হিসাবে প্রবেশন হোমে পাঠানো হয় । এরপর বাকি ৪ জনকে নিয়ে চলে আইনি লড়াই । যাদের সাজা দেওয়াই ছিল আসল লক্ষ্য নির্ভয়ার পরিবারের।
দোষী সাব্যস্ত ৪
এরপর ১০ দিনের মাথায় বাকিদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর তাদের মৃত্যু দণ্ড দেয় আদালত। এরপর ২০১৪ সালে দিল্লি হাইকোর্টে ক্ষমা ভিক্ষার প্রার্থনা শুরু হয় অভিযুক্তদের। তাতে লাভের লাভ হয়নি। ২০১৭ সালে তারা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। সেখানেও জাস্টিস দীপক মিশ্রর বেঞ্চ তাদের মৃত্যু দণ্ডের সাজায় স্থির থাকে।
বিরল ঘটনা
আদালত সেই সময় জানিয়েছিল নির্ভয়াকাণ্ড একটি বিরল ঘটনা এদেশের। 'সুনামি অফ শক' বলে ঘটনাকে ব্যখ্যা করে আদালত। এরপর থেকে যদিও একের পর এক তারিখ ধার্য হয়েছে এই মামলায় দোষীদের ফাঁসির দিন ঘিরে।
ফাঁসির দিনের তারিখ পরিবর্তন
নির্ভয়া কাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী করার একের পর এক দিন ধার্য হয়েছে এযাবৎকালে। প্রথমে ৭ জানুয়ারি জানানো হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী হবে ২২ জানুয়ারি। এরপর আদালতের সেই রায়ে একাধিক আইনি জটিলতায় পিছিয়ে গিয়ে হয় ১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬ টায়। তারপর একই ভাবে শুনানি পিছিয়ে যায় আইনি কারণে। তৃতীয়বার ফাঁসির দিন ধার্য হয় ৩ মার্চ। তবে সেদিনও হয়নি ফাঁসি। এরপর যাবতীয় আইনি জটিলতা কাটিয়ে ২০ মার্চ এই দিন ধার্য হয়।