নির্ভয়া গণধর্ষণকাণ্ড: ২০ মার্চের সূর্যোদয়ে তিহারে সম্পন্ন ৪ দোষীর ফাঁসি
শুরুটা ছিল ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের রাত। আর তার পরিণতি ২০২০ সালের ২০ মার্চের ভোর। এভাবেই ১৩০ কোটির ভারতবর্ষ দেখল এক গণধর্ষণ মামলার একটি রুদ্ধশ্বাস অধ্যায়। রাজধানী দিল্লির বুকে সেই রাতে 'লাইফ অফ পাই' ফিল্মটি দেখে ফিরছিলেন নির্ভয়া (নাম পাল্টে দেওয়া হয়েছে) ও তাঁর সঙ্গী। আর ফিল্ম দেখে ফেরার সময়ই ঘটে যায় সেই পাশবিক অত্যাচার। এরপর গোটা দেশ দেখেছে একটা লাড়ই। যে লড়াইয়ে ছিল মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার চেষ্টা, লড়াইয়ে ছিল এক মায়ের চোখের জল, লড়াইয়ে ছিল ন্যায় পাওয়ার আকাঙ্খা, আর ছিল প্রবল আইনি রুদ্ধশ্বাস মোড়। যার সমাপ্তি হল আজ।
তিহারে ফাঁসি
যাবতীয় কর্মপ্রক্রিয়া শেষ করে তিহারে শেষমেশ সম্পন্ন হল নির্ভয়া কাণ্ডের চার দোষীর ফাঁসি। অক্ষয় সিং ঠাকুর, পবন গুপ্ত, মুকেশ সিং, বিনয় শর্মাকে এদিন পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তিহার জেলে।
মধ্যরাতের রুদ্ধশ্বাস শুনানি
এর আগে ,নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে চতুর্থ দোষী পবন গুপ্তর ফাঁসির আবেদন তথা প্রাণ ভিক্ষার আবেদনও মধ্যরাতের শুনানিতে খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট। রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁদের প্রাণভিক্ষার আবেদন এর জেরে নস্যাৎ হয়ে যায়। শীর্ষ আদালত জানায়, রাষ্ট্রপতির কাছে এই নিয়ে ফের আবেদনের কোনও ভিত্তিই নেই। ফলে পবন গুপ্তর প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়।
৭ বছরের লড়াই শেষে নির্ভয়ার পরিবার
মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর স্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে নির্ভয়ার মা আশাদেবীর মুখে। কোর্ট চত্বরে করোনা আতঙ্কের জন্য তিনি প্রবেশ করতে পারেননি। তবে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বের হতেই তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। দোষীদের একের পর এক ফাঁসির তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পর শেষমেশ এই ফাঁসি সংগঠিত হওয়ার নির্দেশে তিনি স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন বলে জানান।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী করার একের পর এক 'তারিখ'!
নির্ভয়া কাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী করার একের পর এক দিন ধার্য হয়েছে এযাবৎকালে। প্রথমে ৭ জানুয়ারি জানানো হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী হবে ২২ জানুয়ারি। এরপর আদালতের সেই রায়ে একাধিক আইনি জটিলতায় পিছিয়ে গিয়ে হয় ১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬ টায়। তারপর একই ভাবে শুনানি পিছিয়ে যায় আইনি কারণে। তৃতীয়বার ফাঁসির দিন ধার্য হয় ৩ মার্চ। তবে সেদিনও হয়নি ফাঁসি। এরপর যাবতীয় আইনি জটিলতা কাটিয়ে ২০ মার্চ এই দিন ধার্য হয়।
নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ড ও দোষীরা
২০১২ সালের নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। এদের মধ্যে গণধর্ষণে দায়ী রাম সিংকে তিহার জেলেই মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। জানা যায় সে আত্মহত্যা করেছে। অপর এক অভিযুক্ত নাবালক কে এই মামলায় ছাড় দেওয়া হয় , 'নাবালক' হওয়ার কারণে। এরপর বিনয় শর্মা , অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্ত, মুকেশ সিংরা দোষী সাব্যস্ত হয় মামলায়। যার সর্বশেষ পরিণতি ২০ মার্চের ফাঁসি।