এ যেন আলিবাবার গুহা! থরে থরে সাজানো ৫০০, ১০০০-এর নোট, কালোটাকার কারবারিদের পর্দা ফাঁস
এক বিশেষ সূত্রে পুলিশ কালো টাকার কারবারিদের গ্যাং সম্পর্কে তথ্য পায়। এরপরই কানপুর পুলিশ জাল পাততে শুরু করে।
সাধারণ বাজেট পেশের কয়েক সপ্তাহ আগেই চাঞ্চল্য পড়ে গেল দেশজুড়ে। উদ্ধার হল বাতিল হওয়া ৫০০ ও ১০০০-এর বান্ডিলে ৯৬ কোটি টাকার 'ব্ল্যাক মানি'। যা রীতিমতো চোখ কপালে তুলে দিয়েছে। নোট বাতিলের পর এত পরিমাণ বেআইনি অর্থ উদ্ধার হয়নি। কানপুরের এই ঘটনা এখন দেশজুড়ে সকলকে অবাক করে দিয়েছে।
এক বিশেষ সূত্রে পুলিশ কালো টাকার কারবারিদের গ্যাং সম্পর্কে তথ্য পায়। এরপরই কানপুর পুলিশ জাল পাততে শুরু করে। এরইমধ্যে এনআইএ-ও কানপুর থেকে চলা কালো টাকার কারবারিদের এক গ্যাং সম্পর্কে কানপুরের আইজি অলোক সিং-কে তথ্য পাঠায়। এনআইএ জানিয়েছিল এই গ্যাং বিদেশি কয়েকটি সংস্থার নাম করে বাতিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটকে সাদা-টাকায় পরিণত করছে। এই গ্যাং-এর শাখা-প্রশাখা বিশাল বলে এনআইএ-এর তথ্যে জানতে পারেন কানপুরের আইজি। এরপরই তিনি এসএসপি কানপুরকে এই গ্যাং-কে ধরতে নির্দেশ দেন।
#WATCH Police seized demonetized currency worth crores from a residential premises in Kanpur. pic.twitter.com/Hh7sLrWwoG
— ANI UP (@ANINewsUP) January 17, 2018
এসএসপি কানপুরও এসপি-ইস্ট অনুরাগ আর্য এবং এসপি-ওয়েস্ট গৌরব গ্রোভারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি টিম তৈরি করেন। এই টিমগুলি কানপুরের স্বরূপ নগর এলাকা থেকে ৪ সন্দেহভাজনকে আটক করে। পুলিশের সন্দেহ ছিল এই চারজনই বাতিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটকে সাদা করার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। যদিও, জেরায় প্রথম দিকে এই চার জনই পুলিশকে প্রায় ঘোল খাইয়ে দিয়েছিল। পুলিশ চার জনের এই চাল ধরে ফেলে। এরপরই অভিযুক্তরা স্বীকার করে নেয় যে তারা কালো টাকাকে সাদা করার কাজ করে এবং বাতিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটকেও সাদা করে।
এই চার জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যেই পুলিশ জানতে পারে কানপুরের আনন্দ খাতরি নামে এক প্রোমোটার বিশাল অঙ্কের বাতিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট তাদেরকে দিয়েছে। এই সব নোটই কালো-টাকার কারবারিরা 'সাদা' করে দেবে। জেরায় পুলিশ আরও জানতে পারে বিশাল অঙ্কের এই বাতিল নোট স্বরূপ নগরেরই গোলে চৌরাহার কাছে প্রোমোটার আনন্দ খাতরির পৈতৃক বাড়িতে লুকিয়ে রাখা আছে।
পুলিশ এরপরই আনন্দ খাতরি নামে ওই প্রোমোটারকে আটক করে। আনন্দই পুলিশকে তার পৈতৃক বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে পুলিশে প্রায় চোখ ছানা-বড়া। কারণ, একটি ঘরের মেঝেতে থরে থরে সাজানো প্যাকেট। পাশে আবার ব্যাগও রাখা। প্রতিটি প্যাকেট আর অন্য়ান্য ব্যাগে বাতিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট ভর্তি।
গুনে দেখা যায় ওই ঘরে ৯৬ কোটি টাকার ব্ল্যাক-মানি মজুত হয়ে আছে। সমস্ত নোটই বাতিল ৫০০ ও ১০০০-এর। তবে, পুলিশ জানতে পারে উদ্ধার হওয়া ওই কালো-টাকার মধ্যে ৯৫ কোটি টাকা আনন্দ খাতরির। বাকি ১ কোটি টাকা বিভিন্ন জনের।
আনন্দ খাতরির বাড়িতে তল্লাশির পর কানপুর পুলিশ তিনটি হোটেলেও তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে সন্তোষ যাদব নামে এক অধ্যাপক-সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করে। বাতিল নোটে এই বিশাল অঙ্কের অর্থ 'সাদা' করার জন্যই জমা করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর পিছনে কোনও জঙ্গি-নেটওয়ার্কের জড়িত থাকার সম্ভাবনা আপাতত উড়িয়ে দিয়েছে কানপুর পুলিশ।
প্রোমোটার আনন্দ খাতরি এবং অধ্যাপক সন্তোষ যাদব ছাড়াও যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ। এরা হল কালো-টাকার এই কারবারি চক্রের অন্যতম প্রধান মোহিত ধিংরা, সঞ্জয় আগরওয়াল এবং মণীশ আগরওয়াল। এরা সকলেই কানপুরের বাসিন্দা। এর বাইরেও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে কোটেশ্বর রাও, বারাণসী থেকে সঞ্জয় কুমার, সাহারাণপুর থেকে অনিল যাদবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মির্জাপুর থেকে সন্তোষ পাঠক, সঞ্জয় রাই নামে দু'জন গ্রেফতার করা হয়। অন্ধপ্রদেশ থেকে এক মহিলা-সহ রাম আসরে, ধীরেন্দ্র, সঞ্জীব আগরওয়াল, ওমকার যাদব, আলি হুসেইন নামে আরও কয়েক জনকেও পুলিশ গ্রেফতার করে। কোটেশ্বর রাও-এর এক আত্মীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কে কাজ করেন। কালো-টাকা সাদা করতে কোটেশ্বর তার এই আত্মীয়কে কাজে লাগিয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।