বিদ্রোহের আগুনে পুড়বে 'হাত'! আজাদের বাড়িতে ৯ কংগ্রেস নেতার বৈঠক ঘিরে জোর জল্পনা
দীর্ঘ নাটকের পর কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক যখন শেষ হয় তখন জানা গেল যে, সেই গান্ধী পরিবারের হাতেই থাকল কংগ্রেসের চাবিকাঠি। অন্তরবর্তিকালীন সভানেত্রী হিসাবে রয়ে গেলেন সনিয়া গান্ধী। আর এতেই প্রশ্ন উঠল, সমস্যার কি সমাধান হল? যেসব প্রশ্ন সোনিয়াকে চিঠি দিয়ে দলের ২৩ নেতা তুলেছিলেন সেগুলোর নিরসন কীভাবে হবে?

উত্থাপিত দাবি নিয়ে কোনও সুরাহা মেলেনি
এদিকে উত্থাপিত দাবি নিয়ে কোনও সুরাহা না হওয়ায় ফের বসে একটি বৈঠক। তবে তা গোপনে। ম্যারাথন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষে সোমবার সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ নয় জন নেতা গুলাম নবি আজাদের বাড়িতে বৈঠক সারেন। ফলে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভেদ নিয়ে জল্পনা অব্যাহত।

পরিবর্ত খুঁজতে বলেছিলেন সনিয়া
গতকালকের বৈঠকের শুরুতেই তাঁর পরিবর্ত খুঁজতে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের বলেন সনিয়া গান্ধী। এই পরিস্থিতির নেপথ্যে ছিল ২৩ জন কংগ্রেস নেতার একটি চিঠি। সনিয়া গান্ধী দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর কাটতে না কাটতেই আবারও দলের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের দাবি জানায় শীর্ষ নেতৃত্ব। ২৩ জন শীর্ষনেতা এই মর্মে সনিয়া গান্ধীকে চিঠিও লিখেছিলেন। পাশাপাশি তাঁরা ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের জন্যও আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁদের চিঠির উত্তরে সনিয়া গান্ধী জানিয়েছিলেন, বৈঠক হবে। সকলে মিলে নতুন সভাপতির খোঁজ করা হবে।

কাঁরা চিঠি পাঠিয়েছিলেন সনিয়াকে?
এদিকে যে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে তাতে স্বাক্ষর রয়েছে কপিল সিব্বল, শশী থারুর, গুলাম নবী আজাদ, পৃথ্বীরাজ চৌহান, বিবেক তানখা এবং আনন্দ শর্মার মতো প্রবীণ নেতাদের। দাবি করা হয়েছে, রাহুল গান্ধী যদি দলের সভাপতি পদ গ্রহণে ইচ্ছুক না হন তবে দলের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে উপযুক্ত নেতা বেছে নেওয়া হোক ৷ সংগঠনের শীর্ষনেতৃত্ব থেকে তৃণমূলস্তর,সব জায়গাতেই আমূল সংস্কারেরও দাবি তুলেছেন কংগ্রেসের ওই পোড়খাওয়া প্রবীণ নেতারাই৷

আজাদের বাড়িতে বৈঠকে বসেন ৯ নেতা
এই নেতাদেরই ৯ জন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর আজাদের বাড়িতে বৈঠকে বসেন। আজাদের বাড়িতে কেন বৈঠক? আনন্দ শর্মা এই বিষয়ে বলেন, 'ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে খোলা মনে আলোচনা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি ও ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফলে আমাদের বিরুদ্ধে অপ্রোয়জনীয় কথা বলা হয়েছে। আলোচনার বিষয়বস্তু জনসমক্ষে তুলে ধরা উচিত বলে আমি দাবি করেছি।'

'বিদ্রোহী' নেতাদের দাবি
যেই ২৩ জন নেতা চিঠি লিখেছিলেন, তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা শুধু চান দল যেভাবে ক্রমাগত নানা দিকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে, তার সমাধানে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং দলে সর্বতোভাবে সংস্কারের জন্য যেন উদে্যাগ নেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা দলে প্রয়োজন অনুসারে যে কোনও বদলের জন্য সনিয়ার হাতেই সব দায়িত্ব তুলে দেন। রাহুলের সমর্থক নেতাদের জন্য মুখরক্ষার বিষয় ছিল, তাঁকেই ফের দলের সভাপতি পদে পরিগণিত করার দাবি তোলা। সেই রবেই সম্ভবত কোনও অ-গান্ধী নেতাকে প্রধান করার গুঞ্জন চাপা পড়ে যায়।

কংগ্রেসের অভ্যন্তরে একাধিক সমস্যা
শুধু নেতৃত্বের অভাব নয়, তা ছাড়াও কংগ্রেসের অন্দরে বর্তমানে রয়েছে একাধিক সমস্যা। সেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তা মেটানোর লক্ষ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল গতকালের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। তবে সমাধান খোঁজার চ্যালেঞ্জে পাশ মার্কস কি কংগ্রেস পেল? বহুলচর্চিত আলোচনাসভা ঘিরে আগ্রহ চড়ছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তার ফল হল সেই থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়।

কোনও কিছু নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি অপরাধ?
সনিয়া গান্ধীকে দেওযা চিঠিতে তিন স্তবক বিজেপি-আরএসএস এর বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। নেহেরু-গান্ধী পরিবারের ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। যা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করেন আজাদ। সভায় পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিনি জানতে চান যে, কোনও কিছুর বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি অপরাধ?

বিদ্রোহের আগুনের আঁচ ক্রমেই চড়ছে
গুলাম নবি আজাদ বলেছেন, 'আমাদের লড়াই সনিয়া-রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে নয়। আমরা কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছি, যা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। দলের অভ্যন্তরে কোনও লড়াই নেই। অনেক সময়ই নানা বিষয়ে আলোচনা হয় আবার কখনও চিঠি চালাচালিও হয়ে থাকে।' তবে আজাদ যাই বলুক, বিদ্রোহের আগুনের আঁচ যে ক্রমেই আরও ছড়ছে, তা বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা বাহুল্য।

কাশ্মীর নিয়ে মিথ্যাচার জারি পাকিস্তানের, রাষ্ট্রসংঘে 'ভুয়ো ভাষণ'-এ মুখ পুড়ল ইমরান সরকারের