দু’বছরের মধ্যেই সব রাজ্যে এনআইএ শাখা! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পর কী বলছে শাসক দল
অপরাধের সংজ্ঞা এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে এই দেশে সাইবার ক্রাইম, মাদক পাচার সন্ত্রাসের মতো অপরাধের সাক্ষী থেকেছে দেশ। রাজ্যের পাশাপাশি এই অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ। তাই ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের সব রাজ্যে এএনআইয়ের শাখা খুলে ফেলতে চায় কেন্দ্র সরকার। সীমান্তের অবপরাধ, আর্ন্ত-সীমান্ত সন্ত্রাস ও সুপরিকল্পিত অপরাধকে দমন করতে কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মেলাবে এনআইএ। বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে এসে এই কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এনআইএ শাখা গঠন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজ্য হরিয়ানার সুরজকুণ্ডে হওয়া প্রথম চিন্তন শিবিরে এসে অমিত শাহ রাজ্যগুলিকে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত সুরক্ষা সমস্যা নিয়ে যৌথ কৌশল তৈরি করতে বলেছেন। দু'দিন ব্যাপী চলা এই সম্মেলনে এসে শাহ বলেন, 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক জয় অর্জন করার জন্য আইনের পথকে আরও মজবুত করতে হবে, এমনকী রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা বিধিবদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় আইনও আনতে পারে সরকার। এনআইকে অতিরিক্ত আঞ্চলিক এখতিয়ার দেওয়ার পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতাও দিয়েছে কেন্দ্র। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের সব রাজ্যে এনআইএ তাদের শাখা খুলে ফেলবে।'
বর্তমানে ১৫টি শাখা রয়েছে এনআইয়ের
প্রসঙ্গত, বর্তমানে এনআইএর ১৫টি শাখা রয়েছে দিল্লি, হায়দরাবাদ, গুয়াহাটি, কোচি, লখনউ, মুম্বই, কলকাতা, রায়পুর, জম্মু, চণ্ডীগড়, রাঁচি, চেন্নাই, ইম্ফল, বেঙ্গালুরু ও পাটনাতে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস-বিরোধী সংস্থা এনআইএ তৈরি হয় ২৬/১১ মুম্বই জঙ্গি হামলার পর থেকে, এখনও পর্যন্ত ৪৬৮টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে এবং দোষী সাব্যস্তের হার ৯৩.২৫ শতাংশ। ইতিমধ্যেই লক্ষ্মীপুজোর দিন কলকাতার মোমিনপুরে হওয়া গোষ্ঠী সংঘর্ষ, দিন কয়েক আগে তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরে হওয়া গাড়ি বিস্ফোরণের তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা।
জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ
অমিত শাহ জানিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শাসিত সরকার সন্ত্রান্ত্রের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। এদিন শাহ এও জানিয়েছেন যে দেশের অধিকাংশ সুরক্ষা সম্পর্কিত হটস্পটগুলি কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ সমন্বয় ও সহযোগিতার ফলে সন্ত্রাস-মুক্ত হতে পেরেছে। তিনি আরও জানান যে নতুন এই প্ল্যাটফর্ম সন্ত্রাস, অপরাধ ও আইন-শৃঙ্খলার সমস্যার সঙ্গে বোঝাপড়ায় যৌথ কৌশল তৈরি করতে সহায়তা করবে। অমিত শাহ বলেন, 'আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয় হওয়া সত্ত্বেও প্রযুক্তি অপরাধকে সীমান্তহীন করে তোলে। এটা খুবই জরুরি যে সব রাজ্য ও কেন্দ্র একত্রীত হয়ে এটা নিয়ে আলোচনা করুক এবং এই সাইবার অপরাধ, সন্ত্রাস, মাদক পাচার, আর্থিক তছরূপ এ ধরেনর সীমান্তহীন অপরাধ রুখতে কৌশল তৈরি করুক।'
কী বলছে বিরোধীরা
যদিও কেন্দ্রের এই মতের সঙ্গে মোটেও সহমত নয় বিরোধীরা। তাদের মতে, রাজ্যে হওয়া যে কোনও স্পর্শকাতর ঘটনা এনআইএ বা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ায় রাজ্যের ওপর পরোক্ষভারে হস্তক্ষেপ বেড়ে চলেছে কেন্দ্রের। আর এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তবে বিরোধীদের এই মতের পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে কেন্দ্র জানিয়েছে যে একাধিক রাজ্যের এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যা আগে সামান্য ঘটনা বলে রাজ্যের প্রশাসন উড়িয়ে দিলেও পরে তার সঙ্গে জঙ্গি যোগ পাওয়া যায়। তাই সন্ত্রাস যোগ থাকতে পারে এমন ঘচনার তদন্ত দ্রুত হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনআইএ। কারণ রাজ্য পুলিশের তদন্তের সেই দক্ষতা নেই বলেই মনে করছে কেন্দ্র। এ প্রসঙ্গে, দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলনেত্রীই যা বলার বলবেন। তবে এভাবে বারবার কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো না মেনে পিছনের দরজা দিয়ে রাজ্যের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে।'
কারা কারা উপস্থিত ছিলেন চিন্তন শিবিরে
দু'দিনের এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, অসম, কেরল, গোয়া, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, সিকিমের মুখষমন্ত্রী, মহারাষ্ট্র ও নাগাল্যান্ডের উপ-মুখ্যমন্ত্রী, গুজরাত, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, ওড়িশা, তেলেঙ্গনা, পুদুচেরি, ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গর্ভনর সহ রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ আধিকারিকরাও যোগ দেন এই সম্মেলনে। যদিও এই সম্মেলনে দেখা যায়নি পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, ওড়িশা, বিহার ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীদের। তবে জানা গিয়েছে, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলে এই সম্মেলনে এডিজি স্তরের অফিসারকে পাঠানো হয়েছিল।
১৫ দিনের মধ্যে বছরের শেষ চন্দ্রগ্রহণ! গ্রহণের কেমন প্রভাব পড়বে আসুন জেনে নিই