কেন্দ্রের নয়া পরীক্ষা ব্যবস্থায় কমবে স্কুলের গুরুত্ব, বাড়বে বেসরকারিকরণ, আর কী বলছেন শিক্ষাবিদরা
গত শনিবারই মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানিয়েছেন এখন থেকে সম্পূর্ণরূপে কম্পিউটার পরিচালিত প্রক্রিয়ায় বছরে দুবার করে হবে এনইইটি ও আইআইটি-জেইই পরীক্ষা। মন্ত্রক এতে শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসার দাবি করলেও শিক্ষাবিদদের মতে এতে শিক্ষার বেসরকারিকরণ আরও বাড়বে গুরুত্ব কমবে স্কুল শিক্ষার।

যে পদ্ধতির কথা মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক বলেছে তাতে পরীক্ষার্থীরা জানুয়ারি ও এপ্রিল মাসে জেইই এবং ফেব্রুয়ারি ও মে মাসে এনইইটি পরীক্ষা দিতে পারবে। ন্যাশনাল ডিফেন্স ও নাভাল অ্যাকাডেমি মতো কয়েকটি সর্বভারতীয় পরীক্ষায় এখন থেকেই এই পদ্ধতি মানা হয়। কিন্তু মেডিকাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মোট আসনের তুলনায় এত বেশি ছাত্র এই পরীক্ষা দেয় সেখানেই সমস্যাটা লুকিয়ে আছে বলে দাবি শিক্ষাবিদদের।
মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের নিজস্ব রিপোর্টেই তিনটি বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথমত, এতে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হতে পারে। শিক্ষার উদ্দেশ্য শিক্ষিত মনন গড়া, প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করা নয়। দ্বিতীয়ত, এরফলে ছাত্রছাত্রীদের পড়ার চাপ আরও বাড়বে বই কমবে না। তাতে তারা শুধু পড়াশোনাটাই শিখবে, সমাজের অন্যান্য বিষয়ে তাদের পরিণতি ঘটবে না। তৃতীয়ত, আরও ভাল ফলের আকাঙ্খায় খামোখা ছাত্রছাত্রীদের অনেকটা সময় নষ্ট হতে পারে।
এছাড়া শিক্ষাবিদদের আশঙ্কা এতে স্কুল শিক্ষার গুরুত্ব কমতে বাধ্য। এমনিতেই বর্তমানে বিভিন্ন স্কুলেই এইসব প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য আলাদা করে কোচিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেই সেই কোচিং চলে। এই প্রবণতা ইদানিংকালে এত বেশি দেখা যাচ্ছে যে তামিলনাড়ুতে সরকার থেকে স্কুলে স্কুলে এই ধরণের কোচিং ক্লাস বন্ধ করার বিষয়ে সার্কুলার পাঠাতে বাধ্য হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যেও অবস্থাটা ঊনিশ-বিশ।
মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক যতই বলুক বছরে দুবারের মধ্যে যে কোনও একবার এই প্রবেশিকা পরীক্ষা দিলেই হবে, সংশ্লিষ্ট সকলেই বলছেন কোনও ছাত্র বা ছাত্রীই সেই ঝুঁকি নিতে চাইবেন না। কিন্তু সমস্যা হল এই প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রথম পর্যায় যে সময়ে হওয়ার কথা সেই একই সময়ে বিদ্যালয়ে প্র্যাকটিকাল বা মডেল পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেগুলি ব্যহত হবেই।
এছাড়াও আছে অন্য একটি বিষয়। গ্রামীন ভারতের অনেক জায়গাতেই কম্পিউটার এখনও দূর গ্রহের যন্ত্র। সেখানকার পরীক্ষার্থীদের সাধ্য়ের মধ্যে নেই কম্পিউটার। এই দুই প্রবেশিকা পরীক্ষা সম্পূর্ণ কম্পিউটার চালিত হলে, তারা সমস্যায় পড়বেন। জাভড়েকর অবশ্য সাফাই দিয়েছেন, যে সব ছাত্র-ছাত্রী এই পরীক্ষাগুলি দেয়, তারা প্রত্যেকেই কম্পিউটারের সঙ্গে সড়গড়।