এনডি তিওয়ারির ছেলে রোহিত শেখর খুনে গ্রেফতার স্ত্রী অপূর্বা শুক্লা
উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এনডি তিওয়ারির পুত্র রোহিত শেখরকে খুনে মৃতের আইনজীবী স্ত্রী অপূর্বা শুক্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এনডি তিওয়ারির পুত্র রোহিত শেখরকে খুনে মৃতের আইনজীবী স্ত্রী অপূর্বা শুক্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্বামীকে খুনের অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন অপূর্বা। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রোহিত শেখরের গাড়ির চালক অখিলেশ ও চাকর গলুকে বারবার থানায় ডেকে জেরা করছে পুলিশ। কারণ, ঘটনার দিন রাতে রোহিত শেখরের ডিফেন্স কলোনীর বাড়িতে শুধু ওই তিন জনই ছিলেন বলে জানা গেছে।
গত ১৬ এপ্রিল রোহিত শেখরের মৃতদেহ তাঁর ঘর থেকে উদ্ধার হয়। উল্লেখযোগ্য ভাবে ঘটনার পর থেকে কিছুদিন নিরুদ্দেশ ছিলেন রোহিতের স্ত্রী অপূর্বা। তিনি কোথায় ছিলেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তাই ফিরে আসতেই অপূর্বাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে পুলিশ। ২১ এপ্রিল থেকে দফায় দফায় জেরার পর রোহিত খুনে তাঁর আইনজীবী স্ত্রীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
খুনের কারণ নিয়ে তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, রোহিত শেখরের সঙ্গে বিবাহিত জীবন খুব একটা আনন্দে কাটছিল না আইনজীবী অপূর্বার। নানা কারণে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি লেগে থাকতো বলেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বয়ানে উঠে এসেছে। এমনকী রোহিত ও অপূর্বা বেশ কয়েকবার নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। রোজ রোজের অশান্তি থেকে রেহাই পেতেই অপূর্বা স্বামী রোহিতকে বালিশ দিয়ে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে খুন করেন বলে পুলিশের অনুমান।
তবে এই কাজ অপূর্বার একার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না বলেই মনে করছে পুলিশ। রোহিতকে খুনে তাঁর গাড়ির চালক অখিলেশ ও বাড়ির চাকর গলু, অপূর্বাকে সাহায্য করেছে বলে ধারণা। মৃতের বাড়ির ঘটনার দিন রাতের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও ওই বাড়িতে লাগানো সাতটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মধ্যে দুটি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। সেগুলি আপনা থেকে খারাপ হয়েছে নাকি ইচ্ছাকৃত ভাবে খারাপ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনার প্রকৃত সত্য জানতে রোহিতের দেহের এফএসএল বা ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তে এও জানা গেছে, প্রতিদিনই রাতে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি মদ্যপান করতেন রোহিত শেখর। ঘটনার দিন রাতে, রোহিতের ঘুমের ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালেই প্রয়াত হন উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা এবং রোহিত শেখরের 'বায়োলজিক্যাল ফাদার' এনডি তিওয়ারি। ২০০৭ সালে প্রকাশ্যে আসা তিওয়ারি ও রোহিতের বাবা-ছেলে সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব দেশে আলোড়ন ফেলে দেয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন রোহিতই। পেশায় আইনজীবী ওই যুবক দাবি করেন, এনডি তিওয়ারির অবৈধ সম্পর্কের জেরেই তাঁর জন্ম।
বিষয়টি অস্বীকার করলে এনডি তিওয়ারির বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন রোহিত শেখর। এরপর বিস্তর আইনি লড়াই, ডিএনএ রিপোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে গেলে, রোহিতকে 'বায়োলজিক্যাল সন' হিসেবে স্বীকার করে নেন উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এরই মধ্যে ২০১২ সালে এনডি তিওয়ারির যৌন কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ্যে এলে, তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপালের পদ থেকেও ইস্তফা দেন।