দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের আকাশে কতটা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে দূষণ, ছবি তুলে দেখাল নাসা
এই মুহূর্তে পরিবেশ দূষণের খবরে শিরোনামে দিল্লি। প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে রাজধানীতে দিনের বেলাতেও দেখা মিলছে না সূর্যের। বলা হচ্ছে দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে আলোও দিল্লির ভূ-স্পৃষ্টে আসছে না।
বায়ু দূষণে জেরবার দিল্লি-সহ উত্তর ভারত। বিপদ এতটাই মারাত্মক যে কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে চিন্তায় সরকার। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দিল্লির আকাশে। সেখানে বায়ুমণ্ডলে দূষণের যে পার্টিকল বা কণাগুলি চরম ক্ষতিকর তাদের সংখ্যা হু-হু করে কয়েক শ'গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে দিল্ল-সহ উত্তর ভারতের আকাশের বর্তমান ছবিটা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা ফোটোতে সামনে নিয়ে এল নাসা। মার্কিন এই মহাকাশ সংস্থার আর্থ অবজারভেটরি বিভাগ ২টি ছবি প্রকাশ করেছে। আর এই দুই ছবি প্রত্যক্ষ করার পর সহজে কেউ দিল্লির পা মাড়াতে চাইবেন কি না তাতে সন্দেহ আছে।
একটি ছবিতে নাসা দেখিয়েছে কীভাবে পাকিস্তানের উপর থেকে এক্কেবারে ঘন আস্তরণ ছেয়ে আছে। পাকিস্তানের উপরে যে ঘন আস্তরণ রয়েছে তা কুয়াশা হলেও, দিল্লির উপরে থাকা এই আস্তরণকে হেজ বা ধোঁয়াশা বলে চিহ্নিত করেছে নাসা। হেজ আসলে সেই জিনিস যা শুকনো ধূলো এবং ধোঁয়া মিলে তৈরি হয়। নাসা তার রিপোর্টে জানিয়েছে, এই ধোঁয়াশা এতটাই ঘন যে বাতাস বইতে পারছে না। সাধারণত বাতাস বইলে এই ধরণের ধোঁয়াশা হালকা হয়ে যায়। কিন্তু, পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানক যে এই ঘন আস্তরণের ধোঁয়াশার জন্য বাতাস বওয়ার রাস্তাটাই বন্ধ হয়ে আছে।
দ্বিতীয় ছবিতে নাসা দিল্লির আকাশের এরোসেল-এর গভীরতা কতটা তা দেখিয়েছে। পরিত্যক্ত কঠিন বা তরল জাতীয় কোন কণা যা বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়ায় সেটাই হল এরোসেল। বাতাসে উড়তে থাকা ধূলো, সি সল্ট, আগ্নেয়গিরির ছাই, জঙ্গল পুড়ে যাওয়ার ধোঁয়া, কল-কারখানার চিমনি থেকে নির্গত দূষিত কালো ধোঁয়া হল এরোসেলের আদর্শ উদাহরণ। আকার, ধরণ এবং স্থান দেখে এরোসেলের চরিত্র ভাগ হয়। সাধারণত দু'ধরনের এরোসেল রয়েছে, এদের মধ্যে একটি ভূ-স্পৃষ্টকে ঠান্ডা করে দেয়, আর অন্যটি বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ করে তোলে। এই এরোসেল যদি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করে তাহলে এটা প্রাণঘাতীও হতে পারে। এই ছবিতে লাল-বাদামী রঙের এই আস্তরণ যাকে এরোসেল বলে আমারা জানি, তা ঘণাকারে লাহোর থেকে দিল্লি, লখনউ এবং কানপুরের উপরে কী ভাবে ছেয়ে আছে তা দেখানো রয়েছে। এর ফলে এই এলাকায় দিনের বেলাতেও রোদের আলো প্রবেশ করছে না বলে জানিয়েছে নাসা।
২০১৭-র ৭ নভেম্বর নাসার আর্থ অবজারভেটরি-র কৃত্রিম উপগ্রহ অ্যাকোয়ায় থাকা মডারেট রেজলিউশন ইমেজিং স্পেকট্রোরাডায়োমিটার বা মোডিস থেকে নেওয়া এই দুই ছবি ৮ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়। ভয় ধরিয়ে দেওয়া এই দুই ছবি দিল্লির সরকারের কাছেও পৌঁছেছে। নাসা আরও জানিয়েছে যে দিল্লিতে থাকা মার্কিন দূতাবাস বাতাসের মান নিয়ে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক ১,০১০-এর সীমা পার করেছে। শূন্য থেক ১০০-র মধ্যে এই মাত্রা থাকলে তাকে সহনীয় এবং ভাল বলে মান নির্ধারণ করা হয়। সেখানে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স কয়েক শ'গুণ বেশি।
দিল্লির পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে বারণ করা হয়েছে। দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারকে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন দিল্লি হাইকোর্ট। কবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে তার অপেক্ষায় দিল্লিবাসী।