নরেন্দ্র মোদী এর আগে গুজরাতে জয়ের হ্যাট্রিক করেছেন ; নির্বাচনী রাজনীতি গুলে খেয়েছেন
আগেরবার ছিল ১৬ মে, আর এবারে ২৩ মে। পাঁচ বছর সাত দিনের ব্যবধানে ফের সারা দেশকে একসূত্রে বেঁধে ফেলে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আগেরবার ছিল ১৬ মে, আর এবারে ২৩ মে। পাঁচ বছর সাত দিনের ব্যবধানে ফের সারা দেশকে একসূত্রে বেঁধে ফেলে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দু'হাজার চোদ্দতে তাঁর ভারতীয় জনতা পার্টি একাই ২৮২টি আসনে জিতেছিল; ২০১৯-এ সেটা দাঁড়াল ৩০০তে। সেই ষাট এবং সত্তরের দশকে ইন্দিরা গান্ধীর পরে এমন ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে এই প্রথম। বিরোধীরা স্রেফ খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে মোদীর জয়রথের সামনে; এমন ধাক্কা তাঁরা শেষ কবে খেয়েছিলেন মনেই করতে পারছেন না।
নানা মুনি নানা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন মোদী কেন জিতেছেন একের পর এক নির্বাচনে। অনেকে ভেবেছিলেন যে গত পাঁচ বছরের নানা বিষয়ে মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হওয়া তীব্র হবে স্বাভাবিক নিয়মেই। কিন্তু কোথায় কী? বিজেপির এই নায়ক এখন সমস্ত পার্থিব রাজনীতির ঊর্ধ্বে যেন। তাঁকে পেয়েছে এক রাজনৈতিক অমরত্ব। কে হারাবে তাঁকে?
এর আগে গুজরাতে জয়ের হ্যাট্রিক করেছেন মোদী
মোদী এই নিয়ে পর পর দু'টি জাতীয় নির্বাচন জেতার পরে অনেক উল্লাস চোখে পড়লেও মনে রাখতে হবে যে মোদীর নির্বাচন জয় এই প্রথম নয়। এর আগে তিনি নিজের রাজ্য গুজরাতেও পর পর তিনটি নির্বাচনে জিতেছিলেন একবগ্গা ভাবে এবং সেই জয়গুলি এসেছিল নানা প্রতিকূলতার মধ্যে। ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার বছরেই মোদী তাঁর প্রথম রাজ্য নির্বাচন জেতেন, অনেক মানুষই তাতে অবাক হয়েছিলেন। এরপরে ২০০৭ সালে কংগ্রেসের তুমুল আক্রমণের ("মউত কে সওদাগর") সামনে পড়েও তিনি জেতেন এবং অবশেষে ২০১২ সালে আসে হ্যাট্রিক। ওই বছরেরই মোদী জাতীয় রাজনীতিতে কার্যত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়া বিজেপিকে (লালকৃষ্ণ আদবানি তদ্দিনে ধার ও ভার দুইই হারিয়েছেন) পথ দেখাতে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোতে শুরু করেন এবং খোদ দলের মধ্যে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হন এবং নানা রাজ্য নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বের দ্বারা বিজেপি ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবং তারপরে ২০১৪ সালে ইতিহাস তৈরী হয়।
নির্বাচন জিততে জিততে মোদী সবসময় 'ইলেকশন মোড'-এই থাকেন
অতএব, মোদীর এই বড় বড় জয়গুলিকে বিশ্লেষণ করতে হলে আগে স্মরণ করতে হবে তাঁর রাজ্যস্তরের জয়গুলিকে। মোদী গত দেড় দশকে এত নির্বাচনে লড়েছেন এবং জিতেছেন যে কী করে নির্বাচন করতে হয় এবং জিততে হয় তা তাঁর এবং তাঁর সেনাপতি অমিত শাহের এখন কণ্ঠস্থ। যেখানে যেটুকু দরকার সেখানে সেটুকুই খরচ করে কাজ হাসিল করতে সিদ্ধহস্ত তাঁরা। প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে রাজনৈতিক বুদ্ধি প্রয়োগ করে মোদী ও শাহ আজ যেই কম্বিনেশনটি তৈরী করেছেন নির্বাচন জেতার জন্যে তার বিকল্প এখনও আবিষ্কৃত হয়নি আর কবে হবে সেই গ্যারান্টিও বিরোধীরা দিতে পারবে না। তাঁরা লড়ছেন প্রথাগত উপায়ে: চিৎকার চেঁচামেচি করে, মোদীকে দাঙ্গাবাজ বা ব্যর্থ প্রশাসক বলে অভিযুক্ত করে। কিন্তু ধুরন্ধর মোদী কিন্তু কখনও রণে ভঙ্গ দেন না নির্বাচন হোক বা না হোক। তাঁকে মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ না করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলেও দলীয় প্রযুক্তিগত কাজকর্ম বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি মানুষের খুব কাছে পৌঁছে গিয়ে প্রয়োজনীয় বিশ্বাসযোগ্যতাটি কিনে নিয়েছেন আর এখানেই তাঁর বর্ম অভেদ্য হয়ে গিয়েছে।
দু'হাজার চব্বিশে কি তাহলে মোদী জাতীয় স্তরেও হ্যাট্রিক করবেন?