তেলের দাম থেকে টাকার পতন, ৫ সূত্রে বিপর্যয় প্রতিরোধের চেষ্টায় মোদী সরকার
তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং টাকার দামে পতনের মোকাবিলায় এবার ৫ সূত্র-কে সামনে নিয়ে এল মোদী সরকার। আর এই ৫ সূত্রেই ভারতীয় অর্থনীতির দুই গুরুত্বপূর্ণ অংশকে সুস্থীর করতে চাওয়া হচ্ছে।
তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং টাকার দামে পতনের মোকাবিলায় এবার ৫ সূত্র-কে সামনে নিয়ে এল মোদী সরকার। আর এই ৫ সূত্রেই ভারতীয় অর্থনীতির দুই গুরুত্বপূর্ণ অংশকে সুস্থীর করতে চাওয়া হচ্ছে। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে আরবিআই গর্ভনর উর্জিত প্যাটেল, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠক শেষেই এই ৫ সূত্রের কথা জানান অরুণ জেটলি। সেইসঙ্গে বলেন মশালা বন্ডস থেকে উইথহোল্ডিং ট্য়াক্স তুলে নেওয়া, এফপিআই-এ আরও সুযোগ সুবিধা আনা এবং আবশ্যিক নয় এমন পণ্যের আমদানি বন্ধ করে সরকার চাইছে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিটের ভারকে কমাতে। এবং এর ফলে তেলের দামের যে ঊর্ধ্বগতি তাতেও নিয়ন্ত্রণ আনা যাবে বলে জানান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
দেশের অর্থনৈতিক হালের একটা বর্তমান চিত্র এদিন প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত প্যাটেল, অর্থমন্ত্রকের আধিকারিকরা। এঁদের সকলেরই বক্তব্য, গত কয়েক সপ্তাহে যে ভাবে তেলের দাম দ্রুত গতিতে শতরানের লক্ষে দৌড়চ্ছে এবং সমানে টাকার দামে পতন হচ্ছে তার জন্য বহির্দেশের নীতি দায়ী। যার প্রভাব পড়ছে ভারতীয় অর্থনীতি। এঁদের সকলেরই বক্তব্য এই মুহূর্তে দেশের জিডিপি অন্যান্যে বহু দেশের থেকে অনেক উপরে। সেই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির হারও কম। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে ভারতীয় অর্থনীতি এক শক্ত বুনিয়াদের উপরেই দাড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু যাবতীয় সমস্যার উদ্রেক করেছে কারেন্ট অ্য়াকাউন্ট ডেফিসিট। যা গত কয়েক মাস ধরে সমানে বেড়ে চলেছে। আর জন্য বেশকিছু বহির্দেশের নীতি-ই দায়ী।
অরুণ জেটলি তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে বহির্দেশের এই নীতি বা এক্সটার্নাল ফ্যাক্টরসের মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠা-নামা, আমেরিকা ও চিনের মধ্যে চলা মহাদেশীয় ব্যবসায়ীক লড়াই বা ট্রেড ওয়ার-এর মতো বিষয়গুলিকে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে এই জিনিসগুলির জন্য বর্তমানে একটা অর্থনৈতিক অস্থীরতা তৈরি হয়েছে।
এই কারণে সরকার কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট বা সিএডি-কে কমানোর জন্য নানা ধরনের উপায় বের করেছে। এর জন্য ৫ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান জেটলি। তিনি জানান, ভারতীয় অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবেশকে আরও সুগম করতে হবে। নতুন পদক্ষেপে আশা করা হচ্ছে অন্তত ৮-১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রবেশ করবে। এর ফলে সিএডি-তে খানিকটা হলেও স্বস্তি আসবে। বহির্দেশীয় কিছু ফ্যাক্টরের জন্য ২০১৮-১৯-এর প্রথম তিন মাসে জিডিপি-তে সিএডি-র অবদান ২.৫ শতাশ দেখা গিয়েছে বলেও জানান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
পরিকাঠামোগত ঋণে ম্যান্ডেটরি হেজিং কন্ডিশন পুনপর্যালোচনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান অরুণ জেটলি। এই পরিকাঠামোগত ঋণ-এর সঙ্গে এক্সটার্নাল কমার্শিয়াল বোরোয়িং বা ইসিবি-র সংযোগ রয়েছে বলেই এই ক্ষেত্রটিকে সরকার নজরদারির মধ্যে আনছে। ইসিবি-তে থাকা অর্থ ৩ বছরের আগে তুলতে পারেন না বিনিয়োগকারী। এখন সেটাকে ১ বছর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে এই ক্ষেত্রে বৈদিশিক মুদ্রার বিনিয়োগ বাড়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কর্পোরেট বন্ড পোর্টফোলিও-তে এফপিআই-এ ২০ শতাংশ এক্সপোজার দেওয়া হয়। এবার তার ক্ষেত্র ও সীমাকেও বাড়াতে চলেছে মোদী সরকার। এখন পর্যন্ত ঠিক হয়েছে হয় ২০ শতাংশ এক্সপোজারের সুবিধা দেওয়া হবে সিঙ্গল কর্পোরেট গ্রুপ অথবা কোনও সংস্থা অথবা এটাকে ৫০ শতাংশ এক্সপোজারে নিয়ে যাওয়ার। গত এপ্রিলেই রিজার্ভ ব্য়াঙ্ক এফপিআই-এর উপরে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল।
মশালা বন্ডসের ক্ষেত্রে ২০১৯-এর মার্চ পর্যন্ত উইথহোল্ডিং ট্যাক্স লাগু না করার। এই মুহূর্তে মশালা বন্ড-এ উইথহোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয় ৫ শতাংশ। কিন্তু, বর্তমান অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত কোনো মশালা বন্ডকে বাজারে ছাড়া হয়নি। এমনকী মশালা বন্ড নিয়ে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির উপরে যে মার্কেটিং নিষেধাজ্ঞা ছিল তাও তুলে নেওয়ার ব্য়াপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আবশ্যিক নয় এমন পণ্য়ের আমদানিতে যে লাগাম টানার কথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন তাতে কোন কোন পণ্যকে রাখা হচ্ছে- তা স্পষ্ট করেননি জেটলি। তাঁর মতে সিএডি-কে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আমদানী কমাতে হবে রফতানি বাড়াতে হবে। এই নীতি এখন নিয়েছে সরকার।
বৈঠকে উপস্থিত এবং পরে অরুণ জেটলির সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে আসা অর্থনৈতিক বিষয়ের সচিব এস সি গর্গও জানান, যে ৫ পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে নিশ্চিতভাবেই একটা আশাপ্রদ ফল বের হবে। তবে, এই আশাপ্রদ ফলের পরিমাণ ঠিক কতটা তা এু মুহূর্তে বলা অসম্ভব। আশা করা যাচ্ছে ৮-১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোতে প্রবেশ করবে।