লাদাখ উত্তেজনার মাঝেই জিনপিংয়ের মুখোমুখি হবেন মোদী, সম্মেলনে আলোচনা হবে কী নিয়ে?
১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ব্রিকস-এর শীর্ষ সম্মেলন। ওই দিন সদস্য দেশগুলি একাধিক নতুন নীতি গ্রহণ করবে। এবং লাদাখ নিয়ে চলতে থাকা চরম উত্তেজনার মাঝে সেদিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একে অপরের মুখোমুখি হবেন। এবং অনেক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞের মত, এই মঞ্চেই লাদাখ সমস্যার সমাধান ঘটাতে কথা বলতে পারেন দুই দেশের শীর্ষ নেতা।
থিম : বিশ্ব স্থায়িত্ব ও উদ্ভাবনী বৃদ্ধি
ব্রিকস-এর ১২ তম শীর্ষ সম্মেলনের এবারের থিম বিশ্ব স্থায়িত্ব ও উদ্ভাবনী বৃদ্ধি। শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য- সদস্য দেশগুলির মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতা বাড়ানো। এছাড়াও জীবনের মানের উন্নতিতে অবদান রাখা। ২০২০ সালে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িত থাকা সত্ত্বেও পাঁচটি সদস্য দেশই নিজেদের মধ্যে প্রধান তিনটি স্তম্ভ তথা শান্তি-সুরক্ষা, অর্থনীতি-অর্থ, সাংস্কৃতিক বিষয়ে আদান-প্রদানের জন্য ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারিত্ব অক্ষুন্ন রেখেছে।
তাড়াহুড়ো করছেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
দেশকে সুপারপাওয়ার বানাতে তাড়াহুড়ো করছেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চিনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অসাধারণ। এখন বিরাট সংখ্যায় দেশ চিনা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এবং বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতিকে টপকে আজ তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উপরে ওটার লড়াইতেই নিজেদের কর্তৃত্ব বিস্তার করতে ভআরতের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে চিন।
জিনপিংয়ের স্বপ্নের প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ
চিন ভারতের ওপর অখুশি, কারণ ভারত জিনপিংয়ের স্বপ্নের প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে। এই প্রকল্প এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও দুই আমেরিকার মধ্যে দিয়ে যায়। একটি সম্প্রসারণবাদী দেশ হওয়ায় চিন বিআরআই-এর মাধ্যমে তাদের প্রভাব বহুগুণ বাড়িয়েছে এবং শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা, পাকিস্তানের গদরের মতো বন্দর আত্মসাৎ করতে সক্ষম হয়েছে।
ভারত-চিন সংঘাত নিয়ে আলোচনা
বিআরআই ছাড়াও, ভারতীয় জনতা পার্টির দুই গুরুত্বপূর্ণ সাংসদ মে মাসে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের ভার্চুয়াল শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এবং জুন মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফোন করে জি-৭ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানান। আর টেলিফোনে তাঁরা ভারত-চিন সংঘাত নিয়েও আলোচনা করেন।
ভারত আস্তে আস্তে আমেরিকার কাছাকাছি আসছে
আবার জুন মাসে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল সম্মেলন করেন মোদী। চিন ও অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্কে টানাপোড়েন, কারণ অস্ট্রেলিয়া করোনা ভাইরাস ছড়ানোর জন্য চিনকে দায়ি করছে। চিন মনে করছে, ভারত আস্তে আস্তে আমেরিকার কাছাকাছি আসছে।
ভারতকে ভয় দেখানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে
ভারতকে ভয় দেখাতে চিনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং দিল্লি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে বেজিংকে এপ্রিল ২০২০-র অবস্থানে ফেরত যেতে হবে। ভারত শুধু সেনা মোতায়েনই করেনি, পাশাপাশি ফরওয়ার্ড এলাকাগুলোতে বায়ুসেনার বিমানও তৈরি রাখা হয়েছে। ভারতের অনুরোধে নির্ধারিত সময়ের আগেই ফ্রান্স পাঁচটি রাফাল যুদ্ধবিমান দিয়েছে।
ভারতকে সমর্থন করছে যে দেশগুলি
এরই মাঝে আমেরিকা, ভিয়েতনাম, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও তাইওয়ানের মতো বহু দেশ ভারতকে সমর্থন করছে। তাই চিন পিছু হটবে। বিশ্লেষকরা এও বলছেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজের দেশের কঠোর সমালোচনার মুখে এবং দৈনন্দিন সমস্যা থেকে জনগণের নজর ঘোরাতেই তিনি ভারতকে আক্রমণ করেছেন। তবে এই সব বিষয়ে যদি শীর্ষ নেতারা আলোচনা করেন, তবে সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে, মত একাংশের।
জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদীর সাক্ষাৎ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ
উল্লেখ্য, মে মাসের শুরু থেকে তেতে রয়েছে ভারত-চিন সীমান্ত। একাধিক বৈঠকের পরও রফা মেলেনি। ইন্দো-চিন সীমান্তে উত্তেজনার আবহে একাধিকবার বেজিংকে কড়া বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকি, চিনের বিরুদ্ধে রীতিমতো ডিজিট্য়াল স্ট্রাইক করে ভারত। চিনা অ্য়াপ ওয়েইবো অ্যাকাউন্ট ডিলিট করেন মোদী। সংঘাতের আবহে এই প্রথমবার শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদীর সাক্ষাৎ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।