রাফালে বিতর্কে এন রাম-এর বোমা বর্ষণ অব্যাহত, ফের করলেন নয়া পর্দা ফাঁস
রাফালে বিতর্কে ফের এক নয়া পর্দা ফাঁস। আর এই পর্দা ফাঁস করলেন এন রাম। দ্য হিন্দু সংবাদপত্রের প্রাক্তন এডিটর-ইন-চিফ এবার রাফালে বিতর্কে সামনে নিয়ে এসেছেন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
রাফালে বিতর্কে ফের এক নয়া পর্দা ফাঁস। আর এই পর্দা ফাঁস করলেন এন রাম। দ্য হিন্দু সংবাদপত্রের প্রাক্তন এডিটর-ইন-চিফ এবার রাফালে বিতর্কে সামনে নিয়ে এসেছেন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাঁর দাবি, ব্যাঙ্ক গ্য়ারান্টার না থাকায় চুক্তির মূল্য বেড়ে গিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদী সরকার ব্যাঙ্ক গ্যারান্টার না রাখার সুবিধা দিয়েছিল রাফালে সরবরাহকারী ফরাসী সংস্থা ডাসল্ট এভিয়েশনকে। কিন্তু, এতে সরকারের তো কোনও ফায়দাই হয়নি, উল্টে মোট চুক্তির মূল্য বেড়ে গিয়েছে।
দ্য হিন্দু-তে মার্চের ৬ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এন রাম দাবি করেছেন, ডাসল্ট-কে 'লেটার অফ কমফোর্ট' দেওয়া হয়েছিল মোদী সরকারের পক্ষ থেকে। ব্যাঙ্ক গ্য়ারান্টার না থাকার ফলে যে চুক্তি মূল্য বেড়ে যাচ্ছে তা নিয়ে চুক্তি-র মধ্যস্থতাকারী ইন্ডিয়ান নেগশিয়েটিং টিম ২১ জুলাই ২০১৬ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে একটি রিপোর্ট জমা করেছিল। এই রিপোর্ট পরিষ্কার বলা হয় যে ব্যাঙ্ক গ্য়ারান্টার-সহ চুক্তি রূপায়ণে অস্বীকার করেছে ডাসল্ট। এর ফলে ৫৭৪ মিলিয়ন ইউরোর যে ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তা আর পাওয়া যাবে না। কার্যক্ষেত্রেও দেখা যায় যে ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এনডিএ সরকার ও ফরাসী সরকারের মধ্যে ৩৬টি রাফালে এয়ারক্র্য়াফট এবং তার অস্ত্র-শস্ত্র-সহ যে চুক্তি স্বাক্ষরতি হয় তাতে ২৪৬.১১ মিলিয়ন ইউরো অতিরক্ত গুনতে হচ্ছে।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে এনডিএ সরকার যে চুক্তি স্বাক্ষর করে তাতে শেষপর্যন্ত ৩৬টি রাফালের মূল্য দাঁড়ায় ৭৮৭৯.৪৫ মিলিয়ন ইউরো। ইন্ডিয়ান নেগশিয়েশন টিম যে রিপোর্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে জমা করেছে তার ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে কীভাবে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টার না থাকার সুবিধা ডাসল্টকে দেওয়ার পরও চুক্তি মূল্যে বেড়ে গিয়েছে। আর এই অঙ্কটা ইউপিএ-র আমলে হওয়া চুক্তি মূল্য থেকে ২৪৬.১১ মিলিয়ন ইউরো বেশি। রিপোর্টে দেখানো হয় ব্যাঙ্ক গ্যারান্টার থাকলে সেখানে ৫৭৪ মিলিয়ন ইউরোর ছাড় মিলত। ফলে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টারে চুক্তি মূল্য ৮০৫৯.৮৭ মিলিয়ন ইউরো পড়লেও তা থেকে ৫৭৪ মিলিয়ন ইউরোর ছাড়কে বাদ দিলে তা নেমে আসছিল ৭৪৮৫.৮৭ মিলিয়ন ইউরোতে। আর ব্যাঙ্ক গ্যারান্টার ছাড়া চুক্তিতে মোট মূল্য দাঁড়ায় ৭৮৭৯.৪৫ মিলিয়ন ইউরো।
রাফালে চুক্তিতে যাতে ব্যাঙ্ক গ্য়ারান্টি রাখা হয় তার জন্য সাত সদস্যের ভারতীয় মধ্যস্থতাকারী দল সমানে ফরাসী সরকারকে চাপে রেখেছিল। যেহেতু এই চুক্তিতে একটা বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ হবে সেই কারণে এই চাপ দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু, উল্টে ব্যাঙ্ক গ্য়ারান্টি না থাকলে দাম কম পড়ার লোভ দেখায় ফরাসী সরকার। শেষমেশ ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি না ছাড়াই রাফালে চুক্তি রূপায়িত হয় বলে তাঁর রিপোর্টে দাবি করেছেন এন রাম। তিনি তাঁর তৈরি করা প্রতিবেদনে দাবি করেছেন, সুপ্রিম কোর্টে খামবন্দি যে তথ্য সরকার সরবরাহ করেছে তাতে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টার না থাকার ফলে চুক্তি মূল্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি রাখা হয়েছিল কি না তাতে সন্দেহ আছে। অথচ এনডিএ সরকার সমানে দাবি করে চলেছে ইউপিএ সরকার এমএমআরসিএ প্রকিউরমেন্ট নিয়ে চুক্তি করেছিল তার থেকেও তাঁদের করা চুক্তি অনেকবেশি লাভদায়ক এবং অর্থকারী। এন রাম-এর মতে এই দাবি পুরোপুরি ভুল। এই প্রতিবেদনে এন রাম আরও জানিয়েছেন যে, এনডিএ সরকারের নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি ফরাসী সংস্থা ডাসল্টকে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টার না রাখার সুবিধা দিয়েছিল। আর বিনিময়ে ফরাসী প্রেসিডেন্টের একটা লেটার অফ কনফেশন নিয়ে রাখে। আইনত যার কোনও বৈধতাই নেই।