মুসলিম রোগীদের করোনা পরীক্ষা নেগেটিভ হলে তবেই চিকিৎসা, বিজ্ঞাপন ঘিরে বিতর্ক মিরাঠের হাসপাতালে
মুসলিম রোগীদের করোনা পরীক্ষা নেগেটিভ হলে তবেই চিকিৎসা, বিজ্ঞাপন ঘিরে বিতর্ক মিরাঠের হাসপাতালে
উত্তরপ্রদেশের মিরাঠের এক বেসরকারি ক্যান্সার হাসপাতাল একটি বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়ালো। শুক্রবার ওই হাসপাতালের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে মুসলিম রোগীদের করোনা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই তাঁদের ওই হাসপাতালে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়াও মুসলিম রোগীদের সঙ্গে করে একজন দেখভাল করার কাউকে আনতে হবে, যাঁর রিপোর্টও নেগেটিভ হতে হবে।
মুসলিম রোগীদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে তবেই চিকিৎসা
এই বিজ্ঞাপনে বৈষম্যমূলক বিষয় রয়েছে বলে বহু অভিযোগ জমা পড়ে জেলা প্রশাসনের দপ্তরে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই হাসপাতালকে সতর্ক করে নতুন এই নিয়ম তুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে, নতুবা হাসপাতালের মেডিক্যাল লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে। এই বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘হাসপাতালের কর্মী ও রোগীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমস্ত নতুন মুসলিম রোগী ও তাঁদের সঙ্গীদের কোভিড-১৯-এর পরীক্ষা করানোর অনুরোধ করা হচ্ছে এবং নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পরই হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি নেওয়া হবে।' ভ্যালেন্টিস ক্যান্সার হাসপাতাল এ ধরনের একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে ডৈনিক জাগরণ সংবাদপত্রে এবং দাবি করা হয়েছে যে বহু মুসলিম রোগী সরকারের নিয়ম-রাতি অনুসরণ করছেন না, তাঁরা মাস্ক ব্যবহার বা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছেন না এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন।
বিজ্ঞাপন বৈষম্যমূলক নয়, দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের
যদিও বিজ্ঞাপনে সব মুসলিমদের নেগেটিভ রিপোর্ট আনতে হবে বলে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সেখানে কিছু ছাড়ের কথাও বলা আছে। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘এই নিয়ম চিকিৎসক, প্যারামেডিক্যাল কর্মী, পুলিশ অফিসার এবং পাশাপাশি সেই মুসলিমরাও যাঁরা বহু মুসলিম জনসংখ্যার সঙ্গে বাস করেন না।' এই বিজ্ঞাপনের জন্য আসা অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে এই বিজ্ঞাপন বৈষম্যমূলক নয়, তবে পরে হাসপাতালের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ তথা হাসপাতাল পরিচালন কমিটির সঙ্গে যুক্ত ডাঃ অমিত জৈন বলেন, ‘আমরা দেশবাসীর কাছে আবেদন করতে চাই যে আমাদের স্বাস্থ্য কর্মী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সমর্থন করুন এবং কোনও সমস্যার সৃষ্টি করবেন না যা অনষদের জন্য বিপদজ্জনক।' তিনি বলেন, ‘আমাদের ৭০ শতাংশ মুসলিম রোগী, একশোরও বেশি মুসলিম রোগী অতীতে এই হাসপাতাল থেকে ক্যান্সার মুক্ত হয়েছে। কিছু মানুষ রয়েছে যাঁরা ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন।'
ভুলভাবে বিজ্ঞাপনকে দেখানো হচ্ছে
এই বিজ্ঞাপনের শব্দমালা ও বৈষম্যমূলক বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ডাঃ জৈন বলেন, ‘কিছু শব্দ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে ও ভুলভাবে লেখা হয়েছে'। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু বলতে চেয়েছি যে যাঁরা হটস্পটে রয়েছে তাঁদের স্ক্রিনিং হওয়া দরকার।'
হিন্দু–জৈন নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য
বিজ্ঞাপনটিতে হিন্দু ও জৈন সম্পর্কেও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে। এই দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উচ্চবিত্ত মানুষগুলো ‘কৃপণ' হয় বলে দাবি সেই বিজ্ঞাপনে। তাঁদের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার ফান্ডে টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে হাসপাতালে ভর্তির সময় পিএম ফান্ডের নামে রোগী ও তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিতর্কিত বিজ্ঞাপন তড়িঘড়ি প্রত্যাহার করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
কড়া পদক্ষেপ পুলিশ–প্রশাসনের
মিরাঠ মেডিক্যাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে যদি এই হাসপাতাল ক্ষমা না চায় ও এই বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার না করে নেয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মিরাঠ জেলা প্রশাসকের মুখ্য মেডিক্যাল অফিসার রাজ কুমার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা রবিবার তাদের নোটিশ দিয়েছি। যদি তারা পরবর্তী তিনদিনের মধ্যে ক্ষমা না চায় তবে আমরা হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করব। তাদের স্পষ্টভাবে বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া দরকার। আমাদের দেশে এ জাতীয় কোনও ভাষা ও বৈষম্য অনুমোদিত নয়।' ভ্যালেন্টিস হাসপাতাল বিজ্ঞাপনে এও জানিয়েছে যে যদি কোনও জরুরি বিষয় হয়, মুসলিমরা হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবে কিন্তু ওই রোগী ও তার সঙ্গীর নমুনা সহাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করে তা রোগীর খরচে পরীক্ষা করবে। এই হাসপাতালে কোভিড-১৯-এর পরীক্ষার খরচ ৪,৫০০ টাকা। মিরাঠ পুলিশের নির্দেশ অনুসারে ইনচোলি পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে। এই পুলিশ থানার অন্তর্গত এই হাসপাতালটি।
প্রতীকী ছবি
সংক্রমণ রুখতে কড়া সিদ্ধান্ত তেলঙ্গানা সরকারের, নিষিদ্ধ হল অনলাইনে ফুড ডেলিভারিও