কীর্তন গেয়ে হিন্দু রীতি মেনে শেষকৃত্য, হিন্দু মহিলার শববাহক হলেন মুসলিমরা
কীর্তন গেয়ে হিন্দু রীতি মেনে শেষকৃত্য, হিন্দু মহিলার শববাহক হলেন মুসলিমরা
ধর্মীয় বিভাজনের ওপরে যখন মানবিকতা চলে আসে, তখন প্রতিবেশীরা জয় ও দুঃখ ভাগ করে নেন একত্রিত হয়ে। সেরকমই নজির দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গে। যেখানে হিন্দু মহিলার শেষকৃত্য করল মুসলিমরা।
মুসলিম শববাহক হিন্দু মৃতদেহের
রতন সাহার ৬০ বছরের মা অঞ্জলি দেবী শুক্রবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মাতৃহারা পুত্র বলেন, ‘তাঁরা আমার নিজের ভাই, আমার পরিবার। তাঁদের পদবী কি তাতে কিছু আসে যায় না এবং তাঁদের কাছেও এটা কোনও বড় ব্যাপার নয় যে আমি তাঁদের ধর্মে বিশ্বাসী নই, তাঁরা সকলে আমার মায়ের শববাহক।'
ডালবক্সতোলার একমাত্র হিন্দু পরিবার
কলকাতা থেকে ৩৫০ কিমি দূরে অবস্থিত মালদা জেলার ডালবক্সতোলার বাসিন্দা অঞ্জলী সাহা। তিনি ৪০০ জন মুসলিম অধ্যুষিত এই গ্রামে একা হিন্দু পরিবার থেকে ছিলেন। গ্রামে সাহা পরিবার একা হিন্দু হলেও তাঁরা কখনই একা ছিলেন না। অঞ্জলী দেবী তাঁর স্বামীকে হারান গত বছর এবং সাতজনের পরিবারে একমাত্র তাঁর ছেলে রতনই পুরুষ সদস্য। শুক্রবার অঞ্জলী দেবীর মৃত্যুর খবর শোনার পর মুসলিম প্রতিবেশীরা রতন সাহাকে সাহায্যের জন্য দৌড়ে আসেন, যেমনটা এসেছিলেন অঞ্জলী দেবীর স্বামী মারা যাওয়ার সময়। গ্রামের তরণ পঞ্চায়েতের সদস্য দাউদ শেখ বলেন, ‘বিশ্বাস হল ব্যক্তিগত। ধর্ম নিজের জায়গায় কিন্তু মানবিকতার ওপরে কিছু নেই। জন্মের সময় থেকে আমরা এই পরিবারকে চিনি, তাঁরা আমাদের মধ্যেই একজন এবং আমরা তাঁদের মধ্যে। তাই একমাত্র হিন্দু পরিবার হওয়া সত্ত্বেও এই গ্রামে তাঁদের সমান অধিকার রয়েছে। অঞ্জলি কাকিমার প্রয়ান খুব ব্যক্তিগত। আমরা যদি কাকিমার দেহ না ওঠাই তবে তাঁর ছেলের পক্ষে একা কাঁধে মৃতদেহ তোলা সম্ভব নয়।'
হিন্দু রীতি মেনেই মুসলিমরা শেষকৃত্য করেন
দাউদ এবং গ্রামের অন্য মুসলিমরা হিন্দু রীতি মেনে বাঁশ দিয়ে বাক্স তৈরি করেন এবং রঙিন কাগজ দিয়ে তা সাজান। এরপর রতনের মায়ের দেহ কাঁধে করে তুলে হিন্দু ধর্মের আঞ্চলিক গান, যা বাংলায় কীর্তন নামে পরিচিত তা গাইতে গাইতে শ্মশানের দিকে যায়। রতনের একবারও মনে হয়নি যে তিনি একা, এমনকি চিতা তৈরির সময়ও তিনি তাঁর মুসলিম ভাইদের পাশে পেয়েছেন। রতন জানান যে তাঁর বাবার মৃত্যুর সময়ও তিনি এভাবেই মুসলিম ভাইদের পাশে পেয়েছেন এবং মা মারা যাওয়ার সময়ও তাই হল। রতন বলেন, ‘মানুষ হিন্দু-মুসলিম নিয়ে কথা বলেন, আমি তাঁদের বলব আমাদের গ্রামে এসে দেখুক। এখানে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও সম্প্রীতি রয়েছে। আমি অসহায় এবং শোকাহত ছিলাম কিন্তু বুঝতে পারি নি কিভাবে সবকিছু সুবিন্যস্ত ও সহজেই আমার মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়ে যায়। আমার মা যদি আমায় আশীর্বাদ করেন আমি বলব আমাদের গ্রামকেও আশীর্বাদ করতে।'
সাম্প্রদায়িক হিংসা
মালদা জেলার কালিয়াচক, যা ডালবক্সতোলা থেকে ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত, ২০১৬ সালে এখানে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটে। একই ধরনের ঘটনা ঘটে রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও। কিন্তু এই গ্রামের গল্প এক আলাদা উদাহরণ বহন করছে সাম্প্রদায়িক হিংসার মাঝেও।
'মৃতদেহের অবমাননা ক্ষমা চান মুখ্যমন্ত্রী' রাজ্যপালের টুইটের পাল্টা জবাব স্বরাষ্ট্র দফতরের