মুসলিম নববধূ শ্বশুরবাড়ি থেকে ‘মেহের’ হিসাবে বইয়ের দাবি করে নজির গড়লেন
পণের বদলে বই চেয়ে নজির গড়লেন পশ্চিমবঙ্গের এক নববধূ। মুসলিম প্রথা অনুযায়ী বরের বাড়ির লোক বউয়ের পরিবারকে মেহের বা পণ দেন। কিন্তু মূর্শিদাবাদের সূতির বাসিন্দা ২৪ বছরের ময়না খাতুন তাঁর শ্বশুরবাড়ির থেকে ৬০টি বইয়ের দাবি করেন। ময়না কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএন কলেজ থেকে আর্ট নিয়ে স্নাতক হয়েছেন এবং সোমবার তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় ২৪ বছরের মিজানির রহমানের সঙ্গে। যিনি ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল নিয়ে স্নাতক হয়েছেন।
দেখাশোনা করে বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও ময়নার প্রথম থেকেই তাঁর অভিভাবককে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে রীতিগত মেহেরে তিনি বইয়ের দাবি করবেন বরের পরিবারের থেকে। জানুয়ারিতে তাঁদের বিয়ে নিয়ে আলোচনা হয় দুই পরিবারের মধ্যে। ময়নার এক পরিবারের সদস্য বলেন, 'ঐতিহ্যশালী মোহরের ওপর ময়নার কোনও আগ্রহ নেই, যা আজকের দিনে মূল্য ৫০ হাজার টাকা। প্রথমে ময়নার পরিবারের থেকে বিষয়টি শুনে একটু অবাক হলেও মিজানুরের পরিবার এই দাবি খুশি মনে মেনে নেন।’ ময়নার দাবি অনুযায়ী মিজানুরের পরিবার ৬০টি নয়, বরং আরও বেশি বই পাঠিয়েছে ময়নার বাড়িতে।
ময়নার আদিবাড়ি খিদিরপুর গ্রামে যখন বরের পরিবারের পক্ষ থেকে কার্টন ভর্তি করে বিভিন্ন ধরনের বই পাঠানো হয় ময়না খুবই খুশি এবং অবাক হন। ওই বইয়ের মধ্যে যেমন ছিল বাংলায় কোরান, তেমনি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন ধরনের বই। মিজানুরের পরিবারের এক সদস্য জানান, তাঁরা ময়নার অসাধারণ অনুরোধ শুনে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন এবং তাঁরা ময়নাকে তাঁর নিজের খরচের জন্য কিছু অর্থও দিয়েছেন। মেহের হিসাবে বইয়ের দাবি করায় খুবই খুশি হয়েছেন সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল হক। তিনি বলেন, 'ময়নার মতো মেয়েরা পরিবারের সঙ্গে আমাদেরকেও গর্বিত করেছে।’
ময়না বলেন, 'ছোট থেকেই আমার বইয়ের প্রতি টান ছিল।’ তিনি এও জানান যে কিছু বছর আগে কেরলের এক নববধূ এরকমই এক দাবি করেছিলেন, তখন থেকে তাঁর এই একই ইচ্ছা ছিল।