লকডাউনে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিম-দলিতরা ! শুধুমাত্র খাদ্যাভাবেই দেনার দায়ে জর্জরিত ৪৫% মানুষ
লকডাউনে সর্বাধিক খাদ্যাভাবে ভুগেছে দেশের মুসলিম ও দলিত সমাজ, বলছে সমীক্ষা
করোনা লকডাউনেই বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে ভারতীয় অর্থনীতি। বেহাল দশা বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশগুলিরও। দারিদ্র সীমার নীচে চলে গিয়েছেন বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ। এরই মধ্যে একটি সমীক্ষার ফলাফল চমকে দিয়েছে সমাজবিজ্ঞানীদের। 'হাঙ্গার ওয়াচ' নামক সংস্থার 'রাইট টু ফুড' ক্যাম্পেনের সমীক্ষা রিপোর্টে স্পষ্ট বলছে, ভারতে লকডাউন পরবর্তী সময়ে এবং এই টানাপোড়েনে সবচেয়ে অধিক সমস্যায় পড়েছেন দলিত ও মুসলিমরা। এমনকী তিনটি কৃষিবিলের কারণে আগামীতে আরও বাড়তে চলেছে হাহাকার।
খাদ্যাভাবে ধুঁকছে মুসলিম-দলিতরা
সূত্রের খবর, হাঙ্গার ওয়াচ সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগেই এই সমীক্ষা চালানো হয়। আর সেই রিপোর্টে সামনে আসতেই সামনে চলেছে এসেছে ক্ষুধার্থ ভারতের এক ভয়াবহ দৃশ্য। জানা যাচ্ছে, লকডাউনে প্রতি ৪ দলিতের মধ্যে একজন ও প্রতি ৪ মুসলিমের মধ্যে একজন ক্ষুধার্ত থেকেছেন। অন্যদিকে প্রতি ১ জন ক্ষুধার্ত মানুষ পিছু সাধারণ মানুষের সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১০ জন। রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ১১টি রাজ্যের ৪৫% নাগরিক শুধু খাদ্যের জন্য অর্থ ঋণ নিয়েছেন, যা দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত সমাজবিজ্ঞানীরা।
লকডাউনে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দলিতরা
হাঙ্গার ওয়াচের রিপোর্ট বলছে, লকডাউনে সাধারণ মানুষের থেকে দলিতদের টাকা ধার করার পরিমাণ ২৩% বেশি। পাশাপাশি দলিতদের খাদ্য ভোগের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৭৪%! অন্যদিকে যে ১১টি রাজ্যে সমীক্ষা হয়, সেই রাজ্যগুলিতে প্রতি ৪ জনের ১ জন গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত অভুক্ত থেকেছে। রিপোর্টে এও জানা গেছে, এর মধ্যে লকডাউনের আগে পর্যন্ত প্রায় ৫৬% কখনও অভুক্ত থাকেননি।
প্রায় ৪০০০ জনের উপর সমীক্ষা
হাঙ্গার ওয়াচ-এর তরফে মূলত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, দিল্লি, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গের স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে প্রায় ৪০০০ জনের উপর সমীক্ষা চালানো হয় বলে জানা যাচ্ছে। সমীক্ষায় লকডাউন পূর্ব (এপ্রিল-মে) ও লকডাউন পরবর্তী (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) পরিস্থিতির মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার করা হয়। সমীক্ষার ফল অনুযায়ী, মাত্র ৩%-এর রোজগার আগের অবস্থায় ফিরলেও এপ্রিল-মে মাস নাগাদ কোনো রোজগার হয়নি প্রায় ৪৩% মানুষের।
নতুন বছরে অবস্থার আরও অবনতির আশঙ্কা
অন্যদিকে সমীক্ষার রিপোর্ট এও বলছে, খাদ্য ভোগেরও পরিমাণও আশঙ্কাজনক ভাবে কমেছে একাধিক রাজ্যে। ১১ রাজ্যে এই পরিমাণ গড়ে কমেছে প্রায় ৬৬%। ঝাড়খণ্ডে অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেখানে খাদ্যদ্রব্য ব্যয়ের পরিমাণ কমেছে ৮২%! গবেষকদের মতে, লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরা। হাঙ্গার ওয়াচের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত প্রত্যেক পরিবারকে সুষম খাদ্য ও সঠিক কর্মসংস্থান না দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।