গোদের উপর বিষফোঁড়া, রেহাই নেই সদ্যজাতদের! করোনার ছত্রতলেই ভয় ধরাচ্ছে এই নয়া মারণব্যাধি
কোভিড সারলেও নেই রেহাই! মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোমের কবলে শিশুরা
একদিকে লকডাউনের জেরে যেমন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে একাধিক বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ, তেমনই অন্যদিকে করোনার ছত্রতলে ক্রমশ বাড়ছে কালো-সাদা ফাঙ্গাসের প্রকোপ! এমতাবস্থায় গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো বর্তমানে চিকিৎসকদের চিন্তা বাড়াচ্ছে সদ্যজাতদের MIS-C (মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম)। রাজধানী দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলের পর এইবার গুজরাতে ক্রমশ বাড়ছে রোগের প্রকোপ। সূত্র মতে, গুজরাটে মূলত প্রসবের আগে করোনা থেকে সেরে ওঠা মায়েদের সদ্যোজাত ভূমিষ্ঠ হওয়ার ১২ ঘন্টার মধ্যে আক্রান্ত হচ্ছে এই ভয়াবহ রোগে।
রাজকোটে আক্রান্ত ১০০ শিশু
সূত্রের খবর, গত ক'দিনে আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে ১০ আক্রান্ত শিশুর খবর মিলেছে, যাদের মধ্যে ২ জন মারা গেছে। পাশাপাশি রাজকোট থেকে ১০০ শিশুর এমআইএস-সিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। অন্যদিকে আহমেদাবাদের মেমনগরে আইসিইউতে ভর্তি এক এমআইএস-সি আক্রান্ত শিশু। শিশুটির মা প্রসবের দেড়মাস আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন কোভিডে, জানান ডঃ দেবঙ সোলাঙ্কি।
প্রথম ঢেউয়ে আক্রান্ত ২,০০০ শিশু
করোনার প্রথম জোয়ারে দেশের প্রায় ২,০০০ শিশু এমআইএস-সির কবলে পড়ে, এমনই তথ্য জানিয়েছে ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমী অফ পেডিয়াট্রিক্স ইনটেনসিভ কেয়ার চ্যাপ্টার। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, কোভিড-পরবর্তী ক্ষেত্রে প্রায় ১৭৭ শিশু দিল্লি এমআইএস-সিতে আক্রান্ত হয় দিল্লি সংলগ্ন অঞ্চলে, এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই আক্রান্ত হয় ১০৯ টি শিশু। গুরুগাঁও ও ফরিদাবাদেও ৬৮ টি শিশু আক্রান্ত হয় এই রোগে।
এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ কী?
আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালের সুপার ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডঃ রাকেশ জোশির মতে, "সদ্যোজাত থেকে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত সকলকেই আক্রমণ করতে পারে এমআইএস-সি। ভালো রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা থাকলে এই রোগকে জয় করা সম্ভব, যদিও মেদ থাকলে এই রোগের জাঁকিয়ে বসার প্রবণতা বেশি।" চিকিৎসকদের মতে, জ্বর, চামড়ায় লাল দাগ, দুর্বলতা, বমি, পেটব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট এমআইএস-সির প্রধান উপসর্গ। এর মধ্যে যেকোনো উপসর্গ দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন শিশু-বিশেষজ্ঞরা।
তিনদিনের জ্বর ও ডায়রিয়ায় নাকাল শিশুরা
বর্তমানে আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে এমআইএস-সির উপর গবেষণা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ডঃ জোশির মতে, "এখনও পর্যন্ত দেখা গেছে, শিশুদের ৩ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকছে ও ডায়রিয়ার জেরে শারীরিক দুর্বলতা বাড়ছে।" কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর গড়ে দুই থেকে ছয় সপ্তাহের মাথায় এমআইএস-সির উপসর্গ দেখা যায়, মত বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি কোভিডের জেরে উৎপন্ন হওয়া অতিরিক্ত অ্যান্টিবডি যদি শিশুর নানা অঙ্গে ক্ষতি ডেকে আনে, সেক্ষেত্রে এমআইএস-সির পথ সুগম হয় বলেও দাবি বিজ্ঞানীদের।