একই মঞ্চে মুলায়ম, মায়াবতী আজ মৈনপুরীতে; ২৪ বছর পর; লক্ষ্য, মোদীর বিদায়
একই মঞ্চে মুলায়ম, মায়াবতী আজ মৈনপুরীতে; ২৪ বছর পর; লক্ষ্য, নরেন্দ্র মোদীর বিদায়।
গত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাতে কংগ্রেস ও বামেদের ধরি-মাছ-না-ছুঁই-পানি জোট হালে পানি পায়নি ঠিকই, কিন্তু সেবারে তাদের সেই বোঝাপড়ার অন্যতম বড় আকর্ষণ ছিল কলকাতার বুকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মঞ্চ ভাগাভাগি। দুই দলের নিচুতলার কর্মীদের কাছে কী বার্তা তাতে গিয়েছিল তা পরে বোঝা গেলেও জোটপন্থী মাঝারি নেতাদের কাছে তা এক বিরাট জয় ছিল। যদিও একথা অনেকেই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে কংগ্রেস এবং বাম যেই রাজ্যে পুরোনো বৈরী, তাদের মধ্যে হঠাৎ এই সুবিধাবাদের সখ্য আদতে কতটা ফলপ্রসূ হবে? শেষ পর্যন্ত সেই সমঝোতা সফল হয়নি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝড়ের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে দু'পক্ষই।
মুলায়মের কেন্দ্র মৈনপুরীতে নেতাজি ও বেহেনজি একই মঞ্চে
এবারে একইরকম কিছু প্রত্যক্ষ করতে চলেছে উত্তরপ্রদেশ। শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, সেই রাজ্যের মৈনপুরী কেন্দ্রে এক নির্বাচনী জনসভায় এক মঞ্চে উপস্থিত হতে চলেছেন দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব এবং মায়াবতী। যথাক্রমে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) এবং বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) এই দুই নেতা-নেত্রী আগাগোড়াই প্রবল শত্রু হিসেবে পরিচিত। সেই ১৯৯৫ সালে এসপির সদস্যদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগে বিএসপি নেত্রী শপথ নেন মুলায়মের সঙ্গে চিরবৈরিতার। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী নামক এক রাজনীতিকের উত্থানে সেই শপথকে আপাতত ঠান্ডা ঘরে রেখে এসপি-র কাছাকাছি এসেছেন মায়াবতী। গতবছর কয়েকটি উপ-নির্বাচনে এসপি-র সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপিকে পরাস্ত করার পরে জোটের নয়া ফর্মুলায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন মায়াবতী এবং বর্তমানে এসপি নেতা অখিলেশ যাদব, মুলায়মের পুত্র। এবারের লোকসভা নির্বাচনেও উত্তরপ্রদেশে এসপি, বিএসপি এবং রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি) হাত মিলিয়েছে জোটে বিজেপিকে হারানোর লক্ষ্যে এবং কংগ্রেসকে তাতে গ্রহণ করেনি। কংগ্রেসের মতো দুর্বল সংগঠনের দলকে সঙ্গে নিয়ে তারা মোদীকে হারানোর এই লড়াইকে খর্ব করতে চায়নি যেরকম একদিকে, তেমনই কৌশলগত কারণেও দূরে রেখছে তাদেরকে। আর এবারে প্রায় সিকি শতক পরে মায়াবতী ও মুলায়মের এক মঞ্চে উঠে আসা তো রীতিমতো রূপকথার সামিল।
মুলায়ম এসপি-বিএসপি জোট চাইছিলেন, তা নয়
তবে, মায়াবতীর সঙ্গে তাঁর ছেলের ইদানিংকালে দহরম মহরম বাড়লেও বর্ষীয়ান 'নেতাজি' কিন্তু এই জোটে রাজি হননি বা বলতে গেলে এখনও তাঁর এই জোট নিয়ে আপত্তি যায়নি। দেওবন্দ, বাদাউন এবং আগ্রাতে দুই দলের সম্মিলিত প্রচারেও মুলায়ম যোগ দেননি এবং সূত্র অনুযায়ী তিনি শুক্রবার হতে চলা নিজের কেন্দ্রের জনসভাতেও বিএসপি নেত্রীর উপস্থিতিতে যোগ না দেওয়ার পক্ষপাতী থাকলেও পুত্র তাঁকে রাজি করান।
এসপি-র সঙ্গে মতপার্থক্য নয়, দলকে নির্দেশ মায়াবতীর
অন্যদিকে, মায়াবতীও তাঁর দলের ক্যাডারদের নির্দেশ দিয়েছেন এসপির সঙ্গে যেন কোনওরকম মতপার্থক্য বড় হয়ে না দেখা দেয় কারণ তাঁদের প্রধান লক্ষ্য এখন রাজ্যে বিজেপির পরাজয়। শুক্রবারের জনসভায় মুলায়ম ও মায়াবতী ছাড়াও থাকার কথা স্বয়ং অখিলেশ এবং আরএলডি প্রধান অজিত সিং-এর। উত্তরপ্রদেশে এবারে এসপি ৩৭টি , বিএসপি ৩৮টি এবং আরএলডি তিনটি আসনে লড়ছে; কংগ্রেসের মুখ্য দুই নেতা রাহুল গান্ধীর কেন্দ্র আমেথি এবং সোনিয়া গান্ধীর কেন্দ্র রাই বারেলিতে কোনও প্রার্থী দেয়নি এই জোট।
মৈনপুরী সহ উত্তরপ্রদেশের ১০টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এপ্রিল ২৩ অর্থাৎ এবারের লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফায়। মুলায়ম ও মায়াবতীর মঞ্চভাগ কি বিজেপি-বিরোধী শক্তিকে উদ্বুদ্ধ করবে রাজ্যে? নাকি রাহুল ও বুদ্ধদেবের মতোই আদতে তা হয়ে দাঁড়াবে এক ফ্লপ শো?
[আরও পড়ুন: ভোটের মাঝেই বড় ধাক্কা! দলে গুন্ডারাজের কথা বলে দলত্যাগ কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কার]