২০২১ সালে চরম আবহাওয়ার ঘটনায় অধিকাংশ মৃত্যু হয়েছে এই তিন রাজ্যে, দাবি আইএমডির
২০২১ সালে চরম আবহাওয়ার ঘটনায় অধিকাংশ মৃত্যু হয়েছে এই তিন রাজ্যে, দাবি আইএমডির
২০২১ সালে শুধু করোনা ভাইরাস নয়, চরম আবহাওয়ার ঘটনার ফলে ভারতের মধ্যভাগে অধিকাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার আইএমডি–এর ডিরেক্টর–জেনারেল, মেট্রোলজি, মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশ থেকে বেশিরভাগ মৃত্যু হয়েছে। তিনি এও জানিয়েছেন যে বজ্রপাতে বেশিরভাগ মৃত্যু নথিভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি, দেশে অধিকাংশ মৃত্যু হয়েছে বন্যার কারণেও।
ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে অধিকাংশ মৃত্যু
মহাপাত্র বলেন, '২০২১ সালে, চরম আবহাওয়ার কারণে মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশে অধিকাংশ মৃত্যু হয়েছে এবং মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশের অধিকাংশ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।' বিজ্ঞান ও পরিবেশ (সিএসই) কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আয়োজিত অনিল আগরওয়াল ডায়লগ ২০২২ সালের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আবহাওয়ার কারণে মৃত্যু নিয়ে এরকম জানিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র।
২০২১ সালে জুন–জুলাই মাসে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে
মহাপাত্র এও জানিয়েছেন যে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০২১ সালের জুন-জুলাই মাসে ভারী ও চূড়ান্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে দেশে। ২০২১ সালের জুন মাসে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের ২৭৭টি ঘটনা (১১৫.৬ এমএম এবং ২০৪.৫ এমএম) ঘটেছে, যার সঙ্গে ২০২০ সালের ২৬২টি ও ২০১৯ সালের ২১১ টি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এবার চূড়ান্ত ভারী বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে ২০২১ সালে ৩৫টি (২০৪.৫ এমএম-এর বেশি), যা ২০২০ সালে ৩৬টি ও ২০১৯ সালে ৫২টির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অন্যদিকে একইভাবে ২০২১ সালের জুলাইতেও ১২১টি, ২০২০ সালে ৯০ টি ও ২০১৯ সালে ১৬১টি চূড়ান্ত ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
পশ্চিম ঘাট বিপদজ্জনক বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে
ভারী এবং অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে পশ্চিম ঘাটগুলি সমগ্র দেশে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যা সংক্রান্ত ঘটনায় দেশে ৭৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহাপাত্র। এ সঙ্গে তিনি এও যোগ করেছেন যে বজ্রপাত ও বজ্র-বিদ্যুতে প্রাণ গিয়েছে ৭৮০ জনের। অপরদিকে, চরম আবহাওয়ার ঘটনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে একটি অধিবেশনে, ডাউন টু আর্থের অক্ষিত সাঙ্গোমলা দু'দিন আগে প্রকাশিত জলবায়ু পরিবর্তনের (আইপিসিসি) ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনের আন্তঃসরকারি প্যানেল থেকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি আগামী ২০ বছরে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শতাব্দীর মাঝামাঝি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে যদি জিএইচজি নির্গমনে কোনও কঠোর হ্রাস না হয়। তিনি এও বলেন, 'এমনকি যদি একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি নির্গমন নেট-শূন্যে নিয়ে আসা হয়, তবে ০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমার একটি ওভারশুট হবে। একটি ভীতিকর আভাস আগে থেকে দেওয়া ভালো তা হল আর্কটিক সেপ্টেম্বরে সমুদ্র-বরফ মুক্ত হতে পারে, ২০৫০ সাসের আগে অন্তত একবার সর্বোচ্চ গ্রীষ্মের মাসে।'
উত্তর ভারতে নদীর প্রবাহ বাড়ছে
জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এপি দিম্রি সতর্ক করে বলেন, 'হিমবাহ ক্ষয়ে যাচ্ছে এবং তার ফলে উত্তর ভারতে নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি হচ্ছে। দেশের পূর্বদিকের তুলনায় উত্তরদিকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। মেঘভাঙা বৃষ্টি খুবই সাধারণ ঘটনা উত্তর ভারতে, দেখা গিয়েছে যে হিমালয়ের পাদদেশে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির ক্ষেত্রে, বৃষ্টিপাত ১৪ শতাংশ বেড়ে যায়।' এই সেশন চলাকালীন সিএসই ডিরেক্টর, সুনীতা নারেনের গলায় একই ধরনের সতর্কতা শোনা গেল। তিনি বলেন, 'সাম্প্রতিক আইপিসিসি রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে এই ক্ষতির পিপরীতে কাজ করার জন্য বিশ্বের কাছে একটি ছোট জানলা রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি ধ্বংসাত্মক। বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা বিপর্যয়মূলক পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি আরও খারাপের দিকে এগোচ্ছে।'