ভারত–চিন অশান্তির মাঝে তাজমহলে প্রথম দর্শনার্থী চিনা নাগরিক, দানা বাঁধল নতুন বিতর্ক
দীর্ঘ ছ’মাস বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে খুলে গেল আগ্রায় পর্যটকদের মূল আকর্ষণ তাজমহল। তবে তাজের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে এদিন প্রথম দর্শনার্থী চিনের। প্রসঙ্গত, লাদাখ ইস্যু নিয়ে ভারত–চিন সংঘাতের জেরে সরকার রীতিমতো ক্ষেপে রয়েছে চিনের ওপর। তার ওপর তাজমহলের প্রথম দর্শনার্থী চিনা হওয়ার সুবাদে এর জল কোনদিকে গড়ায় তা এখনও জানা নেই।

তাজের প্রথম দর্শক চিনা
সোমবার ভোর ৫টা ৩৯ নাগাদ তাজমহলের গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম দর্শনার্থী হিসাবে ভেতরে ঢোকেন চিনা নাগরিক লিয়াং শিচেং। মার্চের পর থেকে এই প্রথম দর্শনার্থী প্রবেশ করল তাজমহলে। তবে তা ভারতীয় না হয়ে চিনের বাসিন্দা হওয়ায় একটু অস্বস্তিতে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। তার কারণ কয়েকমাস ধরে চলা ভারত-চিন সংঘর্ষ। ভারতীয় স্থাপত্যের ওপর সর্বদাই টান দেখা গিয়েছে বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি অন্যরকম। একে তো করোনা ভাইরাসের দায়, তার ওপর লাদাখ ইস্যু, সবকিছু নিয়ে চিনের ওপর অসম্ভব ক্ষুব্ধ ভারত সরকার। এরকম অবস্থায় তাজে চিনা পর্যটকের প্রবেশ নতুন করে কোন বিতর্কের জন্ম দেবে তা এখনও অজানা।

সোমবার তাজে দর্শক সংখ্যা ছিল ১,২৩৫ জন
১৭ শতাব্দীর এই স্মৃতিশৌধ প্রথমবার ছ'মাসের জন্য বন্ধ করে রাখা হয়েছিল শুধুমাত্র কোভিড সংক্রমণের জন্য। ভারতের সবচেয়ে বেশি দর্শক এই তাজে ভিড় করেন এবং ছবি তোলেন, সেই তাজমহল কিনা এতদিন পর্যটন ছাড়া ছিল। সোমবার কিছু কড়া নিয়ম মেনে ফের তাজমহল তার দর্শকদের ফিরে পেয়েছে, তবে করোনা ভাইরাসের আগে তাজে দৈনিক যে ২০ থেকে ৪০ হাজার দর্শক হত, সে তুলনায় এদিন কিছুই ছিল না। ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, যারা এই শৌধের রক্ষণা বেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিদিন ৫ হাজার করে দর্শককে প্রবেশ করানো হবে এবং তা দু'ভাগে। কিছুজন ঢুকবেন সূর্য ওঠা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে এবং বাকিরা ঢোকার সুযোগ পাবেন দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। এএসআই জানিয়েছে যে সোমবার তাজমহলে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ১,২৩৫ জন, এর মধ্যে ২০ জন বিদেশি পর্যটক ছিলেন।

তাজমহলের আশপাশ একেবারেই ফাঁকা
ভোরবেলার আভাতে, তাজের পূর্ব গেটে গাড়ি পার্কিং থেকে ৫০০ মিটার হেঁটে আসার পর এটা বোঝা যায় যে এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। রাস্তা একেবারেই শুনশান এবং হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাটারি চালিত রিক্সা দেখা যাচ্ছে। রাস্তার ধারের দোকানগুলি খোলা থাকলেও তা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। দোকানে বসা মানুষগুলি মুখে মাস্ক পরে রয়েছেন এবং তাঁদের দেখে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। প্রায় ১৮৮ দিন পর তাজকে ঘিরে এই তাজগঞ্জ ফের স্বাভাবিক হওয়ার ছন্দে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। যদিও ব্যবসায়ীরা জানেন যে আগের মতো ব্যবসা চালু হতে এখনও অনেকটা সময় লাগবে। তাজের টিকিট কাউন্টার বন্ধ রয়েছে এবং কেবলমাত্র অনলাইনেই ই-টিকিট উপলব্ধ। দর্শনার্থীদের প্রয়োজনীয় থার্মাল স্ক্রিনিং ও স্যানিটাইজেশনের পর তাজে প্রবেশের অনুমতি মিলছে। প্রত্যেক প্রবেশের পর তাজের করমীরা প্রবেশদ্বার জীবাণুমুক্ত করছেন।

অন্যরকম তাজকে দেখছেন দর্শকরা
গেট দিয়ে ঢুকে তাজমহলের অপরূপ রূপ দেখে সত্যিই মুগ্ধ পর্যটকরা। এ যেন অন্যরকমের তাজমহলকে দেখছেন তাঁরা। ভিড় কম, নেই মানুষের কোলাহল, সাদা মর্মর পাথরে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে তাজ। অনেক তরুণ-তরুণী তাজের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, নিচ্ছেন সেলফি। মুখ থেকে মাস্ক খুলে গেলেই বা রেলিংয়ে হাত পড়লেই সচেতন করছেন পুলিশ কর্মীরা।

ফটোগ্রাফারদের তাজে ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা
লাইসেন্স প্রাপ্ত ফটোগ্রাফারদের তাজে ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাজের ভেতর ৪৬৫ জন ফটোগ্রাফার কাজ করেতন, তার মধ্যে মাত্র ১১৫ জনকেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাজের ভেতরে প্রবেশ করার। তবে তাও মাত্র চার ঘণ্টার জন্য।

ক্ষতি ৩৫ কোটির
এএসআই জানিয়েছে যে ছ'মাস তাজ বন্ধ থাকার কারণে ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এএসআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে এখন তাজে দৈনিক পাঁচ হাজার দর্শনার্থী ঢুকবে। প্রথম দিন খোলার সঙ্গে সঙ্গে ১০-২৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তবে এএসআই বেশি দর্শনার্থী প্রবেশের কথা এই মূহুর্তে ভাবছে না।
করোনা রোধে 'ব্যাক বেঞ্চার' সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে মোদী, কী টিপস দেবেন প্রধানমন্ত্রী