মোদী সরকারের আমলে বাড়তে পারে কাজের ঘন্টা, বেতনের খসড়া বিধিতে উল্লেখ নেই ন্যূনতম মজুরির
খসড়া বেতন বিধিতে নয় ঘন্টার কাজের সময়ের জন্য সুপারিশ করেছে ভারত সরকার। কিন্তু ন্যুনতম বেতন নির্ধারণের সিদ্ধান্ত থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে সরকার।
খসড়া বেতন বিধিতে নয় ঘন্টার কাজের সময়ের জন্য সুপারিশ করেছে ভারত সরকার। কিন্তু ন্যুনতম বেতন নির্ধারণের সিদ্ধান্ত থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, খসড়ায় ভবিষ্যতে মজুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিনটি ভৌগলিক শ্রেণিবিন্যাসের প্রস্তাব বাদ দিলে, বেশিরভাগ পুরনো নিয়মের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।
খসড়া বিধিতে একটা সাধারণ কাজের দিনে কাজের ঘন্টা হিসেবে, নয় ঘন্টার উল্লেখ রাখা হয়েছে। এবার এই খসড়া বিধিকে সাধারণের মন্তব্যের জন্য দেওয়া হয়েছে।
যদিও খসড়া বিধিতে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে প্রতিদিনের আটঘন্টা কাজের বিধি নিয়ে। দশকের পর দশক ধরে মাসে ছাব্বিষ দিনে আট ঘন্টা করে কাজের কথা উল্লেখ রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে নির্দিষ্ট মাস মাইনের কথা।
বিধিতে নেই শ্রমিক কল্যাণের কথা, সমালোচনায় সিটু
বাম শ্রমিক সংগঠন সিটুর সহ সভাপতি একে পদ্মনাভন বলেছেন, এখনই অনেক কম্পানি তাদের কর্মীদের দিয়ে সাধারণ ভাবেই নয় ঘন্টা কাজ করায়। বেতন বিধিতে এবার তাকেই কি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এই বেতন বিধির বিরোধিতা তারা করেছেন বলে জানিয়েছেন সিটু নেতা। আর আইনের বিরোধিতা তারা করবেন, কেননা সেখানে কোথাও শ্রমিক কল্যাণের কথা বলা হয়নি।
ন্যূনতম মজুরির উল্লেখ নেই
মজুরি সম্পর্কিত শ্রম বিধির মতো, মজুরি সংক্রান্ত খসড়া বিধিতেও ন্যূনতম মজুরির কোনও উল্লেখ নেই। সেখানে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ কমিটি ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় সরকারকে এব্যাপারে পরামর্শ দেবে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ একটি কমিটি জানুয়ারি মাসে তাদের রিপোর্টে বলেছিল, ২০১৮-র জুলাইয়ের হিসেবে, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ৩৭৫ টাকা। মাসে ২৬ টি কাজের দিনে মোট দাঁড়ায় ৯৭৫০ টাকা। সাত সদস্যের প্যানেলের তরফ থেকে এরসঙ্গে আবাসন ভাতা বাবদ ১৪৩০ টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
বিরোধিতায় বিএমএস
আরএসএস-এর ভারতীয় মজদুর সংঘের সভাপতি সিকে সাজি নারায়ণন বলেছেন, স্বাধীনতার ৭০ বছর পর দেশে এখনও ফ্লোর ওয়েজের কথা বলা হয়। যা কিনা ন্যূনতম মজুরির নিচে। তিনি বলেছেন, মজুরির তিনটি ভাগ থাকা উচিত। এই তিনটি হল, ন্যূনতম মজুরি, ন্যায্য মজুরি এবং জীবন মজুরি। ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে আমাদের বলা উচিত এই জীবন মজুরির কথা। কেননা এটাই জীবন মানকে উন্নত করতে পারে। তাদের তরফ থেকেও খসড়া বেতন বিধির বিরোধিতা করার কথা জানানো হয়েছে। সিকে সাজি নারায়ণন বলেছেন, তিনি আট কিংবা নয় ঘন্টার জায়গায় দিনে ছয় ঘন্টার কাজের পক্ষে।
খসড়া বিধিতে বলা হয়েছে, ফ্লোর ওয়েজ প্রতি পাঁচ বছর কিংবা তারও কম সময়ে পরিমার্জিত হবে। তবে জানা গিয়েছে ডিসেম্বরে এই খসড়া বিধি চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে।
খসড়া বেতন বিধিতে শ্রেণিবিন্যাস
খসড়া বেতন বিধিতে বলা হয়েছে, দেশে ন্যূনতম মজুরির তিনটি ভৌগলিক শ্রেণিবিন্যাস করা হবে। মেট্রোপলিটান এলাকা, মেট্রোপলিটান বিহীন এলাকা এবং গ্রামীন এলাকা। এর মধ্যে মেট্রোপলিটান এলাকার মান নির্ধারণ করা হবে, যদি সেখানে ৪০ লক্ষ লোকের বসবাস থাকে। অন্যদিকে মেট্রোপলিটান বিহীন এলাকার নির্ধারণ হবে যদি সেখানকার লোকসংখ্যা ১০ থেকে ৪০ লক্ষের মধ্যে হয়।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ন্যূনতম মজুরির ১০ শতাংশ হবে বাড়িভাড়া। বর্তমান আইন অনুযায়ী, খসড়া বিধিতে বলা হয়েছে, জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং অন্য খরচ হিসেবে ন্যূনতম বেতনের ২০ শতাংশ হবে। এছাড়াও খডসড়া বিধিতে বলা হয়েছে, মজুরি নির্ধারণ করতে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিবারের প্রতিদিন, ২৭০০ ক্যালরি খাবারের হিসেবও করা হয়েছে। সঙ্গে প্রতিবছরে ৬৬ মিটার কাপড়ের হিসেবও রয়েছে। তবে এসবই ছিল ১৯৫৭-র প্রথম ন্যূনতম মজুরি আইনে।
পরিবারের হিসেবে এখানে এসেছে যিনি কাজ করেন তিনি, স্ত্রী বা স্বামী এবং দুটি শিশু। তবে এই হিসেব এইবছরের শুরুতেই শ্রমমন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ কমিটি যে প্রস্তাব দিয়েছিল তা থেকে বিচ্যুতি বলেই জানা গিয়েছে।