ঘুষ-অস্তিত্বহীনকে টাকা! MGNREGA-তে কোটি কোটি টাকা অপচয়ের তালিকায় মমতার বাংলাও
কেন্দ্রীয় প্রকল্প এমজিএনআইইজিএ(mgnrega)-তে কোটি কোটি টাকা অপচয়ের অভিযোগ। তালিকায় সংখ্যাধিক্য অবিজেপি রাজ্যগুলি। সেই তালিকায় স্থান রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata banerjee) বাংলারও (bengal)। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রে
কেন্দ্রীয় প্রকল্প এমজিএনআইইজিএ(mgnrega)-তে কোটি কোটি টাকা অপচয়ের অভিযোগ। তালিকায় সংখ্যাধিক্য অবিজেপি রাজ্যগুলি। সেই তালিকায় স্থান রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata banerjee) বাংলারও (bengal)। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রকের ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেমের মাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।
সোশ্যাল অডিটে তথ্য প্রকাশ্যে
এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পে গত চার বছরের সোশ্যাল অডিটে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। এমজিএনআরইজিএ-তে প্রায় ৯৩৫ কোটি টাকা অপব্যবহার হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১২.৫ কোটি টাকা অর্থাৎ ১.৩৪% এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা গিয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে এই তথ্য না এলেও, সরকারি সূত্র থেকে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১-এর তথ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর হাতে এসেছে।
গত চার বছরের সোশ্যল অডিট করা হয়েছে বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রায় ২.৬৫ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে। ২০১৭-১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ৫৫, ৬৫৯.৯৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পে। এরপর থেকে তার পরিমাণ ক্রমশই বেড়েছে। ২০২০-২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১,১০, ৩৫৫.২৭ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ সালে ৬৩, ৬৪৯.৪৮ কোটি টাকা থেকে ২০২০-২১ সালে এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে ১,১১,৪০৫.৩ কোটি টাকা।
টাকার অপব্যবহার
অডিটে যেটা সব থেকে বেশি পাওয়া গিয়েছে, তা হল আর্থিক অপব্যবহার। যার মধ্যে ঘুষ ছাড়াও অস্তিত্বহীনকে টাকা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও ভেন্ডর থেকে নির্দিষ্ট মূল্যের থেকে বেশি মূল্যে জিনিস কেনার প্রমাণও মিলেছে অডিটে। এই ধরনের প্রকল্পে সোশ্যাল অডিটকে একটি বড় হাতিহার হিসেবেই দেখা হয়। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন সচিব নগেন্দ্রনাথ সিনহা জানিয়েছেন, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন টাকা কম টাকা উদ্ধার হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, রাজ্যগুলির মনোযোগের অভাবের জন্যই এই পরিস্থিতি। তবে রাজ্যগুলির কাছে এই টাকা অপব্যবহারের জন্য কোনও জবাবদিহি চাওয়া হয়নি এখনও।
সব থেকে বেশি অপব্যবহার দক্ষিণের ৩ রাজ্যে
- সব থেকে বেশি টাকার অপব্যবহার হয়েছে দক্ষিণের ৩ রাজ্যে। তার মধ্যে তামিলনাড়ু সবার আগে রয়েছে। সেখানে ১২,৫২৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৪৫ কোটি টাকার অপব্যবহার হয়েছে। ৩৭, ৫২৭ সোশ্যাল অডিট রিপোর্ট আপলোড করা হয়েছে। তবে এই টাকার মধ্যে থেকে ২.০৭ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। শতাংশের নিরিখে ০.৮৫%-এর মতো। এক কর্মীদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। আর দুজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি।
- অন্ধপ্রদেশে ১২,৯৮২ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১,৭৯৫ সোশ্যাল অডিট রিপোর্ট আপলোড করা হয়েছে। অপব্যবহৃত টাকার পরিমাণ ২৩৯.৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪,৪৮ কোটি টাকা। ১০, ৪৫৪ জন কর্মীকে সতর্ক করা হয়েছে। ৫৫১ জন কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ১৮০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ৩ টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
- কর্নাটকে ৬,০২৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে অপব্যবহৃত টাকার পরিমণ ১৭৩.৬ কোটি। ১.৪৮ কোটি টাকা উদ্ধার করা গিয়েছে। ২২,৯৪৮ অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে কোনও এফআইর কিংবা কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
- বিহারে ১২.৩৪ কোটি টাকার অপব্যবহার হয়েছে। তার মধ্যে ১৫৯৩ টাকা উদ্ধার করা গিয়েছে।
- গুজরাতে ৬৭৪৯ কোটি টাকার অপব্যবহার হয়েছে, কিছুই উদ্ধার করা যায়নি।
- ঝাড়খণ্ডে ৫১.২৯ কোটি টাকার অপব্যবহার হয়েছে, তার মধ্যে থেকে ১.২৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা গিয়েছে। তবে ঝাড়খণ্ডেই দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি ১৪ টি এফআইআর দাখিল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশে করা এফআইআর-এর সংখ্যা ৩৮।
বাংলায় অপব্যবহার ২.৪৫ কোটি টাকা
বাংলায় ২.৪৫ কোটি টাকার অপব্যবহার হয়েছে, এর মধ্যে ১৪৮০২ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রাজস্থান, কেরল, অরুণচল প্রদেশ, গোয়া, লাদাখ, আন্দামান নিকোবর, লাক্ষাদ্বীপ, পুদুচেরি, দাদরা ও নগর হাভেলি, দমন দিউ থেকে টাকা অপব্যবহারের কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এমএনআরইজিএ আইনের ১৭ নম্বর ধারায় গ্রাম পঞ্চায়েতের সব কাজে সোশ্যাল অডিটের কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে পরিমাণ টাকার অপব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, তার থেকে তিন থেকে চারগুণ টাকার অপব্যবহার হয়েছে। কেননা কোনও কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতে কেবল একটিই অডিট করা হয়েছে।
ভারী বৃষ্টিতে ফের ভাসতে পারে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির আবহাওয়া একনজরে